E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তিন লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় পরীক্ষায় প্রথম হয়েও চাকুরীর অনিশ্চয়তা

২০১৪ ডিসেম্বর ০৫ ১১:০৪:০০
তিন লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় পরীক্ষায় প্রথম হয়েও চাকুরীর অনিশ্চয়তা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি (বরিশাল): আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্কুল সভাপতির চাহিদানুযায়ি তিন লাখ টাকা উৎকোচ দিতে না পারায় চাকুরীতে যোগদানে ব্যর্থ হয়েছেন পরীক্ষায় প্রথম হওয়া এক চাকুরী প্রার্থী।

চাহিদার টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সভাপতি স্বেচ্ছাচারিতার মাধমে ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল না করেই পুনরায় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।

চরম অনিয়মের এ ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার মোলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায়ি শিক্ষা পদের শুন্য কোটায় শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে।


আইন ও ম্যানেজিং কমিটির মতামত উপেক্ষা করে প্রথম স্থান অধিকার করা প্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে সভাপতির একক ইচ্ছায় পুনরায় নতুন করে ওই স্কুলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় প্রার্থী ও স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। এদিকে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রার্থী।

স্থানীয় অভিবঅবকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বরিশাল শিক্ষা বোর্ড সহ সংশি¬স্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রার্থীর চাকুরীর নিশ্চয়তাসহ সভাপতির অপসারণ দাবি করে স্কুলটিতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।

সাংবাদিকদের অনিয়মের তথ্য দেয়ায় ক্ষব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির অপর সদস্যদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন ওই স্কুলের সভাপতি কাশী নাথ হাওলাদার। হুমকির ঘটনায় থানায় সাধারন ডায়েরী করা হয়েছে।


ওই বিদ্যালয়ের ‘ব্যবসায়ি শিক্ষা’ কোটায় প্রথম হওয়া চাকুরী প্রার্থী একই উপজেলার বাকাল গ্রামের অনিল বিশ্বাসের ছেলে রাম বিশ্বাসের লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, স্কুলটিতে দীর্ঘ দিন শিক্ষক না থাকার ফলে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ব্যবসায়ি শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য চলতি বছর ১৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ি ২৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। বাছাইতে এক জন বাতিল হওয়ায় বাকি ২৪ জনকে ২৭ নভেম্বর বরিশাল জেলা সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য আহ্বান করা হয়। পরীক্ষায় ১৭ জন প্রার্থী অংশ গ্রহন করেন । পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে রাম বিশ্বাস প্রথম হন। নিয়োগ বোর্ড প্রথম স্থান অধিকার করা প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার শুপারিশ করেন। সে অনুযায়ি নিয়োগের দেয়ার জন্য ৩০ নভেম্বর ম্যানেজিং কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় কমিটির ১০ জন সদস্যর মধ্যে অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধিসহ ৮জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, প্রথম হওয়া রামকে নিয়োগের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভায় আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয় বলে জানান স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ হাওলাদারসহ অন্য শিক্ষক প্রতিনিধিরা।

রাম অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক চাকুরীর জন্য তার কাছে তিন লাখ টাকা সম্মানী করতে বলেছিলেন। কিন্তু আর্থিক অসঙ্গিত কারণে এত টাকা দিতে রাম অপরাগতা জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে সভাপতি তাকে নিয়োগ না দিয়ে সভা শেষ করে নতুন সার্কুলার দেন।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে লাভবানের জন্য সভাপতি ও স্থানীয় প্রভাবশালী কাশী নাথ হাওলাদার নিজে টাকা না পেয়ে ‘ব্যবসায়ি শিক্ষা’ পদের জন্য ২ ডিসেম্বর জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তারমত স্থানীয়রাও আকস্মিক হতবাক হয়ে যান।

স্কুলটিতে তথ্যের জন্য সাংবাদিকরা গেলে সেখানে শিক্ষক, স্থানীয় সচেতন জনগন সভাপতির সেচ্ছাচারিতা ও আইন পরিপন্থি এহেন কাজের ধিক্কার জানান। স্থানীয়রা জানান, আগে প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদে নিয়োগ না দেয়ায় উত্তীর্ন প্রার্থীরা আদালতে মামলা করেছেন। যা এখনও চলমান রয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে এলাকাবাসী জানান, সভাপতির সেচ্ছাচারিতার কারনে স্কুলের সার্বিক পরিবেশ নস্ট হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি চালু হয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি কারো মতামত প্রধান্য দিচ্ছেননা। ফলে তারা সভাপতির অপসারণ দাবি করেছেন।

তাদের অভিযোগের প্রমান দেখা গেছে স্কুলের রেজুলেশন বহিতেও। (২২০ পাতা) সদস্যদের হাজিরা স্বাক্ষর দেখা গেলেও কোন রেজুলেশন দেখা যায়নি।

এব্যপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য আবুল হোসেন মিয়া বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া নিয়োগ বন্ধ না করে সভাপতি পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞাপন আহ্বান করতে পারেননা। বিষয়টি নিয়ে তার কাছে কোন অভিযোগ এলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান। এদিকে চাকুরী বঞ্চিত রাম বলেন, দরকার হলে তিনি ন্যায় বিচারের জন্য আদালতে যাবেন।

এব্যপারে অভিযুক্ত সভাপতি কাশী নাথ হাওলাদার বলেন, ওই ছেলে বেয়াদব। আমাকে সম্মান করেনি। তাই রেজুলেশন করে আমি নিয়োগ বাতিল করেছি। রেজুলেশন খাতায় উপস্থিত সদস্যদের স্বাক্ষর রয়েছে। স্কুল সচিব এভাইে মিটিংএর স্বাক্ষর নিয়ে ২/৩ দিন পরে রেজুলেশন লেখে। কেন রেজুলেশন লেখার আগে বিজ্ঞাপন দেয়া হল এবং নিয়োগ দেয়ার আগে কিভাবে বেয়াদবী করছে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে ফোন বন্ধ করে দেন।


(টিবি/এসসি/ডিসেম্বর০৫,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test