E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবহেলিত গফরগাঁওয়ে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৪:৫৬:৪৯
অবহেলিত গফরগাঁওয়ে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে (জব্বার নগর) প্রতিষ্ঠার সাড়ে ৭ বছরেও পূর্ণতা পায়নি ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব অযত্ম ও অবহেলায় জাদুঘরের পাঠাগারটিতে ধুলো-বালি পড়ে ময়লার স্তুপ জমে আছে। অসংখ্য পোকা মাকড় বাসা বেঁধেছে ঘরের ভিতরে।

স্মৃতি জাদুঘরটি বহু বছরের পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ের মত মনে হয়। পরিচর্যার যেন কেউ নেই। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা দেয়া হতো স্মৃতি জাদুঘরে। তখন স্থানীয় আশপাশের অনেকেই আসতেন পত্রিকা পড়তে। কিন্তু গত ২ বছর ধরে পত্রিকা সরবরাহ বন্ধ থাকায় এলাকার লোকজনও তেমন আসে না গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে। এছাড়াও কিছু বই থাকলেও ভাষা শহীদদের স্মৃতি চিহ্ন যুক্ত সবগুলো বই নেই। এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার সদর থেকে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই নাজুক যে সাড়ে ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লেগে যায় প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট। জাদুঘরের মাত্র ১’শ গজ উত্তর পাশে রয়েছে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাঠের চারদিকে ফসলি জমি অপরিছন্ন এলোমেলো পরিবেশ।


এখানে থাকেন না শহীদ আব্দুল জব্বারের স্ত্রী ও সন্তান। তাই নেই সঠিক তদারকি। ফলে পরিচর্যাসহ এসব নানা কারণে দর্শনার্থী শূন্য বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে স্মৃতি জাদুঘর। ১৩২৬ বাংলা সনের ২৬শে আশ্বিন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাচুয়া গ্রামে পিতা হাসান আলী শেখ এবং মাতা শাফাতুন নেছার সংসারে জম্ম গ্রহন করেন আব্দুল জব্বার। ১৯৫২এর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট ভাষা করার দাবিতে ঢাকায় ছাত্র জনতার মিছিলে অংশ নেন আব্দুল জব্বার। সেই মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাত ৮ টায় মৃত্যুবরন করেন আব্দুল জব্বার। তার আকস্মিক মৃত্যুতে স্ত্রী আমেনা খাতুন ১৫ মাসের একমাত্র শিশু সন্তান নূরুল ইসলাম বাদলকে নিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। সংসারে নেমে আসে অভাব। অসহায় আমেনা খাতুন স্বামী আব্দুল জব্বারের মৃত্যুর ৮ মাস পর স্বামীর ভিটে-বাড়ি ফেলে চলে যান হালুয়াঘাট আব্দুল জব্বারের ছোট ভাই আব্দুল কাদিরের আশ্রয়ে। বহু চড়াই উতরায় পেরিয়ে সীমাহীন কষ্টে থেকেও একটুও বিচলিত হননি শহীদ জব্বারের স্ত্রী আমেনা খাতুন।
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শহীদ আব্দুল জব্বারের পরিবারকে ১৬৫/এ/১, তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকাতে একটি আধাপাকা ঘর নির্মান করে দেওয়া হয়। সেখানেই থাকেন তারা। ২০০৮ সালে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। একই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল। জব্বারের চাচাতো ভাই পরিচয়ে এইচ এম আসাদ (নয়ন)স্বামী আব্দুল জব্বারের ০.৪৪ একর জমি দখল করে নেন।শহীদ জব্বারের স্ত্রী, পুত্র বিচার শালিস বসিয়ে এবং মামলা করেও ফিরে পাননি পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত জমিটুকু।


ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের কেয়ার টেকার জানান, জাদুঘরে দৈনিক গড়ে দুই চারজন দর্শনার্থী আসে। আবার কোন কোন দিন একজন দর্শনার্থীরও দেখা মেলে না। অপরদিকে এলাকাবাসীরা জানান, জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর ভাষার মাসেই স্মৃতি জাদুঘরে রঙের কাজ করা হয়। পরে সারা বছর আর খোঁজ নেন না কেউ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর সংস্কার, প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ, ভাষা শহীদদের স্মৃতি চিহ্ন যুক্ত সবগুলো বই সরবরাহ সহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান এলাকাবাসী। উল্লেখিত কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে পূর্ণতা পাবে শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর । ভাষা দিবসে এখানে স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজারো জনতার ঢল নামে এ জাদুঘরে। জাদুঘরের পরিবেশ রক্ষায় গড়ে তোলতে স্থানীয় ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। ভাষার মাস জুড়ে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার মেলা আয়োজন করা যেতে পারে জাদুঘর প্রাঙ্গণে। এতে চেতনা ও প্রাণ চাঞ্চল্যের জাগরণ হবে বলে মত প্রকাশ করেন বিশিষ্ট জনেরা।

(আরআইকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test