E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শরীয়তপুরে টমেটো চাষীদের মাথায় হাত

২০১৫ জানুয়ারি ২৫ ১৪:১৬:৪৭
শরীয়তপুরে টমেটো চাষীদের মাথায় হাত

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : ভারত থেকে আমদানিকৃত পুরনো ও ভাইরাস আক্রান্ত বীজ ব্যবহার করে এবছর শরীয়তপুরে হাজার হাজার টমেটো চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছে ফল ধরার সময়েই আক্রান্ত হয় শত শত বিঘা জমির টমেটো গাছ। ফলে এবছর মারাত্মকভাবে ফলন বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে হাজার হাজার কৃষক পরেছে লোকসানে। কয়েক কোটি টাকা তাদের হাতছারা হয়ে গেছে।

শরীয়তপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে টমেটো আবাদ হয় প্রতি বছরই। শীত কালিন সবজি হিবেবে জেলার জাজিরা উপজেলা টমেটো আবাদের জন্য প্রসিদ্ধ। রাজশাহির গোদাগারির পরেই টমেটো আবাদে জাজিরার অবস্থান দেশের শীর্ষে। শীত মৌসুমে এখানকার প্রধার অর্থকরি ফসলই হচ্ছে টমেটো । শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জাজিরা উপজেলাতেই হয়েছে প্রায় ৫ শত হেক্টরে। জেলায় এবছর প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। কিন্তু এ বছর ভাইরাস আক্রমনের কারনে ফলন হবে মাত্র অর্ধেক এবং কৃষকের ঘরে মূল্যও যাবে অন্তত ৪ কোটি টাকা কম।

শরীয়তপুরের চাষিরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ঢাকার ইউনাইটেড কোম্পানীর সর্বরাহকৃত ভারতের হাইব্রীড হিরো প্লাস বীজ ব্যবহার করে থাকেন। এছারাও সোনালী, সবল, মিন্টু সুপার, কনক ও চিরঞ্জীব বীজ আবাদ করে। চলতি মৌসুমে কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করে হিরো প্লাস ও চিরঞ্জিব বীজ ব্যবহার করে ক্ষতির মুখে পরেছে। । সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এ এলাকায় টমেটোর আবাদ চলে। স্বাভাবিকভাবে টমেটো তোলার কথা জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে। কিন্তু বেশী মুনাফার আশায় তারা ৪/৫ সপ্তাহ আগে থেকেই অপরিপক্ক টমেটো তুলে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে বাজারজাত শুরু করে। প্রতি বিঘা জমিতে টমেটো আবাদে চাষিদের খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা । এক বিঘা জমিতে ফলন হবার কথা কমপক্ষে ১ শত ২০ মন টমেটো। এবছর ফলন হচ্ছে মাত্র ৫০-৬০ মন করে।

কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ভাইরাস আক্রান্ত বীজ ব্যবহার, মৌসুমের শুরুতে ঘন কুয়াশা, তীব্র ঠান্ডা ও বাতাসের কারনে গাছে ফল ধরার সময় টমেটো গাছগুলো ক্ষেতের পর ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারনে অন্তত আড়াই শত হেক্টর জমির টমেটো ভেঙ্গে ফেলে চাষিরা ধনে ও কালোজিরার আবাদ করেছে।

জাজিরার জয়নগর ইউনিয়নের টমোটো চাষি ইসমাইল খান, খলিল খান, মান্নান মোড়ল, আজহার শিকদার, ইসহাক ফকির, সেনেরচর ইউনিয়নের ইনসান মাদবর, আবুল খায়ের সরদার, আলাউদ্দিন শেখ, আবু কালাম মাদবর, মূলনা ইউনিয়নের দুলাল মোল্যা, সেলিম মোল্যা ও সিরাজুল ইসলাম মাদবর বলেন, আমরা সব সময় আগাম টমেটো আবাদ করি। দেশের যে কোন অঞ্চলের আগে ঢাকা শহরের বাসিন্দারা এবং প্রবাসীরা জাজিরার টমেটো হাতে পায়। আমরা প্রতি বছরই অনেক লাভের মুখ দেখি। এবছর কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর খপ্পরে পরে ভারতের খারাপ বীজ রোপন করে সর্বশান্ত হয়ে গেছি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন বলেন, এবছর মাঠে চাষিরা টমেটো মৌসুম শুরু করার আগে থেকেই আমরা তাদের নিয়ে সচেতনতামূলক অনেকগুলো সভা করে তাদের শতর্ক করে দিয়েছিলাম। তার পরেও তারা কম টাকায় পুরোনো বীজ কিনে প্রতারতি হয়েছে। ক্ষেতে ভাইরাস আক্রান্ত হবার পরে অনেক ব্যবস্থা নিয়েও ফলন বাড়ানো সম্ভন হয়নি। তাই অনেক কৃষককে পরামর্শ দিয়েছি আক্রান্তকৃত টমোটোর মাঠ ভেঙ্গে অন্যান্য রবি ফসল করার জন্য।

জাজিরা উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, যে সকল কৃষক ভারতীয় হিরো প্লাস ও ঢাকার ইউনাইটেড কোম্পানীর সরবরাহকৃত সোনালী ও চিরঞ্জিব বীজ আবাদ করেছে তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাইরাজ আক্রান্ত বীজের কারনে টমোটোর মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমাদের গোচরিভূত হওয়ার সাথে সাথে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দেয়ায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। আগামীতে কৃষকরা যাতে করে কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট এর পরীক্ষিত বীজ ব্যতিত অন্য কোন বীজ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকে গুরুত্ব দেয়া হবে।

(কেএনই/পিবি/জানুয়ারি ২৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test