E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস 

অফিস সহকারী রেজোয়ান-নাজমার কাছে নিয়ম-শৃঙ্খলার আরেক নাম ‘টাকা’

২০২৪ মে ০৯ ১৮:৩৪:০১
অফিস সহকারী রেজোয়ান-নাজমার কাছে নিয়ম-শৃঙ্খলার আরেক নাম ‘টাকা’

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : টাকা পয়সার বনিবনা না হলে লাইনে দাঁড়াতে হয়। আরও কত কি নিয়ম-শৃঙ্খলা দেখান অফিস সহকারী রেজোয়ান ও নাজমা। সব কিছু থাকার পরেও ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। গেইটের আনসার থেকে শুরু করে অফিসের পিয়ন পর্যন্ত ভাগ পায় এই টাকার।

গত কিছু দিন সরজমিনে গেলে দেখা মেলে পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ মানুষের এমন ভোগান্তির দৃশ্য। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, আমি প্রায় দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরে যখন অফিসের ভেতরে যাই তখন নাজমা ম্যাডাম আমাকে সাইডে দাঁড়াতে বলে। পরে আমি তাকে বলি যে আমার সকল কাগজ পত্র ঠিক আছে আপনি একটু দেখেন আমি সকাল থেকে দাড়িয়ে আছি।

পরে সে আমার হাত থেকে কাগজগুলো নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিতে টিক দিয়ে জানালেন, পরিচয়পত্রের ভেরিফিকেশন আনতে হবে। তার পরে ঐ ব্যাক্তি তার সাথে থাকা পরিচয়পত্রের মূলকপি বের করে দেখালেও অফিস সহকারী নাজমা নাছোড়বান্দা কে শোনে কার কথা। পরে সেই ব্যক্তি সেখান থেকে বেরিয়ে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে ২১০ টাকায় সত্যায়িত জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিয়ে যখন ফিরে এলেন ততক্ষণে দেড়টা বেজে গেছে, পাসপোর্টের আবেদন নেওয়া বন্ধ।

হতাশ সেই ব্যক্তি অফিস সহকারী নাজমার সঙ্গে দেখা করে ফাইলের বিষয়ে আলাপ করলে তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভেরিফিকেশন করলে হবে না। এটি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে করে আনতে হবে। নির্বাচন অফিস জেলা আর উপজেলার মধ্যে পার্থক্য কী জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা রাগান্বিত হয়ে তাকে রুম থেকে বের করে দেন।

ভুক্তভোগী আরো জানায়, তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। পাসপোর্ট অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময় দুইজন লোক আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এলেন তারা সম্ভবত দালাল।

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এমন নীরব ফাঁদ পাতা রয়েছে সেবা প্রত্যাশীদের জন্য। অফিসের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাতে ফাইল ফেরত দিয়ে দালালদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করেন। শুধু দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারী নন পাসপোর্ট অফিসের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আনসার সদস্যদেরও প্রকাশ্যে টাকা নিতে দেখা গেছে। এদেরকে ‘পার্টি’ ধরিয়ে দেয় পাসপোর্ট অফিসের সামনে ও আশপাশের কম্পিউটারের দোকানগুলো। এরা মিলেই শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তোলেছেন। সহজে ও ভোগান্তি ছাড়া কাজ করতে এই সিন্ডিকেটের দ্বারস্থ হতেই হয়। এটাকেই ‘লাইন’ বলা হয়!

সকল কার্যক্রম সিসি-টিভি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করলেও অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়ে না কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রুকুনুজ্জমান ভুঁইয়ার চোখে। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তার মৌন সমর্থনেই অনিয়ম, হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে পাসপোর্ট অফিসে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েও অনিয়মের চিত্র পাল্টাতে পারেনি লাইনে আসতেই হবে!

এই বিষয়ে জানতে উপ-পরিচালক রুকুনুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা সর্বদা গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার ব্যাপারে সবসময় আন্তরিক থাকি এবং তাদের কাজ গুলো খুব দ্রুত করে দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে অব্যশই ব্যবস্থা নিবো।

(এস/এসপি/মে ০৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test