E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবৈধভাবে ইতালী যাওয়ার পথে রাজৈরের দুই যুবকের মৃত্যু 

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৭:৩৩:১৬
অবৈধভাবে ইতালী যাওয়ার পথে রাজৈরের দুই যুবকের মৃত্যু 

মাদারীপুর প্রতিনিধি : অবৈধভাবে সমুদ্র দিয়ে ইতালী যাবার পথে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের দুই যুবক মারা গেছেন। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দুই যুবকের মারা যাবার খবর পেয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতন। 

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২০) ও একই ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২৫) দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালীর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তারা লিবিয়াতে অবস্থান করেন। এরপর দালালদের মাধ্যমে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তারা ইতালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ৩২ জন ধারণ ক্ষমতার নৌকায় ৫২ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিয়ে ইতালী যাওয়ার জন্য রওনা দেন। পথে তিউনিসিয়ার ভুমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে যায়। এতে মামুন ও সজলসহ বেশ কয়েকজন মারা যান। পরে খবর পেয়ে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে সে দেশের কোস্টগার্ড।

এদিকে এই খবর দেশে আসলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। আশে-পাশের লোকজনও একটু শান্তনা দিতে নিহতদের বাড়িতে ভীর করছে।

নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজিব শেখ বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী। দালাল মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লিবিয়া থেকে ইতালীর উদ্দেশ্যে পাঠালে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারীভাবে তাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই। পাশাপাশি দালাল মোশারফ কাজীর শাস্তির দাবী করছি। যাতে করে আর কোন পরিবারে এমন ঘটনা না ঘটে।

অপর নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী বলেন, নৌকায় ডুবে প্রাণে বেচে যাওয়া আমার ছেলের সাথে থাকা একজন আজ (শুক্রবার) মোবাইলে ফোন করে মামুন ও আমার ছেলে সজলের মারা যাবার ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। জমি, গরু বিক্রি করে, লোন করে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে ইতালী যাবার জন্য পাঠাই। কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন সত্যি হলো না। সব স্বপ্ন সাগরে শেষ হয়ে গেলো। আমার একেবারে পথে বসে গেছি। এখন আমরা কি করবো। আমার ছেলে গেলে, সাথে আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো। এই ঘটনায় আমরা দালাল মোশারফ কাজীর কঠিন বিচার চাই।

নাম না প্রকাশে ঐ গ্রামের একজন যুবক বলেন, দালাল মোশারফ কাজী দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় বসবাস করছেন। লিবিয়া থেকে মোবাইলের মাধ্যমে মোশারফ কাজী যোগাযোগ করেন আর দেশে বসে তার ছেলে মো. যুবরাজ কাজী ইতালী পাঠানোর জন্য যুবকদের সাথে নানা প্রলোভন দেখিয়ে উদ্বদ্ধু করেন। এই অবৈধভাবে ইতালী যাওয়া বন্ধ না হলে, আরো অনেক যুবকের প্রাণ অকালেই চলে যাবে। মাদারীপুরে প্রতিনিয়তনেই এমন ঘটনা ঘটলেও, যেন কিছুতেই থামছেনা অবৈধ পথে ইতালীযাত্রা।

অভিযুক্ত দালাল মোশারফ কাজী লিবিয়া থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও তার ছেলে যুবরাজ কাজীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, এই ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এএসএ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test