E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রাজশাহীতে দেশের প্রথম প্রাকৃতিক হিমাগার উদ্বোধন

২০১৪ ডিসেম্বর ০৫ ২১:৩৮:৫৯
রাজশাহীতে দেশের প্রথম প্রাকৃতিক হিমাগার উদ্বোধন

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে একটি করে প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

আজ শুক্রবার রাজশাহীর বোয়ালিয়ার চকপাড়ায় দেশের প্রথম প্রাকৃতিক হিমাগার’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ আহ্বান জানান।

গভর্নর বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে যতটি প্রাকৃতিক হিমাগার করা হবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সমসংখ্যক প্রাকৃতিক হিমাগার করা হবে।

তিনি বলেন, এটিকে প্রাকৃতিক হিমাগার না বলে ‘প্রাকৃতিক শস্য সংরক্ষণাগার’ বলা যেতে পারে। এটি চালাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়না। প্রকৃতির বাতাসকে এখানে কাজে লাগানো হয়েছে। এখানে যে কয়েকটি ফ্যান ব্যবহার হবে, তাও চলবে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে।এই হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৩০০ মেট্রিক টন। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ১৪ লাখ টাকা। অথচ একই ধারণক্ষমতার একটি প্রচলিত ধারার হিমাগার তৈরিতে খরচ হয় দুই থেকে তিন কোটি টাকা। সেখানে বিদ্যুতেরও দরকার হয়। এদিক থেকে এটি একটি ব্যয়সাশ্রয়ী সংরক্ষণাগার।

গর্ভনর বলেন, উত্তরবঙ্গকে বাংলাদেশের ‘শস্যভান্ডার’ বলা যায়। এ অঞ্চলের ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, শাক-সবজি ও ফলমূল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। এসব উৎপাদিত ফসলের বেশির ভাগই পচনশীল। স্বল্প আয়ের কৃষকরা প্রচলিত ধারার হিমাগারে উচ্চমূল্যে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করতে পারেন না। ফসল ফলানোর পর তা সংরক্ষণে এ ব্যয় কৃষকদের সাধ্যের বাইরে। তাই মৌসুমের সময় চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এমনকি উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে তাদের ফসল বিক্রি করতে হয়। আমরা সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই দেখি, কৃষকরা মৌসুমের সময় পচনের ভয়ে আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, আদা কম দামে বিক্রি করে লোকসান গুনছেন। কেউ কেউ আলু, টমেটো, মূলার উৎপাদন খরচ উঠাতে না পেরে পথে-ঘাটে-রাস্তায় ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বা গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন। যে কৃষকরা কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করেন তারা দাম না পেলেও, এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা ঠিকই এসব পণ্য কেনা-বেচার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুনাফা করছেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

কৃষকদের এমন দুর্দশা দেখেই একটি ব্যয়সাশ্রয়ী শস্য সংরক্ষণাগার তৈরির ভাবনা আমার মাথায় আসে। সেই ভাবনা থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম মনজুর হোসেনকে অনুরোধ করি একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগার তৈরি করতে। রাজশাহীর প্রাকৃতিক হিমাগারটির নাম জমির মালিক ‘শাহ সিরাজুল ইসলাম প্রাকৃতিক হিমাগার’ করার ঘোষণা দেন গভর্নর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের (রাজশাহী) নির্বাহী পরিচালক জিন্নাতুল বাকেয়া’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম ওসমান গণি, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম. শাহ্ নওয়াজ আলী, প্রাকৃতিক হিমাগারের উদ্ভাবক ও প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. এম মনজুর হোসেন, প্রকৌশল কাজে সহায়তাকারী প্রফেসর ড. নিয়ামুল বারী প্রমুখ।

প্রাকৃতিক হিমাগারের উদ্ভাবক ও প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. এম মনজুর হোসেন জানান, ৩০০ টন ধারণক্ষমতা প্রাকৃতিক হিমাগারটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ, খড়, ইট, বালু ও সিমেন্ট। হিমাগারটির বাইরের দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট, ভেতরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ৫৮ ফুট ও ২৮ ফুট এবং উচ্চতা ২৭ ফুট। হিমাগারটি তৈরিতে সময় লেগেছে ৩ মাস।
হিমাগারে আলু ও গাজর চার থেকে পাঁচ মাস, টমেটো দুই থেকে তিন মাস, আম এক থেকে দেড় মাস, লিচু ১৫ দিন থেকে এক মাস, পেঁয়াজ ও রসুন চার থেকে ছয় মাস এবং আদা সাত থেকে আট মাস সংরক্ষণ করা যাবে বলে জানান মনজুর হোসেন।

এর আগে ঈশ্বরদীর কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ষ্টল ঘুরে দেখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আতিউর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক ও কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান ময়েজ, কৃষি ডায়েরী ভুক্ত কুষক কপি বারী, পাম মঞ্জুর, কৃষাণী বেলী বেগম, পান্না হোসেন, আব্দুল হাই, ফরিদ হরিণ, আবু তাহের প্রমুখ।

(এসকেকে/এসসি/ডিসেম্বর০৫,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test