E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কলাপাড়ায় হাজার মানুষের চোখের জলে অন্যরকম প্রতিবাদ

২০১৪ ডিসেম্বর ০৪ ১৭:৪৯:২৪
কলাপাড়ায় হাজার মানুষের চোখের জলে অন্যরকম প্রতিবাদ

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : আর কতো মানুষ মরলে ক্লোজার নির্মাণ হবে, আর কতো জমি ও বসত ঘর বিলীন হলে সরকার ২০ সহস্রাধিক মানুষকে রক্ষার উদ্যেগ নেবে। সরকারী কর্মকর্তারা ঘুষ খাওয়ার কারণে এখন সর্বস্ব হারানোর পথে ১৭ টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। এই দূর্যোগ থেকে কি তাদের আর রক্ষা নেই এভাবেই গতকাল হাজার হাজার মানুষ চোখের পানি ফেলে বিলাপ করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মধ্যে থাকা ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের পেয়ারপুর গ্রামে বুধবার শেষ বিকালে ক্লোজার নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু এভাবেই বিলাপ করে প্রতিবাদ জানায়।

কলাপাড়ার বরইতলা নদী ঘেষা একটি গ্রাম পেয়ারপুর । এ গ্রামের অন্তত অন্তত সাতজন নারী-পুরুষ ও শিশু গত সিডরের জলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙ্গে নিহত হয়। এখনও নিখোঁজ আছে একজন। সরকার দূর্যোগ কবলিত এ গ্রামের মানুষের নিরাপত্তায় ৪৭/২ পোল্ডারে গত বছর ক্লোজার করার জন্য ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। দূর্যোগ কবলিত এ গ্রামের মানুষ সরকারের এ সিদ্ধান্তে খুশি হলেও ঠিকাদার ও পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বন্ধ হয়ে যায় ক্লোজার নির্মাণের কাজ। স্থানীয় মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে এ বছর এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে আবারও ক্লোজার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পাউবো কর্মকর্তারা ঠিকাদারের যোগসাজসে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পাল্টে অন্য স্পটে ক্লোজার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ফুঁসে উঠে গোটা ইউনিয়নের মানুষ।

ডালবুগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আ. সালাম সিকদার জানান, পেয়ারপুর গ্রামে ক্লোজার নির্মাণ হলে পাশ্ববর্তী নুরপুর, ফুলবুনিয়া, জামালপুর, রসুলপুর, রমজানপুর, ডালবুগঞ্জ, পূর্ব ডালবুগঞ্জ, মনোহরপুর, মোয়াজ্জেমপুর, নিজশিববাড়িয়া, বরইতলা, ইউসুফপুর, সুধীরপুর, নিজামপুর,মহীপুর ও লতিফপুর গ্রামের মানুষ ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও জলোচ্ছাস থেকেত রক্ষা পেত। কিন্তু এখন সেই ক্লোজার স্থানীয় মানুষের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা না করে করা হচ্ছে মেহেরপুর গ্রামে মাত্র একটি গ্রামের কথা ভেবে।

ফুলবুনিয়া গ্রামের ইসমাইল মিয়া, পেয়াপুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান জানান, এই হানে ক্লোজার না হইলে আগামী বইষ্যায় মোরা ভাইস্যা যামু। সব শ্যাষ হইয়া যাইবে। দ্যাহেন না বান্দের উপর খালি হাডার(হাটার) জায়গা আছে। রোজই ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা পড়ে। বাঁধ সংলগ্ন সত্তোরোর্ধ হাজী শাজাহান ফরাজী জানায়,এই বান্দে যে কতো মানুষ কাইর‌্যা নেছে। ঝড় হইলেই মানু মরে। তার হিসেবে গত সিডর পর্যন্ত বাঁধ ভেঙ্গে জলোচ্ছাসে মারা গেছে, মতলেব হাওলাদার, রশিদ হাওলাদার, যামিনী খাতুন, শিউলী, এলেম গাজী, হিম্মত গাজী ও মালেক গাজী।
স্থানীয় শহীদুল ইসলাম সানু, শাজাহান খন্দকারসহ শতশত মানুষ জানায়, এই হানে ক্লোজার না হলে কোথাও হতে দেয়া হবে না। দরকার হলে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে। মানুষ মেরে ঠিকাদার ও পাউবো কর্মকর্তাদের বড়লোক হতে দেয়া হবে না।

ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক প্রশাসক অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন জানান, মানুষের উপকারের জন্য পেয়ারপুর গ্রামে তৎকালীন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ক্লোজার করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কিছু সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজসে এখন ক্লোজার নির্মান এবারও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। পেয়ারপুর ছাড়া অন্য জায়গায় ক্লোজার নির্মাণ হলে সেটা হবে ভুল সিদ্ধান্ত।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, ডালবুগঞ্জের কোন স্পটে, কত টাকা বরাদ্দে কি ধরনের ক্লোজার করা হচ্ছে তা তার জানা নেই।

তবে সদ্য অন্যত্র বদলী হওয়া একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) জানান, ক্লোজার করার জন্য গত বছর ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার কাজ করেনি। এ বছর বাড়িয়ে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটির স্থান পাল্টানোর ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেন নি।

(এমকেআর/এএস/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test