E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এবার শালবন বিহারে মিলল অষ্টম শতকে নির্মিত গভীর কূপ

২০১৪ ডিসেম্বর ০২ ১৯:১২:৩৩
এবার শালবন বিহারে মিলল অষ্টম শতকে নির্মিত গভীর কূপ

কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লা শহর থেকে পাঁচ মাইল পশ্চিমে উত্তর-দক্ষিণে যে দীর্ঘ অনুচ্চ ও সরু পাহাড় শ্রেনী হয়েছে লালমাই ময়নামতি নামে সর্বাধিক পরিচিত। উত্তর ভাগটাকে বলা হয় ময়নামতি আর দক্ষিণ ভাগটাকে বলা হয় লালমাই। এই লালমাই ময়নামতি পাহাড় শ্রেণীর বয়স সাড়ে তিন কোটি বছর বলে পন্ডিতরা অনুমান করেন। সেই পাহাড় শ্রেণীতে প্রাপ্ত ইট দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কুমিল্লা বিমান বন্দরের রানওয়ে নির্মাণের সময় এখানে নজর পড়ে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের। যদিও এলাকার লোকজন তা আগে থেকেই অনুমান করতো এই পাহাড় এলাকায় ইতিহাসের কোন মহার্ঘ উপাদান লুকিয়ে আছে। না হয় কেন ইটের পর ইট পাওয়া যাচ্ছে কেনই বা পাওয়া যাচ্ছে অসংখ্য প্রাচীন মুদ্রা, পাথর ও ব্রোঞ্জের তৈরি মূর্তি। ১৯৫৫-৫৬ সালে এখানে চালানো হয় জরিপ। প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ বহনকারী ৫৪টি স্থান সংরক্ষণ করা হয়। একে একে আবিস্কার করা হয় বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের এক গৌরবময় মানব সভ্যতার বিস্ময়কর অগ্রগতির অধ্যায়। আবিস্কার হয় লুপ্ত ইতিহাস নতুন করে রচনার মহার্ঘ উপাদানসমূহ। সেই ৫৪টি আবিস্কারের মধ্যে প্রাচীন সভ্যতার অনন্য নিদর্শন আনন্দ বিহার তথা শালবন বিহারের পাশে এবার আবিষ্কৃত হলো প্রাচীন অষ্টম শতকের নির্মিত একটি গভীর কূপ। যা এই এই প্রথম আবিস্কৃত হয়। ধারণা করা হচ্ছে এখান থেকে পানি সরবরাহ করা হতো। এছাড়াও পোড়া মাটির বিভিন্ন চিত্র ফলক পাওয়া যাচ্ছে।

কুমিল্লার কোটবাড়ি প্রাচীন শালবন বিহারে প্রতি বছরের মতো এবারও খনন কাজ চলছে। আর এ খনন কাজ করা হয় শীতকালে। নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ খনন কাজ তিন মাস ধরে চলবে। সতর্কতার সাথে খনন কাজে চলছে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে খনন কাজ। খননের সময় প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন ইতিহাসের উপাদান। পাওয়া যাচ্ছে প্রাচীন ময়ূর, খরগোশ ও সিংহের প্রতিকৃতি সম্বলিত টেরাকোটা পোড়া মাটির ফলক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩৫জন শ্রমিক একসাথে দক্ষতার সাথে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর খনন কাজের যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য চারদিকে রশি দিয়ে সীমানা ঘিরে রাখা হয়েছে। তবুও দূর থেকে পর্যটকরা দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। খনন কাজ করার সময় পাওয়া যাচ্ছে । সেগুলোও যত্ন সহকারে সংগ্রহ করছেন কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, আমরা প্রতি বছরই নতুন নতুন কিছু ইতিহাসের সন্ধান পাচ্ছি। যা কুমিল্লার জন্য গৌরবের বিষয়। কুমিল্লা কোটবাড়ি শালবন বিহারে এই প্রথম প্রাচীন অষ্টম শতকের নির্মিত একটি গভীর কূপ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এখান থেকে পানি সরবরাহ করা হতো। এছাড়াও পোড়া মাটির বিভিন্ন চিত্র ফলক পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি জানান, এর আগেও শালবন বিহারে ৩৭ এর জায়গায় বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত খনন কাজে ১০টি বৌদ্ধ মন্দিরসহ উদ্ধার হয়েছে প্রাচীন সভ্যতার বহু নিদর্শন। বিহারের কেন্দ্রীয় মন্দিরের উত্তর পূর্ব দিকে ৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২১টি বর্গাকৃতি স্থানে খনন কাজ পরিচালনাকালে ইট ও কাদামাটি দিয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন একটি পানির কূপের সন্ধান পেয়েছি। প্রাচীন এ কূপটির উপরিভাগ ১১ ফুট ৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গোলাকার। কূপটির গভীরতা নির্ণয়ের জন্য এর ভেতরেও খনন কাজ করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে শালবন বিহারে আরো এরকম কূপ থাকতে পারে।

ময়নামতি জাদুঘরের কর্মকর্তা আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, কুমিল্লার কোটবাড়ি ১৯৬৬ সালে শালবন বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন এলাকায় ময়নামতি জাদুঘর নির্মিত হওয়ার পর এখানে প্রাপ্ত প্রতœসম্পদগুলো জনগণের জনগণের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। তবে জাদুঘরটি ছোট পরিসরের হওয়ায় অনেক প্রত্নবস্তু অপ্রদর্শিত অবস্থা আছে।

আবিষ্কৃত কূপটি সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সপ্তম বা অষ্টম শতকে নির্মিত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

(এইচকেজি/অ/ডিসেম্বর ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test