E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 

সাতক্ষীরায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

২০২৪ মে ১০ ১৬:৪২:২০
সাতক্ষীরায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংগঠিত হয়েছে। সশস্ত্র ডাকাত দলের সদস্য গৃহকর্তা ও তার স্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত ও মুখ বেঁধে প্রায় দুই লাখ নগদ টাকা, ৪০ ভরি সোনার গহনা, ২৪ ভরি রুপা ও তিনটি মোবাইল সেট নিয়ে গেছে।  

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে শুক্রবার ভোর সোয়া চারটা পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের যোগরাজপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম মোস্তফার বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের যোগরাজপুর গ্রামের প্রয়াত মোমেন সরদারের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারি প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম মোস্তফা জানান, তিনি ৩৩ বছর যাবৎ যোগরাজপুর সরদারপাড়া বায়তুর মামুর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিয়ে দেওয়ার পর বড় মেয়ে মৌসুমী ফারজানা সিলেটে ও ছোট মেয়ে তামান্না তাসনিম স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করে। একমাত্র ছেলে কাইয়ুম আজাদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ঢাকায় কর্মরত। ২০২০ সালের জুলাই মাসে তিনি অবসরে যাওয়ার পর স্ত্রী মমতাজ খাতুনকে নিয়ে যোগরাজপুর পূর্ব পাড়ার বাড়িতেই থাকেন। ছেলেকে আগামী ঈদে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে পুত্রবধুর জন্য কিছু সোনার গহনা তৈরি করে রাখা হয়। এ ছাড়া স্ত্রী মমতাজ, দুই মেয়ে ও নাতনি রুমার জন্য সোনা ও রুপার গহনা তার বাড়িতেই রাখা ছিল।

মোঃ আবুল কালাম মোস্তফা আরো জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তারা স্বামী স্ত্রী ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন। এসময় পাঁচ জনের একদল সাদা মুখোশধারি সশস্ত্র ডাকাত প্রাচীর টপকে বাড়ির পিছনের লোহার গ্রীলের হ্যাজবোল্ড ভেঙে তার ঘরে ঢুকে পড়ে। বাইরের প্রধান ফটকের সামনে একজন ডাকাত দাঁড়িয়ে ছিল। ডাকাত দলের সদস্যরা প্রথমে একটি চাপাতির মুখে জিম্মি করে তার মুখ কাপড় দিয়ে ও দুই হাত সামনের দিকে রেখে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। প্রায় একইসাথে তার স্ত্রীর মুখ কাপড় দিয়ে ও দু’হাত পিছনের দিকে বেঁধে ফেলে। এ সময় তাদের কাছে আলমারির চাবি চাওয়া হয়। গহনা ও টাকা বাড়িতে নেই বলায় তারা ক্ষুব্ধ হয়। একপর্যায়ে আলমারির চাবির অবস্থান জানালেও তারা আলমারির তালা ভেঙে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য গচ্ছিত নগদ এক লাখ ৭০ হাজার টাকা, মসজিদের জন্য দুটি মাটির ভান্ডার ও নিজের জন্য জমানো একটি মাটির ভান্ডার ভেঙে ও তার মানি ব্যাগ থেকে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা, ১৬টি রুপার টাকা, আট ভরি রুপার গহণা, দুটি বাটাম ফোন ও একটি স্মার্ট ফোন লুট করে নিয়ে যায়।মুখোশ পরিহিত ডাকাত দলের সদস্যদের প্রত্যেকের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর হবে বলে জানান গৃহকর্তা।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র যোগরাজপুর পূর্বপাড়ার মোনায়েম হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তিনি পড়াশুনা শেষ করে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে আলো বন্ধ করে শুইয়ে পড়েন। এরপরই তিনি চাচা মোঃ আবুল কালাম মোস্তফার বাড়ির মধ্যে কয়েকবার শব্দ শুনতে পান। একইভাবে প্রায় একই সময়ে বৃদ্ধা সেলিনা খাতুন তার দেবর আবুল কালাম মোস্তফার বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে আলো জ্বলাকালিন সময়ে একজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

এদিকে যোগরাজপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ ও শাহীনুর গাজী জানান, যোগরাজপুর এলাকায় কমপক্ষে দুটি মাদক সেবী ও মাদক বিক্রেতা গ্রুপ রয়েছে। তারা প্রায় প্রতি রাতেই বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ও টিউবওয়েল চুরি করে আসছে। গত এক সপ্তাহে যোগরাজপুর গ্রাম থেকে চারটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরি হয়। চুরি যাওয়া ট্রান্সফর্মার ও কয়েকটি টিউবওয়েলসহ হর্টিকালচার অফিসের পিকআপ ভ্যানসহ চালক দেবনগর গ্রামের টিটু গত সোমবার কলারোয়া থানাধীন তুলসীডাঙায় পুলিশের হাতে আটক হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে যোগরাজপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে গত বুধবার কলোরোয়া থানার পুলিশ আটক করে। অস্ত্রধারী ক্যাডার সাদ্দাম হোসেন ও তার দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন স্থানে চুরি ও দস্যুতার অভিযোগ রয়েছে। সাদ্দাম গ্রেপ্তার হওয়ার পর যোগরাজপুর গ্রামের আব্দুল্লার ছেলে মাদক ব্যবসায়ি দাউদ ও তার সহযোগীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আবুল কালাম মোস্তফার বাড়ি থেখে ডাকাতি কলে পালানোর সময় গাজীর বটতলার পাশে দেবনগর বিলে ধান খেতে অবস্থানকরাকালে টর্চের আলো মারায় ডাকাত দলের সদস্যরা যোগরাজপুর গ্রামের নুরালী সরদারের ছেলে কৃষক মনিরুল ইসলামকে মারপিট করে হাত ও মুখ বেঁধে মাঠে ফেলে রেখে যায়। সকালে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। মনিরুল গ্রেপ্তারকৃত সাদ্দাম হোসেনের চাচাত ভাই।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি কালো রং এর রেইন কোর্ট ও একটি চশমা জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

(আরকে/এসপি/মে ১০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test