E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৬৮ দিন আগে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, দপ্তরী গ্রেপ্তার

২০২৪ এপ্রিল ১৪ ২৩:৫২:১৩
৬৮ দিন আগে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, দপ্তরী গ্রেপ্তার

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ইছাকুড় গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতের নাম সুজন সরকার (৩১)। তার বাবার নাম মৃত অশোক সরকার।

গ্রেপ্তারকৃতের স্বজনদের অভিযোগ, এক সপ্তাহ আগে ছেলের আপত্তি স্বত্বেও বাবার কাছ থেকে একটি আম গাছ কেনাকে কেন্দ্র করে দু’দফায় মারপিটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই মাস সাত দিন আগে ধর্ষণের ঘটনা দেখিয়ে সুজনের নামে পরিকল্পিত মামলা দেওয়া হয়েছে।

মামলা ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী সুজন সরকার এক বছর আগে কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাসরুম পরিষ্কার করার জন্য ডেকে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে সুজন।

ভিকটিমের নানী জানান, ১২ বছর আগে বুড়িগোয়ালিনির হাসান সানার সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। মেয়ে সন্তানের জন্ম হওয়ার পরপরই ১০ বছর আগে তার মেয়ের তালাক হয়ে যায়। তার কাছে থেকে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল কাগুচির ঘেরে ছাগল চরাতো তার মেয়ে। নাতনির যৌনাঙ্গে ব্যাথা অনুভুত হওয়ায় বিষয়টি তার মেয়ে ও মামলার বাদি ৪/৫ দিন আগে জানতে পারে। পরে তাকে স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার মানিক হোসেন ও হোমিও চিকিৎসক শরিফুল ইসলামের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমানসহ স্থানীয়দের সাথে পরামর্শ করেই মামলা করা হয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃত সুজন সরকারের বাবা ইছাকুড় গ্রামের বিকাশ সরকার জানান, আট দিন আগে একই গ্রামের রবিউল ইসলাম ছোট্টুর বাবার কাছ থেকে তিন হাজার ৫৫০ টাকা দিয়ে কেনা দুটি আম গাছ কেনেন তিনি। পরদিন গাছ দুটি কেটে ভ্যানে তোলার সময় ছোট্টু তাকে আম গাছের কাটা ডাল দিয়ে মারপিট করে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে স্থানীয়রা বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার কথা বললে তিনি বাড়ি চলে আসেন। এর দুই ঘণ্টা পর রবিউল ইসলাম ছোট্টু, জলিল কাগুচী, রবিউল কারিকর, অভি কারিকর, শহীদুল ইসলাম, মুজিবর রহমানসহ কয়েকজন তাদের বাড়িতে এসে তাকেসহ তার স্ত্রী দীপালী সরকার, বাদল সরকার, বাদলের স্ত্রী জ্যোৎস্না সরকার ও ছোট ভাই দীলিপ সরকারকে মারপিট করে। ভাইপো সুজন সরকার খবর পেয়ে বাড়িতে এসে দীপালী ও জ্যোৎস্নাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এতে আরো ক্ষুব্ধ হন রবিউল ইসলাম ছোট্টুসহ হামলাকারিরা। একপর্যায়ে স্বামী পরিত্যক্তা একই গ্রামের এক নারীকে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে তার তৃতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া মেয়েকে দিয়ে দুই মাস সাত দিন আগের ধর্ষণের ঘটনা দেখিয়ে মামলা দিয়ে সুজনকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।

তবে খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আলিফ হোসেন ও উমা সরকার জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসে না।

সাতক্ষীরা আদালত চত্বরে আজ রবিবার দুপুরে আসামী সুজন সরকার জানান, তাকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।

খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার মন্ডল জানান, তার বিদ্যালয়ের কোন ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি কোন অভিভাবক তাকে জানায়নি। তবে কথা বলা সম্ভব হয়নি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য শুকুর আলীর সাথে।

শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক ওবায়দুল ইসলাম জানান, সুজন সরকারের বিরুদ্ধে ভিকটিমের মা বাদি হয়ে শনিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় মামলা(১৪ নং) রেকর্ডের পরপরই তাকে তদন্তভার দিলে দুপুর ১২টার দিকে বাড়ি থেকে আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভিকটিমকে রবিবার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম নয়ন বিশ্বাস তার ২২ ধারায় জবানবন্ধি গ্রহণ করেছেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সোমা রানী দাস জানান, ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে কিনা তা এই মুহুর্তে বলা যাবে না।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test