E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবরোধে বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাদা মাছের বাজারে ধ্বস, হতাশায় ক্রেতা-বিক্রেতা

২০১৫ জানুয়ারি ১২ ১২:৩৪:৪২
অবরোধে বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাদা মাছের বাজারে ধ্বস, হতাশায় ক্রেতা-বিক্রেতা

বাগেরহাট প্রতিনিধি:বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের কারনে বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাদা মাছের বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ফলে পাইকারী সাদা মাছের আড়ৎ এ মাছের আমদানি অস্বাভাবিকহারে কমে যাওয়ায় বেচাকেনা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।

প্রতিদিন এই দুটি মৎস্য আড়তে অন্তত দুইশ টন মাছ কেনাবেচা হয়ে থাকে। আর এখান থেকে এই মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। অবরোধের ফলে পরিবহণ সংকটের কারনে তা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে এই মৎস্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত চাষী ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মূখে পড়তে হচ্ছে। অবিলম্বে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের রক্ষা করতে বিএনপির ডাকা অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববার দুপুরে দক্ষিণাঞ্চলের সাদা মাছের সবচেয়ে বড় বিক্রয় কেন্দ্র বাগেরহাট সদর উপজেলার বারাকপুর এবং ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী ও চাষীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এই আড়ৎ থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মোকামে মাছ রপ্তানী হয়ে থাকে। কিন্তু কয়েক দিনের টানা অবরোধের কারনে এই মৎস্য সেক্টরে ধ্বস নেমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার বারাকপুর মৎস্য আড়তে প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি টাকা মাছ বেচাকেনা হয়ে থাকে। বিএনপি’র অবরোধ শুরু হওয়ার পর তা ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতারা। অবরোধের কারনে মাছের নায্যমূল্য না পওয়ার আশংকায় অনেক চাষী তার খামার থেকে মৎস্য শিকার বন্ধ রেখেছেন। এই কারনে আড়তে মাছের আমদানি অস্বাভাবিকহারে কমে গেছে। অবরোধের কারনে মানুষের ভেতরে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবাই এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।

এদিকে সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ির দাম বাজারে অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় বাগেরহাটের চিংড়ি চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাজারে বাগদা চিংড়ির দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত কমেছে। একদিকে বাজারে বাগদা চিংড়ির দাম কমে গেছে অন্যদিকে চাষীদের ডিপো মালিকদের কাছে চিংড়ি বাকিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে এই চিংড়ির উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার চাষী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

বর্তমানে বড় রুই মাছের মন ১৫-১৬ হাজার টাকা, মাঝারী ৭-৮ হাজার টাকা ও ছোট ৪- থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের চেয়ে বর্তমানে কমপক্ষে প্রতি মনে ২-৩ হাজার টাকা কম বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

চলতি মৌসুমে বাগদা চিংড়ির বাজার দর (বর্তমানে ১৫ গ্রেড ৮০০ টাকা, যা ছিল ১২০০ টাকা), ২০ গ্রেড ৭০০ টাকা যা আগে ছিল ১০০০ টাকা, ৩০ গ্রেড ৬০০ টাকা যা আগে ছিল ৮৫০ টাকা, ৪৪ গ্রেড ৪০০ টাকা যা আগে ছিল ৬০০ টাকা এবং ৬৬ গ্রেড ২০০ টাকা যা আগে ছিল ৪৫০ টাকা)।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যদিকে পরিবহণ নিয়মিত না চলাচল করায় এখানে বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাদা মাছ বাজারজাত হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের এই আড়ৎ দুটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

সাদামাছ চাষি সালাম ও আজগর বলেন, ‘বর্তমানে ঘের সেচ দিয়ে মাছ ধারার সময়। আমরা এখন মাছ কম ধরছি। মাছের দাম কমে গেছে। অবরোধের কারনে মাছ নিয়ে মার্কেটে আসতে ভয় লাগে। নিরাপত্তা নেই। যদি কেউ মাছের গাড়ী ভাংচুর করে এই ভয়তে মাছ কম নিয়ে আসছি।
মাছ ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন,‘গত দুদিনে চার হাজার টাকার মাছ কিনে পনেরশ টাকা লোকসান হইছে। এই অবরোধের মধ্যে মাছ কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।
মামা ভাগ্নে মৎস্য আড়ৎ এর সত্ত্বাধিকারী আবুল কালাম বলেন, টানা অবরোধের কারনে মোকামে ৫-৬ লাখ টাকা আটকে রয়েছে। বর্তমানে বেচা বিক্রি কম। এই লোকসান কাঠিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। আমরা ব্যবসায়ীরা অবরোধ প্রত্যাহারের দাবী জানাই।

বাগেরহাট সদর উপজেলা বারাকপুর মৎস্য আড়ৎ সমিতির সভাপতি সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি টাকা মাছ বেচাকেনা হয়ে থাকে এই মার্কেটে। কিন্তু বিএনপি’র ডাকা অনির্ষ্টিকালের অবরোধ শুরু হওয়ার পর তা ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। একারনে ব্যবসায়ী ও মৎস্য চাষিরা চরম ক্ষতিগ্রস্থদের শিকার হচ্ছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা কষ্টকর বলে দাবী করেন ওই ব্যবসায়ী নেতা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামের চিংড়ি চাষী আব্দুস সাত্তার বলেন, এবছর আমি কুড়ি বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করেছি। মৌসুমের শুরুতে বাগদা চিংড়ি নগদ টাকায় ভাল দাম পেয়েছি। গত তিন মাস ধরে বাগদা চিংড়ির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। তার পর আবার অবরোধ। বাকিতে বিক্রি করা এই টাকা কবে নাগাদ পাব তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছি।

বাগেরহাট বারাকপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, বারাকপুর মৎস্য আড়ৎ কেন্দ্রে ২২টি মাছ বেচাকেনার ডিপো রয়েছে। বর্তমানে অবরোধ চলাকালে এই সব ডিপো মালিকরা আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতির শিকার পড়েছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সকল রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।



(একে/এসসি/জানুয়ারি ১২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test