E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোপালগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পিছিয়ে পড়ার আশংকা

২০২৪ মার্চ ১৪ ১৬:৫৩:৩৬
গোপালগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পিছিয়ে পড়ার আশংকা

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : নতুন প্রতিভা অন্বেষণ। ঘরে ঘরে শিল্পের আলো পৌঁছে দেওয়া। এছাড়া সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে শিল্পকলা একাডেমি। আর এ কাজে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিই হচ্ছে শিল্পকলার প্রাণ।  গোপালগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তিল তিল করে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। গোপালগঞ্জ জেলা কলাচারাল অফিসারের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, জেলা কালচারাল অফিসার ফারহান কবীর সিফাত ১ বছর ২ মাস আগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যোগদান করেন।তারপর থেকেই তিনি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিয়ে অপতৎপরতা শুরু করেন। ওই কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং অসদাচরণ করেন। এ নিয়ে অভিভাবকরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ডিসেম্বরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার দিন সকালে এডমিট কার্ড দেননি কলাচারাল অফিসার। এ কারণে ৬০ শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারে নি। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণে এই নিয়ম আগে কখনো ছিল না। পরীক্ষা বঞ্চিতদের পরীক্ষা পুনরায় গ্রহনে জেলা প্রশাসক কালচারাল অফিসারকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি এখনও পরীক্ষা নেননি। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাংকন, নৃত্যকলা সহ বিভিন্ন বিভাগের ১৭ জন চুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষক রয়েছেন। প্রতি অর্থ বছরে প্রশিক্ষকদের চুক্তি নবায়নের জন্য চুক্তিপত্র বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রেরণ করতে হয়। ৮ মাস কেটে গেলেও এটি ঢাকা পাঠানো হয়নি। ফলে তারা গত ৮ মাস ধরে চুক্তি ছাড়াই কাজ করছেন। বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।এতে প্রশিক্ষকদের মাঝে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।কলাচারাল অফিসারের অসদাচরণের কারণে স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

এছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে কোন আলোচনা বা পরামর্শ না করেই তিনি শিল্পকলা একাডেমির সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ।ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ অর্থ কোন কাজে কিভাবে ব্যয় হয়, তা কার্যনির্বাহী কমিটিকে অবহিত করা হয় না। তাই এখানে দুর্নীতির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ওই কর্মকর্তা শিল্পকলার বিধি ভঙ্গ করে মিলনায়তন ভাড়া দিচ্ছেন।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এহিয়া খালেদ সাদী বলেন, শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পিঠা উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গত ২ জানুয়ারী হিন্দি গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এ নিয়ে গোপালগঞ্জে সমালোচনার ঝড় উঠে। অপ-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক এ কালচারাল অফিসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করছেন। সাংস্কৃতিক সংগঠন ও অভিভাবকদের সাথে আসদাচরণ করে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এখানে দায়সারা ভাবে জাতীয় সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়। স্থানীয়ভাবে বিশেষ সাংস্কৃতিক আয়োজন নেই। তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে বিরোধ জিইয়ে রাখতেই ব্যাস্ত। ফলে এ অঙ্গনে গত ১৫ বছরের গোপালগঞ্জ জেলার অর্জন পিছিযে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ সংকট নিরসনে আমরা কালচারাল অফিসারের অপসারণ চাই।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, কালাচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে কার্যনির্বাহী কমিটি, অভিভাবক ও প্রশিক্ষকরা ইতিপূর্বে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগগুলো আমরা পেয়েছি। এগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

জেলা কালচারাল অফিসার ফারহান কবীর সিফাত বলেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬০ উর্ধ ৬ জন প্রশিক্ষক রয়েছে। তাদের তথ্য শিল্পকলা একাডেমি চেয়ে পাঠিয়েছে। এটির তদন্ত সম্পন্ন হলে নতুন চুক্তি হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণ একাডেমির শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে ক্লাস রুটিন প্রনয়ন করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিভাবক ও প্রশিক্ষকরা আমার বিরুদ্ধে অসদাচারণের মিথ্যা অভিযোগ করেছে। যাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি সেটি গ্রহণ করা হবে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। অডিটোরিয়াম ভাড়া ও আর্থিক বিষয়ে জেলা শিল্পকলার সভাপতি জেলা প্রশাসক অনুমোদন দেন। বিধি মোতাবেক শিল্পকলা পরিচালনায় সাধারণ সম্পাদক বা কার্যনির্বাহী কমিটির কোন ভূমিকা নেই। আমি অনিয়মের সাথে আপস করিনি বলে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযো্গ করা হয়েছে।

(টিবি/এসপি/মার্চ ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test