E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুষ্টিয়ার ১০হাজার পরিবহন শ্রমিক পরিবারে চাপা কান্না

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৫:২৭:৫৪
কুষ্টিয়ার ১০হাজার পরিবহন শ্রমিক পরিবারে চাপা কান্না

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : টানা অবরোধে পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আয় না থাকলেও ব্যাংকের মোটা অংকের ঋণের সুদ টানতে হচ্ছে মালিকদের আর শ্রমিকদের দিন আনা দিন খায় পরিবারে আহাজারি চলছে।

অনেক শ্রমিক ধার দেনায় চলছে আর বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পেরে পরিবারের লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। জেলার পরিবহন সেক্টরের সাথে ওৎপোতভাবে জড়িত মালিক, শ্রমিক এবং পরিবহনের সরঞ্জাম ব্যবসায়ীরা পড়েছে বিপাকে। পরিবহন বন্ধ থাকায় সকলের আয় রোজগার একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ১মাস সময় ধরে এসব পরিবারের সদস্যদের মাঝে চাপা কান্না চলছে। কবে অবরোধ বন্ধ হবে আর কবে পরিবহনের গাড়ি চলাচল করবে তখন তাদের আয় রোজগারের ব্যবস্থা হবে এ কথা ভেবেই যেন সকলে মহাসংকটে পড়েছে। ৬ জানুয়ারী থেকে কুষ্টিয়ার সাথে সকল জেলার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে এ জেলার ৪ শতাধিক গাড়ির মালিকেরা কোন আয় তো দুরের কথা মোটা অংকের ব্যাংক ঋণ নিয়ে কেনা বাসের দাম চড়া সুদে শোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া বাস রক্ষনাবেক্ষনের খরচ জোগাতে হচ্ছে। জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক এস,এম রেজাউল ইসলাম বাবলু জানান, জেলার ৪ শতাধিক মালিক চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। পুরো একটি মাস কোন আয় না থাকলে কি হতে পারে তা ভেবে দেখতে পারেন। প্রতিদিন জেলার পরিবহন সেক্টর থেকে ৩/৪ কোটি টাকার লেনদেন হত। অথচ এখন শুধুই খরচ আর মালিকদের ঋণের টাকা শোধ দিতে যেয়ে কি কঠিন বাস্তবতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে তা কাউকে বোঝানো যাবে না। তিনি বলেন, অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবহন সেক্টর। এই শীত মৌসুমকে সামনে রেখে পরিবহন মালিকদের বেশি আয়ের সম্ভাবনা থাকে। এবার তা থেকেও পুরো বঞ্চিত হয়েছে মালিকেরা। তিনি আরো জানান, সড়কে বাস না চললেও বিপুল সংখ্যক ষ্টাফদের বেতন ও ভাতাদি দিতে হবে। কিছু দিন থেকে ঝুঁকি নিয়ে বেশ কয়েক দিন বাস ঢাকা অভিমুখে চলাচল করলেও যাত্রী কম হওয়ায় লোকশান গুনছে মালিকেরা। সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে রয়েছে পরিবহন শ্রমিকেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের বাড়িতে চলছে চাপা কান্নার রোল। একজন পরিবহন শ্রমিকের কাজ করলে পারিশ্রমিক আর কাজ না করলে পারিশ্রমিক পাবে না এ অবস্থায় ২৭ দিন কর্ম না থাকলে কি অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। কুষ্টিয়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামান স্মরণ জানান, কুষ্টিয়ার পরিবহন শ্রমিক প্রায় ১০হাজার। এদের মধ্যে ৮হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার পরিবহনের উপর নির্ভরশীল। তিনি জানান, একজন শ্রমিক কিভাবে এতদিন কর্ম এবং আয় না করে থাকতে পারে? অভাবের তাড়নায় শ্রমিকদের বাড়িতে অশান্তির বেড়াজাল। শ্রমিকদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছে না আবার অনেকের ঘরে খাবারটুকু জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি জানান, অনেকে ইতিমধ্যে ভিন্ন কাজ করছে সেখানেও কাজের স্বল্পতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
কুষ্টিয়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক কমিটির সদস্য জিললু রহমান জানান, কুষ্টিয়ার মোটর শ্রমিকেরা নিজেদের পুঁজি ভাঙ্গিয়ে এবং ধার দেনায় এতদিন কষ্ট করে চলেছে। অনেকে আবার পাওনাদারের কারনে বাড়িতে থাকছে না। আবার অনেকের পরিবার ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানা যায়। তিনি জানান, জানুয়ারী মাস শেষ ছেলে-মেয়েদের স্কুল ড্রেস, বই খাতা ও স্কুলে ভর্তি খরচ না থাকায় অনেকে স্কুলে ভর্তি করতে পারছে না। পরিবহনের যন্ত্রাংশ বিক্রেতাদের অবস্থা একই রকমের। দোকানের কর্মচারীর বেতন ও পরিবারের সব খরচ মেটাতে হচ্ছে কিন্তু গাড়ি চলাচল না করায় কোন যন্ত্রাংশ কেউ ক্রয় করছে না। বাস চলাচল না করায় বাস টার্মিনাল, মজমপুর গেট ও বিভিন্ন কাউন্টারের সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের আয়ের সবপথই বন্ধ থাকায় তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে মহাকষ্টে দিনতিপাত করছে।
(কেকে/পিবি/ফেব্রুয়ারি ২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test