E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেখ শফিউল্লাহ ওরফে গোল্ড মনি ডাকাতির চেষ্টা ও অস্ত্র মামলায় জেল হাজতে

২০২৪ মার্চ ০৫ ১৪:২৯:১৫
শেখ শফিউল্লাহ ওরফে গোল্ড মনি ডাকাতির চেষ্টা ও অস্ত্র মামলায় জেল হাজতে

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের শেখ মোশাররফ হোসেনের ছেলে সোনা পাচারকারি হিসেবে বহুল আলোচিত শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুল ওরফে গোল্ড মনি অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে দায়েরকৃত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট থানার মামলায় শর্তসাপেক্ষ জামিন পেয়ে অবৈধভাবে দেশে ফিরেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশে ফেরার কয়েকদিন পর তিনি কলারোয়া থানার ডাকাতির চেষ্টা ও অস্ত্র মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করেন। মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এ বদলী করে আগামি ১২ মার্চ অভিযোগ গঠণের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

এদিকে গোল্ড মনির পক্ষে তার আইনজীবীর জামিন ২০ ফেব্রুয়ারির আবেদনপত্রে উল্লেখ করা কাগজপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা- চুকনগর সড়কের তালা উপজেলার শাকদাহ নামক স্থান থেকে তার প্রাইভেট কার চালককে অপহরণ করে তার কাছে থাকা ব্যবসার জন্য ঢাকা থেকে আনা ২০ পিস সোনার বার ছিনতাইয়ের পর চালককে বাইপাস সড়কের একটি স্থানে ফেলে রাখে পুলিশ। এ মর্মে সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের কাছে সোনা ফেরৎ চেয়ে আবেদন করেন শেখ শফিউল্লাহ মনি। এতে কাজী মনিরুজ্জামান ক্ষুব্ধ হলে মনি ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইজিপিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। এরপরপরই ওই বছরের ৬ মার্চে কলারোয়ার কেরালকাতা ই্উনিয়নের সাতক্ষীরা- নাভারণ সড়কের কোটার মোড়ে পুলিশের সাজানো ডাকাতির চেষ্টা ও অস্ত্র উদ্ধারের মামলায়(জিআর-৭৫/২৩ কলারোয়া) তাকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালায়। এ সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জাতীয় দৈনিক দৈনিক বাংলা, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পরিবারের সদস্যদের আত্মগোপানে রেখে শেখ শফিউল্লাহ অবৈধপথে ভোমরা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট থানাধীন ইটিন্ডা কলবাড়ি এলাকায় গত বছরের ১৮ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে বসিরহাট মহকুমার স্বরুপনগর থানার ভাদুড়িয়া গ্রামের আব্দুল মাজেদ সরদারের ছেলে ধুড়পাচারকারি আব্দুল করিমসহ উপপরিদর্শক সন্দীপ সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুল ওরফে গোল্ড মনির স্বজনরা জানান, সাতক্ষীরা পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুল অবৈধপথে ভারতে ঢোকার পর তার বিরুদ্ধে বসিরহাট থানায় জিআর-২৪০/২৩ নং মামলা হয়। মামলার বাদি হন বসিরহাট থানার উপপরিদর্শক সন্দীপ সরকার। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বসিরহাট থানার উপপরিদর্শক সত্যব্রত দাস ওই বছরের ৩০ এপ্রিল তিনি শেখ শফিউল্লাহ এর বিরুদ্ধে বিদেশে অনুপ্রবেশ আইনের ১৪ এ(বি), ১৪সি ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২৫ মে ওই অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়। মামলাটি বসিরহাটের অতিরিক্ত সেশন জজ ফাস্ট ট্রাক কোর্ট-২ এ বিচারের জন্য বদলী করা হয়। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আসামী পক্ষের আইনজীবী শেখ শফিউল্লাহ’র ভারতীয় জন্ম সনদ, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা এর মূল কপি জমা দিয়ে জামিন আবেদন করেন। ৬ অক্টোবর সেশান জজ শ্রীমতী এম রায় এক আদেশে শেখ শফিউল্লাহর ভারতীয় জন্ম সনদ ও ভোটার আইডি কার্ডের সত্যতা যাঁচাই করে আদালতের পুলিশ পরিদর্শককে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

