E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বানিয়াচংয়ে জঙ্গী সন্দেহে যুবক আটক, রিমান্ডের আবেদন

২০১৪ নভেম্বর ২৫ ১৭:২৩:০৭
বানিয়াচংয়ে জঙ্গী সন্দেহে যুবক আটক, রিমান্ডের আবেদন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে জঙ্গী সন্দেহে মোস্তাক আহমদ খা (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে বানিয়াচং সদরের তকবাজখানির মনোয়ার মিয়ার ছেলে। সোমবার বিকেলে নিজ বাড়ি থেকে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর সার্কেল) নাজমুল ইসলাম ও বানিয়াচং থানার ওসি লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

এ সময় তার কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, সিমকার্ড, তিনটি ব্যাংকের ৬টি চেক বই, ৪টি টাকা জমা রিসিট বই ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি ক্যালেন্ডার জব্দ করেছে পুলিশ। মোস্তাককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে বানিয়াচং আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন ওসি লিয়াকত আলী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিচারক কামাল আহমেদ কি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা জানা যায়নি।

পুলিশ জানায়, মোস্তাক আহমদ খা’র নামে ইসলামী ব্যাংকে ২টি একাউন্ট, ব্র্যাক ব্যাংকে একটি ও পূবালী ব্যাংকে ১টি একাউন্ট রয়েছে। এছাড়া তার শাশুড়ি হামিদা খাতুন ও মামাতো ভাই কাওছার মিয়ার নামে ব্র্যাক ব্যাংক বানিয়াচং শাখায় দু’টি একাউন্ট রয়েছে। এসব একাউন্টে প্রতি মাসে বিদেশ থেকে আসা কোটি টাকার উপরে উত্তোলন করেছেন। এছাড়া স্থানীয় আদর্শবাজারে এম.কে এন্টারপ্রাইজ নামে তার একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে। দোকানের নামে থাকা ইসলামী ব্যাংকের একাউন্টে চলতি বছরের ১১ জুন থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৭৮ লাখ টাকা তিনি উত্তোলন করেছেন। ইসলামী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় থাকা অপর একটি একাউন্ট থেকে প্রায় ২৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। এদিকে তার শাশুড়ি হামিদা খাতুনের নামে ও মামাতো ভাই কাওছার মিয়ার নামে ব্র্যাক ব্যাংকে থাকা দু’টি একাউন্ট থেকে কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।

থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, মোস্তাক আহমদ রাতারাতি বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যান। এলাকার অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মোটা অংকের আর্থিক অনুদান প্রদানসহ তার চলাফেরা ও আয়ের উৎসকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে। জঙ্গী কোনো সংগঠনের সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। মোস্তাক আহমদ এতদিন পুলিশি নজরে ছিলেন। তিনি কোনো জঙ্গী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মোস্তাক আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া হবিগঞ্জে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সভার ছবি তার কাছে পাওয়া গেছে।

এদিকে গত ২০ অক্টোবর উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন সমন্বয় ও আইন-শৃঙ্খলা সভায় ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া মোস্তাক আহমদ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়াসহ সন্দেহজনক চলাফেরার বিষয় উপস্থাপন করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মোস্তাক আহমদকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার। এর পূর্বে মোস্তাক আহমদের কোটিপতি বনে যাওয়ার আয়ের উৎস জানতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নোটিশ করেছিলেন চেয়ারম্যান।

মোস্তাক আহমদের পিতা মনোয়ার মিয়া থানায় সাংবাদিকদের জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মোস্তাক আহমদ তার বড় সন্তান। পৈত্রিক ৪ বিঘা জমি বিক্রি করে মনোয়ার মিয়া ইরানে চলে যান। ইরানে ১৪ বছর থেকেছেন। তার বড় ছেলে মোস্তাক আমিরখানি রেদুয়ানিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। পরে মোস্তাক আফগানিস্তান হয়ে তুরস্ক চলে যায়। সেখানে একটি মাদ্রাসায় ৪ বছর পড়ালেখা করেছে। পরে একটি কারখানায় চাকুরি করে। তার ছেলে তুরস্ক থেকে দু’বছর আগে দেশে ফিরে স্থানীয় আদর্শবাজারে মোবাইল ফোনের ব্যবসা শুরু করে। তাদের একটি বসত বাড়ি ও ৩ বিঘা জমি ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই।

কিছুদিন আগে আদর্শবাজারে দেড় লাখ টাকায় একটি দোকান ভিট ইজারা নিয়েছেন। ২৫ লাখ টাকা খরচ করে দ্বিতল ভিত্তির ঘর বানিয়েছেন। মনোয়ার মিয়া আরও জানান, মোস্তাক প্রায়ই তাকে মানসিক নির্যাতন করত। তিনি অতিষ্ট হয়ে গত ৩০ অক্টোবর হবিগঞ্জ আদালতে মোস্তাকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় হাজিরা দিতে গেলে পুলিশ মোস্তাককে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। ৩ দিন কারাভোগের পর তিনি নিজেই জামিনে তার সন্তানকে বের করে এনেছেন।

(পিডিএস/এএস/নভেম্বর ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test