E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সংখ্যালঘু ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

সাতক্ষীরা শহরতলীর কদমতলা বাজারে নামাজ চলাকালিন সময়ে ব্যবসায়ীক লেনদেন বন্ধ ঘোষণা

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৯:০৭:৫৮
সাতক্ষীরা শহরতলীর কদমতলা বাজারে নামাজ চলাকালিন সময়ে ব্যবসায়ীক লেনদেন বন্ধ ঘোষণা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : নামাজ চলাকালিন সময়ে কেনা ও বেচা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সাতক্ষীরা শহরতলীর কদমতলা বাজারে। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে বাজার কমিটি এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

সাতক্ষীরা শহরতলীর কদমতলা বাজারের ব্যবসায়ি মোহাম্মদ আলী, মনিরুল ইসলাম মনি, আব্দুল আলিমসহ কয়েকজন জানান, এ বাজারে প্রায় ৩৩৫ টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২৫/৩০ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে জুয়েলারী, সেলুন ও মুদি দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর কদমতলা বাজার পরিচালনা কমিটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জেলা যুবলীগের তৎকালিন সভাপতি আব্দুল মান্নান সভাপতি ও মেহেদী হাসান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নিয়ম অনুযায়ী ২০১১ সালে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। একপর্যায়ে ২০১৪ সালে মেহেদী হাসান মারা যাওয়ার পর ইয়াহিয়ার রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে আছর, মাগরিব ও এসার নামাজের (আগে ও পরে মিলিয়ে) সময় আধঘণ্টা ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ রাখার প্রস্তাব তোলেন দন্ত চিকিৎসক হাসান ছিদ্দিকি লাভলু।

তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়ারসহ অনেকেই প্রস্তাবে রাজি হলে প্রস্তাবনা আকারে লিখে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটি খাতায় সাক্ষর করানো হয়। তাতে হিন্দু মুসলিম সকলে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় সাক্ষর করেন। গত ২৬ জানুয়ারি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে আছর, মাগরিব ও এসার নামাজের সময় সকল ব্যবসায়ির জন্য কেনা- বেচা বা ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সাথে নামাজের আগে দোকানে দোকানে নামাজের জন্য বিরতি সংক্রান্ত নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সরেজমিনে আজ শনিবার দুপুর একটার পর কদমতলা বাজারে গেলে দেখা গেছে মাগরিবের আজান দেওয়ার সাথে সাথে অধিকাংশ দোকানে নামাজের জন্য বিরতি সংক্রান্ত ল্যমিনেটিং করা নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ঝুলন্ত নোটিশটি শোভা পাচ্ছিল তাপস বিশ্বাস ও সবুজের যৌথ পরিচালনাধীন সেলুনেও। এ ছাড়া আরো কয়েকটি হিন্দু ব্যবসায়ির দোকানেও ওই নোটিশ ঝুলতে দেখা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কদমতলা বাজারের কয়েকজন হিন্দু ও মুসলিম ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের জানান, ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবম সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন। বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক জামাত নেতার বিচারের রায়কে ঘিরে জামায়াত শিবির ও বিএনপি যৌথভাবে এ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে দেশব্যাপি জ্বালাও পোড়াও, গাছ কাটা, রাস্তা কাটাসহ যানবাহনে বোমা নিক্ষেপ করে। জামায়াত শিবির ও বিএনপি’র কদমতলা বাজার মোড়ে এত বেশি জ্বালাও পোড়াও এবং অবরোধ সৃষ্টি করে যে বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বহু দেশ কদমতলাকে এক ডাকে চিনতে শুরু করে। অনেক নিয়োগ পরীক্ষায় সাতক্ষীরার নাম শুনলেই চাকুরি প্রার্থী যুবক যুবতীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পদক্ষেপ এর কারণে জামায়াত- শিবিরের তৎপরতা কমতে শুরু করে। এরই মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থ বারের মতো টানা চারবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর কয়েকদিন না যেতে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়ারসহ কয়েকজন গায়ের জোরে ২০০৯ সালের কমিটি বহাল রেখে ২৬ জানুয়ারি নামাজ চলাকালিন সময়ে সকলের জন্য ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। এটা কদমতলা থেকে বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে বলে অনেকেরই মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কদমতলা বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়ার রহমান ২০০৯ সালের পর কদমতলা বাজার কমিটির নির্বাচন না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে শনিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, তিন ওয়াক্ত নামাজের সময় প্রত্যেকবার ১৫ থেকে ২০ মিনিট ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ রাখা ও নামাজ চলাকালিন সময়ে নামাজের জন্য বিরতি সংক্রান্ত নোটিশ প্রতি দোকানে ঝুলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২৬ জানুয়ারি। মিটিং এর আগেই প্রায় সকল ব্যবসায়ি সিদ্ধান্ত পড়ে সাক্ষর করেন। সে অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি থেকে সভাপতি আব্দুল মান্নানসহ অনেকে আলোচনা সাপেক্ষে সকলের জন্য ওই সিদ্ধান্ত মেনে চলার নির্দেশনা দেন। এতে আপত্তির কিছু আছে বলে তিনি মনে করেন না। তবে কেউ ওই সিদ্ধান্ত না মানলে কি করা হবে তা তিনি জানাতে পারেননি।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test