E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া হলো না ওয়াসিমের’

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ০৪ ১৮:১৫:৪৯
‘মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া হলো না ওয়াসিমের’

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : আমার বড় মেয়ে কেয়া এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী। সোমবার পরীক্ষা শুরু হবার কথা থাকলেও হয়নি। তাই গত বৃহষ্পতিবার ওর বাবা ব্যবসার কাজে কক্সবাজার যায়। ফিরে এসে বুধবারে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় কেয়াকে নিয়ে কেন্দ্রে যাবে। তাই কাজ শেষে সোমবার রাতে ফিরছিল কক্সবাজার থেকে।

পথেই রাজনীতির নির্মম শিকার হয়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় মানুষটি। মেয়েটি তার বাবাকে হারানোর কথা শুনলে হয়তো ওর পরীক্ষায়ই দেয়া হবেনা। তাই ওকে জানতে দেয়া হয়নি বাবার এই পরিণতির কথা। এখন কার সাথে আমার এই মেয়েটি পরীক্ষা দিতে যাবে। কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে বলছিল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সোমবার ভোর রাতে আইকন পরিবহনের যাত্রী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া পাখি ব্যবসায়ী ওয়াসিমের রহমান খানের স্ত্রী কহিনুর বেগম হিরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিন গজারিয়া গ্রামের নজর আলী খানের ছেলে ওয়াসিম রহমান খান (৪০) গত ২৭বছর যাবৎ ঢাকায় থাকেন। ১০ বছর আগে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলায় বিয়ে করে সে। তার ২ মেয়ে ১ ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সুখের সংসার ছিল। বিয়ের আগের থেকেই সে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করতো। ১১ বছর কাজ করার পর গত তিন বছর যাবৎ ঢাকার কাপ্তান বাজারে পাখির ব্যবসা করে আসছিল। মালিবাগ চৌধিরীপাড়া মাটির মসজিদের এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে।

ওয়াসিমের শ্যালক মনির হোসেন জানান, ২ ফেব্রুয়ারি বড় মেয়ে কেয়ার প্রথম পরীক্ষা স্থগিত হবার ঘোষণা শুনার পর ব্যবসার কাজে বৃহস্পতিবার রাতে পাখি সংগহের জন্য কক্সবাজার যায়। বুধবারে মেয়ের বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য সোমবার নাইট কোচে ঢাকায় আসার জন্য গাড়িতে উঠে। রাত ৯ টায় উঠে তার স্ত্রীকে মুঠোফোনে জানান ঢাকায় ফেরার কথা। এরপর মঙ্গলবার সকালে টেলিভিশন খুলে জানতে পারি ভোর রাতে গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। যে সাতজন গাড়ির ভেতরেই পুড়ে মারা গেছে তার মধ্যে ওয়াসিমও ছিল। অপর ছয় জনকে সনাক্ত করা গেলেও তার চেহারা পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ার কারনে ওয়াসিমকে সনাক্ত করা যায়নি। প্যান্টের পকেটে থাকা একটি ব্যসায়ী কার্ড দেখে পুলিশ তাকে সনাক্ত করে।

ওয়াসিমের দ্বিতীয় সন্তান সুমাইয়া আক্তার রিয়া তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে আর ছোট সন্তান জুনায়েদের বয়স মাত্র সাড়ে ৩ বছর। এতিম তিন সন্তানকে নিয়ে স্বামী হারানো হিরার দু চোখে এখন শুধুই অন্ধকার। ওয়াসিমের বাড়িতে বুধবার গিয়ে দেখা গেছে তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় বার বার মূর্ছা যাচ্ছে কহিনুর বেগম হিরা। তাকে শান্তনা দেবার কোন ভাষা কারো নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এ আগুনে পুড়ে মারার অপরাধে ২০ দলীয় জোটের নেত্রী খালেদা জিয়াসহ অপরাধীদেরশাস্তি দাবি হিরা ও তার পরিবারের।

বুধবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকা থেকে পুলিশ প্রহরায় ওয়াসিমের মরদেহ গামের বাড়ি আসে। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষ হয়। ওয়াসিমের মরদেহ বাড়িতে পৌছলে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকা ভারি হয়ে উঠে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে দক্ষিন গজারিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার শত শত লোক অংশগ্রহন করেন। তার জানাজা নামাজ পড়ান স্থানীয় আলেম মাওলানা মতিউর রহমান। জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয় ওয়াসিমকে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস ওয়াসিমের স্ত্রীর হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে তুলে দেন। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রচলিত আইনে অপরাধিদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেন।

(কেএনআই/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test