E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবশেষে মুক্তি পেলেন মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকা সুভাষ দাস

২০২৪ এপ্রিল ০৮ ১৯:৪৭:২৬
অবশেষে মুক্তি পেলেন মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকা সুভাষ দাস

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অবশেষে মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ১৬৭ নং ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুভাষ কুমার দাস জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সোমবার সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী উভয়পক্ষের শুনানী শেষে তাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিলে বিকেল ৬টায় তিনি কারামুক্ত হন।

এদিকে কারামুক্ত হওয়ার পর তার স্বজনরা কারাফটকের বাইরে আসা মাত্রই তাকে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কারামুক্ত সুভাষ দাস তালা উপজেলার নুরুল্লাহপুর গ্রামের প্রয়াত নিতাই পদ দাসের ছেলে।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, তালা উপজেলার ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুভাষ কুমার দাসের বড় মেয়ে রমা দাসকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাস। ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ইষ্টম দাস নগদ এক লাখ টাকা গ্রহণ করেন সুভাষ দাসের কাছ থেকে। চারকুরি না হওয়ায় ওই টাকা ফেরৎ চাইলে বিপত্তি বাঁধে। একপর্যায়ে ৫০ হাজার টাকা দিলেও বাকী ৫০ হাজার টাকা চাওয়ায় তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ইষ্টম দাস ও তার লাবণ্যবতী মায়াবিনী হরিণী স্ত্রী অঞ্জলী দাস। এরই ধারাবাহিকতায় অঞ্জলী দাসের কাছের বন্ধু আকাশ দাসকে ব্যবহার করে ১০ মার্চ সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বিদ্যালয়ের নিজ অফিস কক্ষে নির্যাতন করান ইষ্টম দাস।

এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এ নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে আকাশ দাস, তারন ভাই বিকাশ দাস ও পুলিশ ভাই প্রকাশ দাস বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার কথা বলে ১৬ মার্চ নিজের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়েকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে মামলা করেন। শ্লীলতাহানির ঘটনার সময় ৭ মার্চ দুপুর সোয়া ১২টায় উল্লেখ করলেও ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাদে তিনটা পর্যন্ত সুভাষ দাস ২৫ জন সহকর্মীর সাথে সরকারি উদ্যোগে মঞ্চস্ত নাটকের রিহার্সালে ছিলেন বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিবেদন, ২৫ জন শিক্ষকের লিখিত জবানবন্দি ও রিহার্সাল অনুষ্ঠানের ভিডিওফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়।

ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাঈদা ও ফরিদা খাতুন লিখিতভাবে জানান যে, সাভাষ দাস স্যার যেমন ৭ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ছিলেন না তেমনি ওই ছাত্রীও বিদ্যালয়ে ছিলো না। মিথ্যা মামলার শিকার সুভাষ দাসকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তালা উপজেলা পরিষদের সামনে খলিলনগর ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়। তালা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সূর্যপদ পালসহ অনেকে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে চাইলেও পরে তারা অজানা কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নিজেদের গুটিয়ে নেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মুিজদ (২) জানান, সোমবার দুপুরে জামিন শুনানীতে তিনি শিক্ষক সুভাষ দাস যে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেনহ তা আদালতকে বুঝাতে সক্ষম হন। অপরদিকে রাষ্ট্র পক্ষের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ মামলার বাদি আকাশ দাস, তার স্ত্রী তৃপ্তি দাস, বোন কাজলী দাস ও ভিকটিমকে সামনে হাজির করিয়ে ভিকটিমের কাছে ও বাদির কাছে ঘটনার বর্ণনা জানতে চান। তারা কেউ ঘটনা সম্পর্কে বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে বাদি বলেন যে যা জানে তার স্ত্রী তৃপ্তি জানে। এমন সময় অ্যাড. আব্দুল লতিফ গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭ মার্চের রিহার্সালের একাধিক স্থির ছবি আকাশ দাসকে দেখালে তিনি ওইসব লোকের মধ্যে চাদর গায় দেওয়া সুভাষ দাসকে সনাক্ত করলে মামলার বাস্তবতা আদালতের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। একপর্যায়ে সুভাষ দাসকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ। বিকেল ছয়টায় সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে সুভাষ দাস মুক্তি পান।

তবে চাকরি দেওয়ার নামে দেড় কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণাকারি ইষ্টম দম্পত্তি ও তাদের দোসর আকাশ দাসের অনিয়ম ও দূণীতির দুদকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নেমেছে জানতে পেরে ্প্রতারিতদের মুখে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। পিঠ বাঁচাতে পাওনাদারদের একের পর এক চেক দিচ্ছেন ও নন জুডিশিয়ালে স্বাক্ষর করে চলেছেন অঞ্জলী ও ইষ্টম। পাওনাদারদের বয়ে ইষ্টম দাস যতই ঘরছাড়া হয়ে থাকেন ততই পোয়াবারো হচ্ছে আকাশ দাসের ভাগ্য। অভিভাবকহীন ইষ্টম পরিবারের আকাশ দাসই বরষার ছাতা।

(আরকে/এএস/এপ্রিল ০৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test