E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সুন্দরবনে মাছ আহরণ শুরু

২০১৪ ডিসেম্বর ২৯ ১৫:৪৬:২৭
সুন্দরবনে মাছ আহরণ শুরু

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে অয়েল ট্যাঙ্কার ডুবির পর আবারও ফিরছে জেলেরা মাছ আহরণে। জীবন-জীবীকার তাগিদে তারা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে জাল ও বর্শি দিয়ে মাছ আহরণ শুরু করছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসাইন চৌধুরী রোববার বিকেলে এই প্রতিবেদককে বলেন, তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর শেলা ও পশুর নদীর উপর নির্ভরশীল জেলেরা মাছ শিকার বন্ধ রেখেছিল। বর্তমানে নদী স্বাভাবিক হওয়ায় পুনরায় জেলেরা মাছ আহরণ শুরু করেছে। বন সংলগ্ন ওই এলাকার জেলেরা আগের মত বন বিভাগের অফিস থেকে পাশ-পারমিট নিয়ে মাছ ধরে তাদের জীবন জীবীকা নির্বাহ করছে।

সুন্দরবন সংলগ্ন জয়মনি গ্রামের বাসিন্দা জেলে আব্দুর জব্বার বলেন, বেশ কিছুদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে আবার শেলা নদীসহ বিভিন্ন খালে মাছ শিকার শুরু করিছি। আমরা শেলা নদীতে কয়েকশ জেলে মাছ শিকার করছি। আশা করি মাছ আগের মত পাব। ট্যাঙ্কার ডুবির পর আমরা নদী থেকে জাল তুলে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম।

একই গ্রামের হালিম হাওলাদার বলেন, তেলের কারনে নেটজাল পেতে আমি বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা সংগ্রহ করতে পারেনি। এখন নেটজাল দিয়ে নদীতে মাছ আহরণ করছি। বর্তমান আমাদের অবস্থা ভাল ভাবে চলবে। চিলা ইউনিয়ন পরিষদের মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমার ওয়ার্ডে চার থেকে পাঁচশ পরিবার সুন্দরবনের নদীখালে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তেলে ট্যাঙ্কার ডুবির কারনে কয়েকেদিন ওইসব জেলে পরিবার নদীখালে মাছ শিকার করতে পারেনি। বর্তমানে জেলেরা আবার মাছ শিকার করা শুরু করেছে। তবে মাছ আগের মত পাবে কিনা ফিরে আসলে জানা যাবে।

সুন্দরবন বাঁচিয়ে রাখার আকুতি
সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো। সিডর, আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজের জীবন দিয়ে আমাদের রক্ষা করে। তাই আসুন নিজেদের স্বার্থে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করি”। সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখার আকুতি জানিয়েছেন বন বিশেষজ্ঞরা। প্রাকৃতিক সৃষ্টি সুন্দরবন উর্বর মাটি ও নোনা পানির মহত্ত্বে গড়া সুন্দরবন। একদিকে অথৈ জলরাশি, অপরদিকে নির্মল সবুজের খেলা। সুন্দরবনের সৌন্দর্যের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। ১৯১১ সালে সুন্দরবনের মোট আয়তন ছিল প্রায় ১৭ হাজার বর্গ কিমি. এবং বর্তমানে সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিমি.। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৬০১৭ বর্গ কিমি. ও বাকিটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিবেচনায় সুন্দরবনের অংশ বিশেষকে ১৯৯২ সালের ২১ মে ‘রামসার এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন আর মানুষের আগ্রাসনে সুন্দরবন এখন ধ্বংসের সম্মুখীন। বাংলাদেশের দক্ষিণের ৫টি জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনার প্রায় ১৭টি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে তাদের জীবন-জীবিকার জন্য সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ফসলাদি না হওয়া এবং নদী ভরাট হওয়া। বাগেরহাটের রামপাল-মংলায় এখন ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টি ইউনিয়নে ধান চাষ হচ্ছে না।২০০০ সালের আগে এখানে প্রতিবিঘা জমিতে ২০ থেকে ৩০ মণ ধান উৎপাদন হতো। ঠিক একইভাবে নদী ভরাট হওয়ার কারণে এখানকার জেলে, মাঝিরা বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সুন্দরবনমুখী হচ্ছে। তারা সুন্দরবন থেকে মাছ, মাছের পোনা, মধু ও কাঠ সংগ্রহ করে জীবন চালাচ্ছে।

বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। ৪ নভেম্বর ২০১২ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ মালিকানায় প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে এবং রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড’ নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের জন্য রামপালের সাপমারী-কাটাখালী মৌজায় ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে। যা সুন্দরবনের পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০ কিমি. দূরে অবস্থিত। এনিয়ে পরিবেশবাদী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. ফরিদুল ইসলামের মতে, রামপালে কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ২৩ ধরনের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। এরমধ্যে,সুন্দরবনের স্বাভাবিক চরিত্র বিনষ্ট হবে, তৈরি হবে অসংখ্য কয়লা ডিপো, শুরু হবে গাছ কাটা, বনে আগুন লাগানো এবং বাঘ, হরিণ ও কুমির ধরা। কয়লা পোড়া সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাইক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন প্রভৃতি সুন্দরবনের জীবমন্ডল ও বায়ুমন্ডলকে দূষিত করবে। সালফার ডাইক্সাইড ও কার্বন যৌগসমূহ থেকে সৃষ্ট গ্রিন হাউস গ্যাস বনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটাবে।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test