E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁর পোরশায় মাটি খুঁড়ে পাওয়া যাচ্ছে গুপ্তধন!

২০১৫ জানুয়ারি ১৮ ২০:৫৩:৩১
নওগাঁর পোরশায় মাটি খুঁড়ে পাওয়া যাচ্ছে গুপ্তধন!

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর পোরশার মাটি যেন সোনার চেয়েও মূল্যবান হয়ে গেছে। অমূলক এ কথাটির প্রমাণ মিলেছে উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের পরেই পূনর্ভবা নদীর টেকঠা ভিঁটার মাটিতে। নদীর পূর্ব পাড় প্রায় ৩ কিলোমিটারের মধ্যে যে কোন স্থান খনন করলেই মিলছে নানান ধরনের মূল্যবান গুপ্তধন(!)।

আর এভাবে প্রায় দেড়/দু’ বছর আগে থেকে প্রায় প্রতিদিন লোকজন সেখানে খেয়ে না খেয়ে পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে মাটি খনন করছেন। এদিকে উপজেলার বহুল এ আলোচিত ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসন জানে বলে দাবি করেন। এলাকাবাািস দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে গুপ্ত সম্পদ উত্তোলন বন্ধসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সরজমিনে জানা গেছে, দুই বছর আগে কোন এক লোক টেকঠা নামক ভিঁটা এলাকায় মাটি কাটতে গিয়ে কিছু মূল্যবান সম্পদ পান। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে শুরু হয় শতশত লোকের মাটি খনন তৎপরতা। সে থেকে প্রতিদিন সকাল হলেই স্থানীয়রা যে যার মত কোদাল, খুনতি, শাবল দিয়ে মাটি খোঁড়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রায় চার থেকে পাঁচ ফুট মাটি খুড়েলেই নিচে পাওয়া যাচ্ছে ছোট বড় অনেক রকমের পাথরসহ মূল্যবান সম্পদ। স্বর্ণালঙ্কার, চেন, পুরনো পয়সা, তাবিজ, তোসবি, পাথর, রূপার কলম, ছোট-বল আকারের বস্তু ইত্যাদি।
এগুলোর একেকটির রং আবার একেক রকম। কোনটা লাল, কাল, সাদা, কমলা, সবুজ আবার কতগুলো গোলাপী রং এর। এসব স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি না করে নিজের কাছে রেখে দেয়া হয়। তবে কোন পাথর ছোট কিংবা বড় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেয়া হয়। ক্রেতারা সেখানে উপস্থিত থাকেন সর্বদাই। একেকটি পাথর আনুমানিক ১০ গ্রাম হলে, তার মূল্য প্রায় ১৫হাজার টাকা। স্থানীয়রা বলছেন, সম্পদের গুণগত মান অনুযায়ী এখানে বিশ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় আমির উদ্দিন বাবু জানান, ওই গ্রামটিতে প্রায় ৫০বছর আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করত। সেখানে একটি বড় কালি মন্দির ছিল। মন্দিরে নিয়মিত পূজা-অর্চনা করা হতো। হয়ত এই মন্দিরকে ঘিরে এখানে হাট-বাজার বসত। দেশ বিভাগের সময় হিন্দুরা ভারতে চলে যায়। তারা হয়ত তাদের মূল্যবান অনেক জিনিসপত্রগুলো নিয়ে যেতে পারেনি। পরে তাদের ঘর-বাড়ি এবং মন্দিরগুলো ভেঙ্গে মূল্যবান জিনিসগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়।

এলাকাবাসি হুমায়ূন রেজা জানান, প্রায় ৬৫০বছর আগে সম্রাট শের শাহ্‘র আমলে সমগ্র ভারতবর্ষ ৪৭টি পরগনায় বিভক্ত ছিল। তার মধ্যে একটি পরগনা হলো, পোরশার পার্শে¦র থানা গোমস্তাপুরের রোকনপুর নামক স্থান। পরে সম্রাট শাহজাহান-এর ছেলে সুজাউদ্দীনের (সুজার) আমলে সুদূর রাজমহল থেকে রোকনপুর পর্যন্ত সামুদ্রিক এলাকা ছিল। তখন বাংলার সুবাদার ছিলেন সুজাউদ্দিন। সে সময়ে নৌকা বা জাহাজ যোগে বহু মালামাল এখানে আমদানি ও রপ্তানি করা হতো। হয়ত কোন দুর্ঘটনায় সম্রাটদের সম্পদগুলো এ মন্দিরের পাশে মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়।

