E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কেন্দুয়া উপজেলা

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে ধস, ১৪১টি শূন্যপদ নিয়ে চলছে কার্যক্রম

২০২৪ মে ১৫ ১৯:২৯:৩৮
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে ধস, ১৪১টি শূন্যপদ নিয়ে চলছে কার্যক্রম

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : প্রাথমিক শিক্ষাই শিক্ষার মূল ভিত্তি হলেও কেন্দুয়া উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে ধস নেমেছে। উপজেলায় ১শ ৪১টি শূন্যপদ নিয়ে কোনমতে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। এই উপজেলায় নেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। সহকারী উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তার ৭টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র ৩ জন। তাও ১ জন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান শিক্ষক নেই ৫৫টি বিদ্যালয়ে। সহকারী শিক্ষকের ৭৮টি শূন্যপদ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। তাছাড়া উপজেলা কার্যালয়ে ১ জন হিসাব সহকারী, ১ জন অফিস সহকারী ও ১ জন অফিস সহায়কের শূন্যপদসহ মোট ১শ ৪১টি শূন্যপদ নিয়ে কচ্ছপ গতিতে চলতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ বিদ্যালয়ের কোন কোন শ্রেণীতে মোট শিক্ষকের চাইতে ছাত্র/ছাত্রীর উপস্থিতি কম। শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ে আসেন নিজেদের ইচ্ছামত। সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৯টা কিংবা ১০টার মধ্যেও কোন বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকার উপস্থিতি মেলেনি। অনেক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণির ছাত্র/ছাত্রীরা ৯টার আগে গিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও বিদ্যালয়ে থালা লাগানো থাকায় তারা বিদ্যালয়ে মাঠে দৌঁড়াদৌড়ি করতে থাকে। এ চিত্র এখন প্রতিদিনের। বিদ্যালয় গুলোতে সমাবেশ হয়না বল্লেই চলে। এর কারণ হিসাবে জানা যায় কোন কোন বিদ্যালয়ৈর মাঠে সমাবেশের পরিবেশ নেই। মাঠ গরু ছাগলের চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া বৈশাখ মাসের ধান, বন শুকানোর কাজে বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। আশুজিয়া ইউনিয়ের সিংহের গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ বছরের অধিক সময় ধরে বিদ্যালয়ের মাঠে ছাত্র/ছাত্রীদের কোন সমাবেশ হয় না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ জানান, মাঠে নির্মাণ সামগ্রী ফেলা রাখায় এখানে কোন সমাবেশ করা যাচ্ছে না।

পৌর এলাকার চন্দ্রগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুন্নাহার খানম জানান, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে গড়ে ৪/৫ ছাত্র/ছাত্রী উপস্থিত থাকে। গত বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যাললে ৫ম শ্রেণিতে ১৩ জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে ৫ জন উপস্থিত ছিল এবং ৪র্থ শ্রেণীর ১৮ ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে ৬ জন উপস্থিত ছিল। প্রধান শিক্ষক দাবি করে বলেন, বর্তমান ধান কাটার মৌসুমে অভিভাবকগণ ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ছাত্র/ছাত্রীদের ধান কাটাই মাড়াইয়ের কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। কয়দিন পরে উপস্থিতি বাড়বে।

পালড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মাহফুজা বেগম বলেন, তার বিদ্যালয়ের মাত্র ২টি শ্রেণিকক্ষ আছে। মাঠে গর্তে ভরা মাটি ভরাট করতে না পারায় মাঠটি খেলার উপযোগী না। তিনি শ্রেণিকক্ষ বাড়ানো সহ মাঠে মাটি ভরাট ও বিদ্যালয়ের সংযোগ রাস্তার সংস্কারের দাবি জানান। তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও ছাত্র ছাত্রীর তেমন সারা মেলেনি।

প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন দাবি করেন বলেন, বৈশাখ মাসে ধান কাটার মৌসুমে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি একেবারে কম হয়। আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও উপস্থিতি বাড়াতে পারিনি। মহুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক শাহজাহান মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী উপস্থিত না হলেই দেখবে কে ? শিক্ষকরাই তো নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। কার খবর কে রাখে।

কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির আলম ভূঞার সাথে প্রাথমিক শিক্ষা বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে ধস নেমেছে। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নেই। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ৭ জনের মধ্যে আছেন মাত্র ৩ জন তাছাড়া প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকও অনেক বিদ্যালয়ে নেই। মনিটরিং কার্যক্রম না থাকলে যা হওয়া দরকার এখানে তাই হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে জরুবি ভিত্তিতে সকল শূন্যপদ পূরণের জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

নওপাড়া ও রামপুর ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মির্জা মোহাম্মদ বলেন, আমার আওতায় ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে। সবগুলিকেই আমার দেখাশোনা করতে হয়। এতে আমার খুব সীমাহীন কষ্ট হয়। তবুও যাতে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত না হয় সেই জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আজ বুধবার দুপুরে কেন্দুয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১শ ৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ৭জনের মধ্যে আছি মাত্র ৩ জন। আমি ভারপ্রাপ্ত শিক্ষাকর্মকর্তারও দায়িত্বে আছি। এভাবে শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা সংকট নিয়ে খুব সুন্দর অবস্থায় চলছে না প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। তিনিও ১শ ৪১টি শূন্যপদ জুরুরি ভাবে পূরণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তপক্ষে সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

(এসবি/এসপি/মে ১৫, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test