১১ অক্টোবর বসিরহাটের ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসারের(বিডিও) প্রত্যয়নযুক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের কপি আসামীপক্ষের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের পিপি’র সুপারিশ অনুযায়ী কেস রেকর্ডে জমা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই আদেশে শফিউল্লাহকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পূণরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বসবাসকারি এলাকার থানায় সাপ্তাহিক হাজিরা দেওয়া ও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক এলাকার বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ ছাড়াও আদালতে যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেখানে আসামী থাকছেন কিনা তা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাকে আদালতকে অবহিত করার শর্ত সাপেক্ষে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের(এসিজেএম) আদালতে ১০ হাজার টাকার বন্ডে দুইজন জামিনদারের স্বাক্ষরে জামিননামা জমা দিতে বলা হয়।

ওই আদেশে আদালতে জমা দেওয়া ভারতীয় নাগরিকত্বের মূল ভোটার তালিকা ও জন্ম সনদ ফিরিয়ে দিয়ে ফটোকপি জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। জামিননামায় জামিনদার নীলোৎপল দাস ও বাপ্পি দে এর স্বাক্ষরে ১২ অক্টোবর শেখ শফিউল্লাহ কারাগার থেকে অন্তবর্তীকালিন জামিনে মুক্তি পান। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি অভিযোগ গঠণের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়। ৩১ জানুয়ারি শেখ শফিউল্লাহ আদালতে হাজির হন। রাষ্ট্রপক্ষের পিপি কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় অভিযোগ গঠণ করা যায়নি মর্মে উল্লেখ করে পরবর্তী দিন চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর ধার্য করেন অতিরিক্ত সেশন জজ।
এদিকে বসিরহাট অতিরিক্ত সেশন জজ ফাস্ট ট্রাক-২ আদালতে দায়েরকৃত ভোটারস সার্ভিস পোর্টাল থেকে জানা গেছে ভোটার আইডি কার্ডে শেখ শফিউল্লাহকে শফিউল্লাহ শেখ, পিতার নাম- সেক আজগর, বয়স -৫৯, বাড়ির নং-এন০১১৭, ইপিআইসি নং-টিকেএস-১৯৭২১৭৩, লোকসভা -৩০ তমলুক, বিধানসভা ২০৮ মহিষাদল, পোলিং বুথ ব্রজলাল চক, ২৫০ রামচাঁদ হল লেখা আছে।

এছাড়া ২৭.০২.১৯৭৯ তারিখে দেওয়া গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক স্বাক্ষরিত ১৬/০২/১৯ তারিখে নিবন্ধন করা ২০.০৬.৭৮ নং নিবন্ধনে শেখ শফিউল্লাহ, বাবা মোশারফ হোসেন, মা দেলোয়ারা বেগমের জাতীয়তা ভারতীয় দেখিয়ে জন্ম তারিখ ০৭.১১.১৯৭৮, জন্মস্থান- গোপালপুর, গ্রাম- ব্রজলালচক, পোঃ চকদ্বীপা, থানা ভবানীপুর, জেলা -পূর্ব মেদিনীপুর উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনারের আওতাধীন ৩১.০৮.২০২৩ তারিখে ডাউনলোড করা ১১৫ নং রাজারহাট নিউ টাউনের নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিক এর তথ্য থেকে জানা গেছে, শেখ শফিউল্লাহ, জন্ম তারিখ ২৫.০১.১৯৭৮, ঠিকানা- এন ০০২৪, মন্ডলপাড়া, রাজারহাট নিউটাউন, উত্তর ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ-৭০০১৫৭ ঠিকানায় বসবাস করেন।

তথ্য পর্য়ালোচনায় দেখা গেছে শেখ শফিউল্লাহকে কোথাও শফিউল্লাহ শেখ, তার বাবার নাম কোথাও মোশরারফ হোসেন আবার কোথাও সেক আজগর , আবার জন্ম তারিখ কোথাও ০৭.১১.১৯৯৮ আবার কোথাও ২৫.০১.১৯৭৮ ও ৫৯ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। যাহা একজন আসামীর পক্ষে জমা দেওয়া কাগজপত্র যে ত্রুটিপূর্ণ তাহা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ করে।

(আরকে/এএস/মার্চ ০৫, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test