E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ০৫ ১৬:৩৮:০০
শরীয়তপুরে আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের নড়িয়ায় আধিপত্য সিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে শরীয়তপুরের সহকারী পুলিশ সুপার ও ২ ডিবি সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের সময় শতাধিক কককেট বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০৯ রাউন্ড শর্ট গানের ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। ১৬টি ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারসহ ৫ জনকে আটক করেছে নড়িয়া থানা পুলিশ। নড়িয়া শহর ও আশ পাশের এলাকা জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পৌর এলাকার স্পর্শকাতর স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে।

নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার নড়িয়া উপজেলা সদরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের বাদশা শেখ ও শাহ আলম চৌকিদারের মধ্যে বিবাদমান দুইটি গ্রুপই আলাদা আলাদাভাবে দেশব্যাপী অবরোধ-হরতাল ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিছিল করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করে। পুলিশ শাহআলম চৌকিদারের নেতৃত্বাধীন পক্ষকে সকাল ১০টা এবং বাদশা শেখকে দুপুর ১টার সময় মিছিল করার অনুমতি প্রদান করে। বেলা ১১টা দিকে শাহআলম চৌকিদার তার মিছিল বের করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় উভয় গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে ও ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশকে লক্ষ করে অজস্র ককটেল নিক্ষেপ করা হয় বলে জানান নড়িয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তানভির হায়দার।

সংঘর্ষ চলাকালে নড়িয়া বাজারের সমস্ত দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মুহুর্মূহু শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে সাধারণ মানুষ প্রাণ ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। এসময় নড়িয়া থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে হিমশিম খেলে শরীয়তপুর পুলিশ লাইন থেকে দাঙ্গা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের দুইটি দল সংঘর্ষস্থলে উপস্থিত হয়ে ১০৯ রাউন্ড শর্ট গানের ফাঁকা গুলি করে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার টানভির হায়দার, ডিবি পুলিশের সদস্য আহসান হাবিব ও মোশতাক হোসেন আহত হন। এছারাও বাদশা শেখ, হাকিম শেখ, ইউনুস শেখ, জলিল শেখ, আফজাল বেপারী, আব্দুর রব মিয়াসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৭জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইউনুস শেখ, মোজাম্মেল মুন্সি, ইয়াসিন বেপারী, আব্দুল হক শিকারী ও আব্দুল মজিদ ঢালীকে আটক করে। আটককৃতদের কাছ থেকে পুলিশ ১৬টি ককটেল ও ২টি রামদা উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য যে, নড়িয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বাদশা শেখ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম চৌকিদার গত বছরে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে একই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। নির্বাচনের পর থেকেই উভয়ের মধ্যে এলাকার আধিপত্য নিয়ে সম্পর্কের দুরুত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। বাদশা শেখ অভিযোগ করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা শাহ আলম চৌকিদারের পক্ষ হয়ে মারামারিতে অংশগ্রহন করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নড়িয়া বাজারের একজন ব্যবসায়ী (হারিজ মিয়া) বলেন, সরকার দলের দুই গ্রুপে মারামারি বাধলে আমরা ব্যবসায়ীরা সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দেই। বাজারের সাধারণ লোকজন ভয়ে এদিক সেদিক পালিয়ে গেছে। দুই পক্ষ কম হলেও এক থেকে শোয়াশো ককটেল ফাটিয়েছে। আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা এ সন্ত্রাসীদের থেকে মুক্তি চাই।

নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় মোকতারেরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহআলম চৌকিদার বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী আমি সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল করলে বাদশা শেখের লোকজন আমার মিছিলের পেছন দিক থেকে ঢাল সুরকি রামদা টেটা বল্লম ককটেল নিয়ে আক্রমণ করে। এতে আমার কয়েকজন লোক আহত হয়।

উপজেলা আাওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাদশা শেখ বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর নিদের্শে আমরা সন্ত্রাস বিরোধী মিছিলের জন্য পুলিশের পরামর্শমত দুপুর ১টার সময় মিছির করার প্রস্তুতি গ্রহন করছিলাম। বেলা ১১টার দিকে শাহ আলম চৌকিদারের নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে বিনা উস্কানীতে আমার ইতালী প্রবাসী ছেলের উপর আক্রমণ করে। এসময় শাহ আলম নিজে তার হাতে থাকা রামদা দিয়ে আমার ছেলের মাথায় কোপ মারে। আমার ছেলেকে বাচাতে গিয়ে আমি ও আমার ভাই আহত হই। শাহআলম বিএনপির সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে আমার পুরান বাড়িতে অর্ধ শতাধিক ককটেল হামলা করেছে এবং আওয়ামীলীগের কর্মীদের মারধর করেছে।

নড়িয়া থানার ওসি শেখ কবিরুল ইসলাম বলেন, মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা প্রথমে দুই পক্ষকেই মিছিল না করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তারপরেও উভয়কে সময় বেধে দিয়ে কর্মসূচি পালনের কথা বলেছিলাম। তারা আমাদের কথা না শুনে এ সংঘাতের অবতারনা করেছে। এখনো কেউ কোন মামলা দায়ের করেনি।

সহকারী পুলিশ সুপার মো. তানভির হায়দার বলেন, সংঘর্ষ থামাতে গেলে সন্ত্রাসী আমাদের লক্ষ্য করে অনেকগুলো ককটেল নিক্ষেপ করেছে এতে আমিসহ আমার অপর ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০৯ রাউন্ড শর্ট গানে ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়েছে। যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে নড়িয়ায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

(কেএনআই/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test