E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দল এখন সুন্দরবনে

২০১৪ ডিসেম্বর ২২ ১৮:৫৪:২৯
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দল এখন সুন্দরবনে

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবিতে পরিবেশ বিপর্যয়ের সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষে বিএনপির সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি সোমবার দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।

কমিটির আহবায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মনা, বাগেরহাট জেলা সভাপতি এমএ সালাম ও পরিবেশ সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থল শ্যালা নদীর মৃগমারীসহ ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন ঘুরে দেখেন। এর আগে প্রতিনিধি দলটি ডাকরা পয়েন্টে ঘষিয়াখালী-মংলা আর্ন্তজতিক নৌ প্রটোকল রুটের খনন কাজ পরির্দশন করেন।

খনন কাজের ধীর গতি দেখে প্রতিনিধি দল চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এর পর প্রতিনিধি দলটি সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশন করেন। পরির্দশন শেষে তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে অয়েল ট্যাংকর ডুবির পর বনের জীব বৈচিত্র নিয়ে যেখানে জাতীসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশ সরকার দায়িত্ব জ্ঞানহীনের মতো আচরন করেছে। সুন্দরবন সরকারের একার সম্পদ নয়।

এটা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের ৫ সদস্যের টিম গত এক সপ্তাহ ধরে সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় কাজ করেছে। সোমবার আমাদের এ তদন্তদলের সকলেই সুন্দরবনের প্রায় ৩০কিলোমিটার এলাকা নদী পথে প্রদর্শন করেছি। কোথাও প্রাণের স্পন্দন খুজে পাইনি নদীতে দেখা যায়নি কোন ডলফিন চোখে পড়েনি কোন জলজ প্রাণী। তেল নিয়ে ডুবে যাওযা কার্গোটির ছিলনা কোন ফিটনেস, ছিলনা সরকারের কোন অনুমোদন। সুন্দরবনের নদী খালে যে তেল ছড়িয়ে পড়েছে তার অপসারনের কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। বিএনপির এ তদন্ত টিমের অণ্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মজ্ঞু, বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম মনা, সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম, পরিবেশ সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরী।

বিএনপি নেতা হাফিজ বলেন, অয়েল ট্যাংকার ডুরিব ঘটনায় সুন্দরনের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপরুণীয়। এরপরও সরকার সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে রামপালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ বন্ধ না করে তবে তাহলে অচিরেই সুন্দরবনের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। যেখানে ভারত সরকার তাদের পরিবেশের ক্ষতির কথা বুঝতে পেরে এনটিপিসিকে সেখানে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের অনুমতিই দেয়নি। সেখানে বাংলাদেশ সরকার কার স্বার্থে সুন্দরবনের অতি নিকটে এই ক্ষতিকর তার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করছে এটা খুবই দু:খ জনক। সরকারি দলের লোকজন সুন্দরবনের ভিতরে নিয়মনীতি ভঙ্গ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে যা সুন্দরবনকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সুন্দরবনের সকল প্রকার পরিবেশ দুষন বন্ধ করা হবে। হাফিজ উদ্দিন বলেন সুন্দরবনের যে ক্ষতি হবার হয়ে গেছে এখন সুন্দরবন রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৫ ডিসেম্বর দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া’র কাছে জমা দিবেন বলে জানান তিনি।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল এখন সুন্দরবনে
সংকটাপন্ন ওয়ার্ল্ড হ্যরিটেজ সুন্দরবনের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রতিনিধি দল সোমবার বিকালে মংলায় এসে পৌচেছে। এতথ্য নিশ্চিত করেছেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও আমীর হোসাইন চৌধুরী। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ৭টি দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ২৫ সদস্যের এদলটি গত ৯ ডিসেম্বর ভোরে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্রাংকার ডুবিতে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল নি:সরণে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করবে। পর্যবেক্ষক টিমটি তাদের কাযর্ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ চাঁদপাই বন্যপ্রানী অভায়ারণ্যসহ শ্যালা নদী হতে হরিণটানা খাল পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকা পর্যবেক্ষন করবে। বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এ্যামোলিয়া ওয়ালট্রোমের নেতৃত্বে জাতিসংঘের ২৫ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি ৪-৫ দিন মংলার পর্যটন হোটেল পশুরে থেকে সরেজমিন পরির্দশন ও নানা বিষয় নিয়ে পরিক্ষা-নিরিক্ষা করবেন বলে জানান ডিএফও। সোমবার বিকেলে পলিটিং হোম নামের একটি জলযানে করে বিশেষজ্ঞ দলটি সরেজমিনে তাদের কাজ শুরু করেছেন। সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্যের দীর্ঘ মেয়াদে কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিররূপন, ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে করনিয় ও কতো দিন সময়ের লাগবে,- সেসব বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে গ্রহন করবে বন বিভাগ। তিনি আরও জানান, সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হওযায় এবিষয়ে কোন ঝুঁকি নিতে নারাজ বন বিভাগ।

আন্তর্জাতিক নৌরুটটি যে কারনে বিকল
ঘষিয়াখালী -মংলা বন্দর এ চ্যনেলের নৌরুটটির সাথে ৪৫টি ছোট বড় নদী খাল রয়েছে । এই খালের সাথে রয়েছে আরও শাখা-প্রশাখা ৯৭টি খাল। সবমিলিয়ে বর্তমানে এ নৌরুটের সাথে সংযুক্ত নদী খালের সংখ্য মোট ১৪২টি । আর প্রায় দেড়শত নদী খালের প্রায় সবকটি রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চিংড়ী ঘের । একারণে ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধের নীরব ঘাতক হিসাবে এখন পরিচিতি লাভ করেছে চিংড়ী চাষের নামে প্রবাহ নদীখালে অবৈধ বাঁধ ।

প্রবাহ মান খালের বাধ অপসারনে ১১ সদস্যের কমিটি
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে ১৫ ডিসেম্বর বাগেরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো : মাহমুদুর রহমানকে প্রধান করে ১১ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে। একমিটি ইতি মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ৩০ টি ও চুড়ান্ত ভাবে ১৩ টি নদী খালকে চিহ্নিত করেছে। ১৩টি নদী খাল আগামী ২৩ ডিসেম্বর অপসারনের কাজ শুরু করবে বলে নিশ্চিত করেছে একমিটির অন্যতম সদস্য রামপার উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মো: আরিফ । কমিটির অন্য সদস্যরা হলো পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর এর প্রতিনিধি,পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার প্রতিনিধি, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপপরিচারক অভ্যন্তরিন নৌপরিবহন কতৃপক্ষ খুলনা, নির্বাহী কর্মকর্তা রামপাল ও মংলা ।

চিহ্নিত ১৩ টি নদী খাল
রামপালের যে ১৩ টি নদী ও খাল চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলো হলো, পেড়িখালী (পুটিমারী) খাল, তার তলার খার, সিকিরডাঙ্গা, ট্যাপা আলীর খাল, সিকির ডাঙ্গা আমতলার খাল, মান্দার তলা খাল, কুমার খাল, রমজাইপুর খাল, চ্যাটার্জি খাল, ওড়াবুনিয়া খাল, রামপাল খাল, দ্বাড়ার খাল, বাশতলীর খাল, নলবুনিয়া খাল।

(একে/এএস/ডিসম্বের ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test