E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিবচরের ভাষা সৈনিক গোলাম মস্তফা রতন, সন্তানরা চান স্বীকৃতি 

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৮:৩৪:৩৬
শিবচরের ভাষা সৈনিক গোলাম মস্তফা রতন, সন্তানরা চান স্বীকৃতি 

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চররামরায়ের কান্দি গ্রামের ভাষা সৈনিক গোলাম মস্তফা রতন বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। সেই সংগ্রামের অবদানের জন্য সরকারীভাবে স্বীকৃতি চান তার সন্তানরা।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারণে কারাভোগ করেন গোলাম মস্তফা রতন। ১৯৪৮ সাল থেকেই মায়ের ভাষা বাংলাকে গ্রাস করার অপচেষ্টা প্রতিহত করার প্রতিবাদে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন মাদারীপুরের এই ভাষা সৈনিক গোলাম মস্তফা রতন। ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় অংশ নেওয়ার জন্য কয়েকটি জেলা ছাত্রদের নিয়ে একটি তালিকা করা হয়। ১৯৫২ সালে তৎকালীন বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র গোলাম মোস্তফা রতন এর আহবায়ক নির্বাচিত হন। এদিকে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছিলেন বাংলার আপাময় জনতা। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে ভুমিকা রেখেছিলেন বাংলার ছাত্র সমাজ। তারই সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ফরিদপুর, মাদারীপুুর, শরীয়তপুর ও বরিশালে।

এরই অংশ হিসেবে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী রতনের নেতৃত্বে ২ শতাধিক ছাত্র নিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। এসময় মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকতেই কার্জন হলের সামনে পুুলিশের মুহুর্মুহু গুলি শুরু হয়। এ সময় মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্ররা মাটিতে শুয়ে জীবন রক্ষা করেন। কিন্ত সালাম বরকত, রফিকসহ অনেকেই শহীদ হন। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে বেচে যান মাদারীপুরের রতন।

কখনো ভাষা সৈনিক রতন ও তার পরিবার ভাবেননি সরকারিভাবে কোন স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে। তবে বাংলাদেশের যখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলেন এবং দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ভাষা সৈনিক, সংগ্রামী ভাষা সৈনিকদের খুঁজে খুঁজে সরকারিভাবে বিভিন্ন মর্যাদা দেয়া শুরু করেন। তখন ভাষার জন্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রতন স্বীকৃতির জন্য সরকারিভাবে আবেদন করেন। কিন্তু সেই স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই মারা যান ভাষা সৈনিক গোলাম মস্তফা রতন। জীবিত অবস্থায় রতন স্বীকৃতি না পেলেও তার পরিবার চান তাকে ভাষা সৈনিকের সরকারি স্বীকৃতি দেয়া হোক।

ভাষা সৈনিকের ছেলে মো. মিজান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শিবচর অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক ছিলেন ভাষা সংগ্রামী আমার বাবা গোলাম মস্তফা রতন। ২০১২ সালে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এইম ওয়ে) তাঁকে সম্মাননা পদকে ভূষিত করেন। আমার বাবা দীর্ঘ ১৪ বছর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই মারা যান।

তিনি আরো বলেন, ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারণে কারাভোগ করেন আমার বাবা। সে সময় আন্দোলনের বিভিন্ন কাগজপত্র দিতে গিয়ে আটক হয় চট্রগ্রামে। সেখানে ১৮ দিন আটক ছিলেন বাবা। ১৯৫২ সালের সেই ভাষা আন্দোলনের ঐ সময়ে ২ শতাধিক ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা গিয়েছিলেন। বাবার পায়েও গুলি লাগে। তিনি আহত অবস্থায় শিবচরের গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। তবে আমার বাবা সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই মারা গেছেন। এখন আমরা চাই আমার বাবাকে মৃত্যুর পরেও সরকারি ভাবে ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি দেয়া হোক।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, আগামীতে আবেদন করলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাবো। আমি চাইবো তিনি যেন আগামীতে একটি সরকারি স্বীকৃতি পান।

(এএসএ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test