E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝালকাঠি হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু !

২০১৪ ডিসেম্বর ০৭ ০৯:৩২:০৫
ঝালকাঠি হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু !

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠি হাসপাতালে চিকিৎসকের কর্তব্যে অবহেলায় রোগী লতিমুন নেছা (৭০) এর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। লতিমুন নেছা সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা গ্রামের মৃত. আবুতালেব খানের স্ত্রী।

মৃত রোগীর জামাতা মোস্তফা হাওলাদার জানান, পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভাব হওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬ টায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মহিলা র্সাজারি ওর্য়াডের ১২ নং বেডে ভর্তি করা হয় লতিমুন নেছাকে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আর.এম.ও মানষ কৃষ্ণ কুন্ড আল্ট্রান্সোগ্রাম করার পরামর্শ লিখে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চলে যান। এরপর আর তিনি বা হাসপাতালের কোন চিকিৎসক রোগী দেখতে ওয়ার্ডে আসেননি বলে অভিযোগ করেছে রোগী স্বজনরা ।

এমনকি নার্সরা ও সকাল থেকে একবার ওই বেডে গিয়ে রোগীর খোঁজ খবর নেয়নি বলে জানিয়েছে। তারা রোগীর অবস্থা অবনতির কথা কর্তব্যরত নার্সদের জানালে, তারা বলেছে আলট্রান্সোগ্রাম রিপোর্টের পর আবাসিক চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা দিবেন। আন্ট্রান্সোগ্রাম করার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক রেডিওলোজিষ্ট ডা. জহিরুল ইসলামের কাছে হাসপাতালে আল্ট্রান্সোগ্রাম করাতে গেলে তিনি বলেন-তার সহকারী নেই ”পেটে ব্যাথায় রোগী মরবেনা” পরে আসেন, বেশী জরুরী লাগলে- হাসপাতালের পার্শ্বের একটি প্রাইভেট ডায়াগোনেষ্টিক সেন্টারে গিয়ে আল্ট্রান্সোগ্রাম করে আসেন ! হাসপাতালের বেডে দীর্ঘ ১২ ঘন্টা মুমূর্ষ রোগী লতিমুন নেছার ডাক-চিৎকারেও মন গলেনি কমিশন বানিজ্যের চিকিৎসকদের। এ দৃশ্য দেখার জন্য জামাতা মোস্তফা হাওলাদার দুপুর থেকে অনেক সাংবাদিককে ফোন করেন। অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় রোগী লতিমুন নেছার মৃত্যু হলে রাতে তিনি আবারও সাংবাদিকদের কাছে ফোন করে জানান ”আপনারা তো কাজে ব্যস্ত-এখন আমার মায়ের লাশটা দেখে যান” ! অমানবিক এ হৃদয় বিদারক ঘটনা দেখে হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে আর.এম.ও এবং অভিযুক্ত রেডিওলোজিষ্ট ডা. জহিরুল ইসলাম গা’ডাকা দেয়।

পরিস্থিতি নিয়স্ত্রনে আনতে রাতে সিভিল সার্জেন বিনয় কৃষ্ণ হাসপাতালে এলে সকল রোগী ও স্বজনদের তোপের মূখে পড়েন তিনি। রোগীরা তার কাছে সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আল্ট্রান্সোগ্রাম করার চিকিৎসক জহিরুল হক অধিকাংশ সময় হাসপাতালে থাকেন না। হাসপাতালের পাশ্ববর্তী বানী ডায়াগোনেষ্টিক, মমতাজ ডায়াগোনেষ্টিক, পপুলার ডায়াগোনেষ্টিক, সেবা ডায়াগোনেষ্টিক সেন্টারে আল্ট্রান্সোগ্রাম ই,সি,জি, করার কাজে ব্যস্ত থাকেন।

নাম প্রকাশ নাকরার শর্তে হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, কমিশন বানিজ্যে সকল ডাক্তারের সেরা ডা.জহিরুল ইসলাম তার চাহিদা প্রচুর। একাই ঝালকাঠি শহরের সবকটি ডায়াগোনেষ্টিক সেন্টারের কাজ করেন। কমিশন বানিজ্যে প্রতিদিন আয় করেন হাজার-হাজার টাকা। সরকারী চাকুরির কারনে হাসপাতালে হাজিরা দিয়েই প্রতিদিন ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট ডায়াগোনেষ্টিক সেন্টারে। ঝালকাঠি হাসপাতাল থেকে তাকে অন্যত্র বদলী করা হলেও অর্থের জোরে একাধিকবার তিনি সদর হাসপাতালে চাকুরীতে যোগদান করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।

চিকিৎসকের কর্তব্যে অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ খন্ডনকরে আর.এম.ও মানষ কৃষ্ণ কুন্ড বলেন, ‘ আমি ওই রোগী দেখে তাকে আন্ট্রান্সোগ্রাম করা জন্য বলি। কিন্তু আন্ট্রান্সোগ্রাম করার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক রেডিওলোজিষ্ট ডা. জহিরুল ইসলাম কি কারনে তা করেননি এটা আমার জানা নেই।

সিভিল সার্জেন বিনয় কৃষ্ণ বলেন, ‘ হাসপাতালে চিকিৎসকের কর্তব্যে অবহেলায় রোগী মৃত্যু খবরটি দু:খ জনক । এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে দোষী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তিনি মৃত’রোগী লতিমুন নেছার স্বজনদের শান্তনা -সমবেদনা জানিয়ে মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে দাফন দেয়ার অনুরোধ জানান।

(এএম/এসসি/ডিসেম্বর০৭'২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test