নদীর যে এলাকায় পাথর উঠছে ঠিক সেই জায়গায় হিন্দুদের কালির মন্দির ছিল। যার প্রমাণ স্বরূপ কালিদহ বলে একটি কূপ আজও বিদ্যমান আছে নদীতে। সেখানে তারা পূজা শেষে “কালি-মায়ের” মূর্তি বিসর্জন দিতেন।
ইতিহাসে দেখা যায়, আগের হিন্দুরা তাদের ধন-রতœ সহ মূল্যবান দ্রব্যাদি তাদের মন্দিরে গচ্ছিত রাখতো। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এখানের অনেক জমিদার এবং সম্পদশালী বড় বড় বিত্তশালী হিন্দুরা সবাই ভারতে চলে যান। সর্বোপরি বলা যায়, এ এলাকা ছিল বড় বড় হিন্দু ও রাজাদের আশ্রয়স্থল। কাজেই বহু মূল্যবান ধনরত্ন মাটির নিচে পড়ে থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
পার্শ্ববতী গ্রাম বিষ্ণুপুর থেকে আসা মনিরুল ইসলাম জানান, গত তিন দিন থেকে তিনি মাটি খুড়ছেন। সেখানে একটি জালিবল পেয়েছেন তিনি। তা বিক্রি করেছেন ৬ হাজার টাকায়।

নিতপুর থেকে আসা রুস্তম আলী চকচকে কাঁচের টুকরোর মত একটা বস্তু পেয়েছেন। তা তিন’শ টাকা দাম বলেছে। এছাড়া জহুরুল ইসলাম দুটি বোতাম ও একটি মার্বেল পেয়েছেন। যা ৫’শ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় নজরুল ইসলাম জানান, একটি জালি পোটল ও একটি ফুটবল ৫৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। মোঃ তোফায়েল নামে এক যুবক জানান, সাত দিন খননেন পর বৃহস্পতিবার দুপূরে একটি গোলাপি বল পেয়েছে সে। সেখানে থাকা পাচারকারি তার দেড়শ’ টাকা দাম করেছেন। তার দাম মনমত না হওয়ায় সে তা বিক্রি করেনি। পাচারকারী মোঃ সাদু জানায়, পয়সা, তাবিজ, তোসবি, পাথর, রূপার কলম, ছোট বল, বড় ধরনের বল, অঁকার রং (লাল, কাল, সাদা, কমলা, সবুজ) অনুয়ায়ী একেকটির গুণগত মান অনুযায়ী দাম দিয়ে কিনে নেয়া হয়। এরপর সংবাদ দিলে বাইরের এলাকা থেকে বড়বড় লোক এসে তারা সেগুলো তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায়। তবে পাথরসহ বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদগুলো উত্তোলনকারীরা বিক্রি করলেও স্বর্ণালঙ্কার কেউ বিক্রি করেন না। এলাকাবাসি রইচ উদ্দিন জানান, গত দুই বছর থেকে শতশত সাধারণ মানুষ মাটি খনন করে মাটির নিচে থাকা মূল্যবান সম্পদগুলো তুলে নিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এগুলো উত্তোলন বন্ধে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তিনি আরো বলেন, মূল্যবান সম্পদগুলো উত্তোলন বন্ধ করে জড়িতদে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। সরকারী উদ্যোগে সেখানে খনন করলে মূল্যবান অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। এব্যাপারে পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন শামীম জানান, এ বিষয়টা তার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে উদ্ধতন কর্মকর্তা, প্রতœতত্ত অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।

(বিএম/এসসি/জানুয়ারি১৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test