E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোপালগঞ্জে আরো এক শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজ

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০৬ ১৭:১২:৩৫
গোপালগঞ্জে আরো এক শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজ

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় ৬মাসের ব্যবধানে সমর কান্তি রায় (৪৫) ও তৃপ্তি রানী মন্ডল (৪০) নামে আরেক শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকদিন ধরে এই শিক্ষক দম্পতির কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের নিখোঁজ থাকায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

নিখোঁজ শিক্ষক সমর কান্তি রায় কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের রুথিয়ারপাড় গ্রামের মৃত অশ্বিনী কুমার রায়ের ছেলে ও মুকসুদপুর উপজেলার কহলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক।

অপরদিকে সমর কান্তি রায়ের স্ত্রী তৃপ্তি রানী মন্ডল কোটালীপাড়া উপজেলার ১৮২ নং রুথিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক।

এই শিক্ষক দম্পতি কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারে নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতো বলে স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে।

বিভিন্ন মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সুদের টাকার চাপ সামলাতে না পেরে এই শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজ হতে পারে বলে স্থানীয় সুদি মহাজনরা মনে করছেন।

এর আগে গত বছরের জুন মাসে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের ১২৭নং গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী একই বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষক শিখা রানী রায় নিখোঁজ হয়। দীর্ঘ ৬মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এই শিক্ষক দম্পতির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই দম্পতিও সুুদি মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ছিল বলে তাদের সহকর্মীদের কাজ থেকে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে শিক্ষক সমর কান্দি রায়ের বাড়িতে গিয়ে তার বসত ঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। অপরদিকে তার বাড়ির পাকা ভবনটিতে ভাড়াটিয়া ৩টি পরিবারকে পাওয়া যায়।

ভাড়াটিয়া অলক মল্লিক বলেন, আমি কালিগঞ্জ বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করি। এখানে ব্যবসা করার কারণে বাজারের পাশে শিক্ষক সমর কান্তি রায়ের বাড়িতে আমি পরিবার নিয়ে ভাড়ায় থাকি। সে আমার কাজ থেকে ৬লক্ষ টাকা নিয়েছে। বিনিময়ে আমার পরিবার নিয়ে এখানে থাকতে দিয়েছে। শুনেছি সমর কান্তি রায় পিঞ্জুরী গ্রামের বাদল সমাদ্দারসহ অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদে টাকা এনেছিল। এই সুদি মহাজনদের চাপে শিক্ষক সমর কান্তি রায় ও তার পরিবার নিখোঁজ থাকতে পারে।
অপর ভাড়াটিয়া স্বপন কুমার বাড়ৈর স্ত্রী প্রভা রায় বলেন, আমার স্বামী একজন স্কুল শিক্ষক। আমার স্বামীর স্কুলটি কাছাকাছি হওয়ার কারণে আমরা পরিবার নিয়ে এখানে ভাড়া থাকি। বাড়ি ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে সমর কান্তি রায় আমার স্বামীর কাজ থেকে লিখিত দিয়ে দেড় লক্ষ টাকা নিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে আমরা তার সন্ধান পাচ্ছি না। এখন বাদল সমাদ্দার নামে এক ব্যক্তি এসে এই বাড়িটি তার বলে দাবি করছে। সে আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।

কালিগঞ্জ বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী বিধান চন্দ্র বালা বলেন, শিক্ষক সমর কান্তি রায় আমার কাছ থেকে সুদে ২লক্ষ টাকা নিয়ে ছিলেন। হঠাৎ কয়েকদিন ধরে সে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানতে পারলাম। শুনেছি সে নাকি অনেক লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।

উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের পিঞ্জুরী গ্রামের সুদি মহাজন বাদল সমাদ্দার বলেন, সমর কান্তি রায়ের সাথে আমার কোন সুদের ব্যবসা ছিল না। তবে তার সাথে আমার চেনাজানা ছিল। সে কয়েকদিন আগে তার ১৩শতাংশ জায়গাসহ ১ টিনের ঘর ও ১টি পাকা ভবন ৯লক্ষ টাকায় আমার কাছে বিক্রি করেছে। সমর কান্তি রায় এখন কোথায় আছে আমার জানা নেই।

১৮২ নং রুথিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ রায় বলেন, তৃপ্তি রানী রায় আমার বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ছিলেন। গত জানুয়ারি মাসের ২৪ এবং ২৫তারিখ দুই দিনের ছুটি নিয়ে ছিল। এরপর থেকে সে আর স্কুলে আসেনি।

মুকসুদপুর উপজেলার কহলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক শাহ মোঃ ইলিয়াছ বলেন, সমর কান্তি রায় আমাদের বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। ছুটি না নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। সমর কান্তি রায়ের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়ার পর আমরা তার বাড়িতে লোক পাঠাই। এরপর আমরা জানতে পারি সে পরিবারসহ নিখোঁজ রয়েছে।

কোটালীপাড়া উপজেলার ৭৯নং পূর্ণবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, বর্তমানে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে অনেক শিক্ষককে মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়। এরপর অনেক শিক্ষক এই টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নিখোঁজ থাকেন বা আত্মগোপনে চলে যায়। সরকার যদি বেতন বৃদ্ধিসহ সহজ শর্তে শিক্ষকদের সুদ মুক্ত ঋণ দেয় তাহলে কোন শিক্ষককে সুদি মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিপদে পড়তে হয়না। তাই আমি শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ সহজ শর্তে সুদ মুক্ত ঋণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন বলেন, ১৮২ নং রুথিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তৃপ্তি রানী মন্ডল গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত রয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমি লিখিত ভাবে আমার উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
কোটালীপাড়া থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test