E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিডরের ৭ বছর, হয়নি টেকসই বেড়িবাধ

২০১৪ নভেম্বর ১৫ ১৬:৩২:১৬
সিডরের ৭ বছর, হয়নি টেকসই বেড়িবাধ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর। সিডরের ৭ বছর পূর্ণ হলেও উপকূলবাসি পায়নি পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। ক্ষতিগ্রস্তরা পায়নি কর্মসংস্থানের সুযোগ। সুপার সাইক্লোন সিডরে সেই ভয়াল দু:সহ স্মৃতি নিয়ে আজও তাড়া করছে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবাসিকে। হয়নি টেকসই বেড়িবাধ।

উপকূলবাসি কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকে ভিটামাটি ছেড়ে জীবন জীবীকার জন্য ছুটে গেছেন ঢাকা ও চট্রগামের বিভিন্ন গার্মেন্টেসে। তবে সরকারি ও বেসরকারি সাহায্যে সহযোগিতায় অনেকের কাটছেন কোন মতে জীবন জীবিকা। উপকূলবাসির এখন একটাই চাওয়া নিয়মিত কর্মসংস্থান। সেই দিনে অনেক পরিবার সবকিছু হারিয়ে নিশ্ব:হয়ে পড়ায় এখনও ঠাই মেলেনি তাদের। সুপার সাইক্লোন সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন। সিডর বিধ্বস্ত সাউথখালী সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

সরকারি হিসাব মতে, সিডরে শরণখোলা উপজেলার ৯’শ ৮ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে বলেশ্বর তীরবর্তী সাউথখালী ইউনিয়নেরই প্রায় ৭শ মানুষ মারা যায়। যার অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু। তবে বেসরকারি হিসাবে এই মৃতের সংখ্যা আরো বেশি। এছাড়া শত শত গভাদী পশু ও হাঁস-মুরগি মারা যায়। লন্ডভন্ড হয়ে যায়, ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ক্ষেত। সিডরের পর বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের সাহায্যে ছুটে আসে সরকারি- বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সাধারণ মানুষ।


বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী উত্তর সাউথখালী গ্রামের ছত্তার ফকির বলেন,‘ পোলা মাইয়্যাসহ ঘরবাড়ি সব হারিয়ে নি:স্ব জীবন কাটছে কোন মতে। সরকার ও এনজিও থেকে সহােগিতা পেয়ে বছরের ৬ মাস খেয়ে পড়ে থাকতে হয়। কিন্তু মোগো কেউ কাজের ব্যবস্থা করে দেয় না। মোর ভাইবাগাররা কাজ করতে ঢাকা ও চিটাগাং চলে গেছে। মোগো যদি এহন নিত্য কাজ দেয় তাহলে খেটে পড়ে জীবন বাছবে’।


কথা হয় একই গ্রামের শাহজাহান খান ও রিপন হাওলাদার বলেন, ছেলে-মেয়ে ও ভাই সিডরে হারাইছি। নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি-জায়গাজমি সব গেছে। এহন ভূমিহীন হয়ে রাস্তার পাশে থাকতে হয়। যদি কমংস্থানের সুযোগ হইতো তাহলে জমি কিনে থাহার ঘর বানাইতাম। মোগো এহন সাহায্যে লাগবে না, কাজ করার জায়গা কইর‌্যা দিবে সরকার।

এভাবে অনেক পরিবার এখন কর্মসংস্থানের দিকে তাকিয়ে আছে ওই এলাকার মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্থ হালিম শাহ বলেন, মোরা সিডরে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। কিন্তু সৌদি সরকারের দেয়া ঘরে স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকা যায় না। তারপরও নিজেদের চেস্টায় কোনমতে বসত করছি। এখানে অনেক সাইক্লোন সেল্টার দেয়া কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে শহর এলাকার কাছে বড় বড় সাইক্লোন সেল্টার তৈরি করা হয়েছে। ভেড়িবাধঁ টেকসই হয়নি। তারপরও কাজ চাই।


দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের এমদাদুল হক মিন্টু বলেন, অপর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ এ এলাকার মানুষের জন্য অন্যতম সমস্যা। যদি টেকসই বেড়িবাঁধ ও পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়, তাহলে সিডরের মত প্রাকৃতিক দুযোর্গে হতাহতের পরিমাণ অনেক কম হবে।


সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন জানান, উপকূলবাসির দীর্ঘদিনের দাবী টেসকই ভেঁড়িবাধ ও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা। কিন্তু গত ৭ বছরেও ভেঁড়িবাধ ও পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মান করা হয়নি। এমনকি স্থানীয় তাফালবাড়ী বাজারের পশ্চিম পাশের ভেঙ্গে পড়া ব্রীজটি মেরামতের কাজ হয়নি। তিনি দ্রুত সাউথখালী ইউনিয়নের অবকাঠামো উন্নয়নসহ টেকসই ভেঁড়িবাধ নির্মাণের দাবি জানান। তবে এলাকার মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থানেরও দরকার।


উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আকন বলেন, ‘এলাকার মানুষ সিডরে অনেকটা ক্ষত কাটিয়ে উঠলেও বর্তমানে হাতে গোনা ৩-৪ টি এনজিও ছাড়া বাকি এনজিও গুলো নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তবে তারা যদি ক্ষতিগ্রস্তদের নামে বরাদ্দ এনে সুষম বন্টন করতো তাহলে এলাকায় অভাব থাকতো না বলে তিনি দাবি করেন।


বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মু:শুকুর আলী জানান, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করেছে তাতে এলাকাবাসি অনেকটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে সরকারের অনেক গুলো উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে।
সিডরে নিহতদের স্মরণে ১৫ নভেম্বর সাউথখালী ইউনিয়নে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সাউথখালী ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে তাফালবাড়ি স্কূল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গনে শোক র‌্যালি ও দোয়া অনুষ্ঠান এবং দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের গাবতলা বাজারে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে উপকূলবাসীর কাছে সিডরের নাম সর্বগ্রাসী রাক্ষুসীর মরন ছোবল। ওই রাতে সিডরের নামে মহা প্রলয়ঙ্ককারী ঘূর্নিঝড় সিডর চরম আঘাত হানে বাগেরহাটসহ উপকূলীয় জনপদে। ২৪০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার বাতাসের গতিতে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই পানি আর বাতাসের সাথে প্রাণপন যুদ্ধ করে যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা ১৬ নভেম্বর ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছু দেখেনি। সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চল বাগেরহাটের সাউথখালীতে শুধুমাত্র ৭’শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হলেও বেসরকারী মতে এর সংখ্যা ছিল দ্বিগুন ।

(একে/এএস/নভেম্বর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test