E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘দুই ম্যাডামের জন্য আমাদের চাকরি করাটাই এখন ‘টাফ’ হয়ে গেছে’

২০২৪ মার্চ ২১ ১৯:১৯:০৯
‘দুই ম্যাডামের জন্য আমাদের চাকরি করাটাই এখন ‘টাফ’ হয়ে গেছে’

বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর করিম শাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি স্কুলে ভর্তির সময় ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে 'ভর্তি ফি' নেন। সরকারি স্কুলে টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও, তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নগদ টাকা নেন! 

স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবকের এমন লিখিত অভিযোগের কপি হাতে পাওয়ার পর আজ সকালে বিষয়টির খোঁজ খবর নিতে সরজমিনে স্কুলে যাই। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলে গিয়ে সেখানে ২০/২৫ জন নারী অভিভাবকে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার শাস্তি ও পদত্যাগের দাবিতে একটি মানববন্ধন করতে দেখি। সেই মানববন্ধন কাভার করতে বেশ কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিককে মানববন্ধনে দাঁড়ানো নারী অভিভাবকদের বক্তব্য মোবাইলে ধারণ করতেও দেখা গেল।

এক পর্যায়ে আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া সুলতানার কক্ষে গিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা বললেন, 'এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, ষড়যন্ত্রমূলক। আর এসব অপপ্রচারের পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে আমারই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা লাকী বেগম।'

আপনি টাকা না নিলে, আপনারই সহকারী শিক্ষক লাকী বেগম কেন আপনার বিরুদ্ধে ইন্ধন দিতে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষিকা বললেন,'শিক্ষিকা লাকী বেগমের অনেক অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি শক্ত কথা বলি, তাই তিনি আমার পেছনে লেগেছেন।'

কিরকম অনিয়ম, বলবেন কি? প্রধান শিক্ষিকা তখন বললেন, 'লাকী বেগম কোচিং বাণিজ্যসহ, বাসায় বই বিক্রীর ব্যবসা করেন। স্কুলের পাশে বাড়ি হওয়ায়, স্কুল চলাকালে দশ মিনিটের কথা বলে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা বাসায় গিয়ে বইয়ের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এসবের বিরুদ্ধে আমি স্কুলে শক্তভাবে কথা বলি বলেই, তিনি আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালিয়ে আমার ইমেজকে নষ্ট করছেন।’

পরে এসব অভিযোগ নিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লাকী বেগমের সাথে কথা বললে, তিনি আমাকে বললেন, 'প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া আত্মরক্ষার জন্য এখন এসব গল্প সাজিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে তিনি যেসব অভিযোগ করেছেন, এসব প্রমাণ করতে পারলে, আমি যেকোন শান্তি মাথায় পেতে নেবো। মূলত প্রধান শিক্ষিকা যে ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে ভর্তির জন্য ২৫০ টাকা নেন, সেটি এখন ওপেন সিক্রেট। সবাই সেটি জানেন। তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য এখন আমার বিরুদ্ধে তিনি আবোল তাবোল বলছেন।'

তবে বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষিকা কামরুন্নাহার ও খাইরুন্নাহার বিদ্যালয়ের এরকম পরিস্থিতির জন্য স্পষ্টভাবেই প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া ও সহকারী শিক্ষিকা লাকী এ দু'জনকেই দায়ী করলেন।

তাঁরা দুজনেই বললেন, 'প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া ভর্তির সময় যে ছাত্র ছাত্রীর কাছ থেকে নগদ কিছু টাকা নেন সেটি সত্য। এটি লাকী বেগমের সময় আগেও নেয়া হত। তবে সবার কাছ থেকে নেওয়া হয় না। মূলত স্কুলের ছোট খাটো খরচ মিটানোর জন্য কারও কারও কাছ থেকে সামান্য এই টাকাটা নেয়া হয়ে থাকে। এটি লাকী ম্যাডামসহ বিদ্যালয়ের সবাই জানেন। তবে ইদানিং লাকী ম্যাডাম আর প্রধান শিক্ষিকার মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও বিরোধ বেড়ে যাওয়ায়, প্রধান শিক্ষিকার টাকা নেয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে। যা আজ মিডিয়ায় পর্যন্ত গড়ায় এবং এখানে মানববন্ধনো হয়েছে।'

মূলত এই দুই নারীর ব্যক্তি দ্বন্দ্বের কারণেই বিদ্যালয়টি আজ এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মথ্যে পড়েছে।

এ বিষয়গুলো ম্যানেজিং কমিটিকে জানালেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষিকাসহ শিক্ষিকাগণ বললেন, 'ম্যানেজিং কমিটিকে বলবো বলবো করে এখনও আমরা বলতে পারিনি। অথচ এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়ে গেল ‘

এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি, স্থানীয় কাউন্সিলর গণি চাঁন মকসুদ বললেন, 'বিষয়টি খুবই দু:খজনক। সরকারি স্কুলে ভর্তির টাকা কেন নেয়া হবে? আর বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষিকার বিরোধ ও দ্বন্দ্বের জন্য পুরো স্কুলকে কেন খেসারত দিতে হবে? আমিও তো সভাপতি ছিলাম। তখনতো এসব ছিলো না। তাই আমি মনে করি, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।'

ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি শাকিল রেজা বললেন, 'আমার পরিস্কার কথা, লিখিত অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে, তিনি রাজিয়া হোন আর লাকী বেগমই হোন, স্কুলের স্বার্থে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।'

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বুলবুল জাহাঙ্গীর সরকার বললেন, 'লিখিত অভিযোগ পেয়েই দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

(জিডি/এসপি/মার্চ ২১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test