E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বগুড়ায় পোড়াদহে মাছ ও মিষ্টি মেলা

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৬:৫৯:৪৯
বগুড়ায় পোড়াদহে মাছ ও মিষ্টি মেলা

বগুড়া প্রতিনিধি : মাথা দেখলেই পাহাড়ের চূঁড়ার মত মনে হয়। মনে হবে শত বছর ধরে আকাশপানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু না পাহাড়ের কথা নয়, বলা হচ্ছে মাছের কথা। ওই বাঘাইড় মাছটির ওজন ৯০ কেজি। ৯০ কেজি ওজনের মাছের দাম হাঁকা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। ক্রেতারা দাম করেছেন ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাঘাইড় ছাড়াও দেশী পাঙ্গাস মাছের ওজন ছিল ৪৫ কেজি, দেশী বোয়াল মাছের ওজন ছিল ২০ কেজি। কাতল মাছের ওজন ছিল ৩০ কেজি। শুধু মাছ নয় ছিল মিস্টিও। হাসি খুশি একটি মিস্টির ওজন ছিল ৫ কেজি।

আজ বুধবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দেড়শ‘ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় মাছ মিষ্টির প্রতিযোগতা বসে। গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতি নদীর শাখা (খাল) সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে বসে এই মেলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা হরেক প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। মেলা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী অন্তত ২০ গ্রাম আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা জানান, প্রায় দেড়শ‘ বছর আগে বগুড়া-চন্দনবাইশা সড়ক সংলগ্ন পোড়াদহ খালের পাড়ে এক বিশাল বটবৃক্ষ তলে আয়োজন করা হতো সন্যাসী পূজার। প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার আয়োজিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়াবাসীর মিলনমেলা। নদী তীরবর্তী স্থানে এই মেলায় দিন দিন নানা প্রজাতির মাছের আমদানি হতে শুরু হয়ে থাকে। এক সময় তা এই অঞ্চলে মাছের মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ইছামতীর খালের পশ্চিমপাশে ধু ধু মাঠের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটে এই মেলায়। মেলায় আসা মাছ বিক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের বড় মাছ বিক্রির প্রতিযোগিতা লেগে যায়। যে যত বড় মাছ মেলায় তুলতে পারবে তত তার নাম ডাক। মাছ বিক্রেতাদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে মিষ্টি বিক্রেতারাও। গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে তাদের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। এবছর একটি ৫ কেজি ওজনের মিষ্টির নাম দেয়া হয়েছে হাসি খুশি। এছাড়া এক কেজি, দুই কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে।
ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এবারের সবচেয়ে বড় ৯০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছটি নিয়ে এসেছেন মাছ চাষী আব্দুর রহীম। সে যমুনা নদী থেকে মাছটি ধরেছেন। ৮০ হাজার টাকা হলে মাছটি বিক্রি করবেন। কিন্তু ক্রেতারা ৭০ হাজার টাকা দাম করেছেন। বিকালে তিনি বাঘাইড় মাছটি কেটে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করেন। দেশীয় ৪৫ কেজি ওজনের পাঙ্গাস মাছের দাম ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। চিতল মাছের কেজি ছিল ১৩। ৩০ কেজি ওজনের কাতল মাছ বিক্রি হয়েছে ৩১ হাজার টাকায়। মেলায় বিভিন্ন সাইজের মাছ রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা কেজি পর্যন্ত।
এ মেলায় মাছ, মিষ্টি, ফর্নিচার, বড়ই, পান শুপারী, তৈজস পত্র, খেলনা থাকলেও কালক্রমে মাছের জন্য বিখ্যাত হয়ে আসছে। মেলাকে ঘিরে প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে থাকে। বিশেষ করে মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি চলে আনন্দ উৎসব। মেলায় যেমন মাছের আকর্ষন তেমনি বাড়ি বাড়ি জামাই আকর্ষন। কোন জামাই বত বড় মাছ কিনেছে তা নিয়েও চলে প্রতিযোগিতা। জামাইরা একে অন্যের বাড়ি বেড়াতে যায় মিষ্টি হাতে। আবার জামাইদের হাতে বাড়ির বড়রা নগদ অর্থ তুলে দিয়ে থাকে। সবাই সবার জন্য কেনা কাটা করে থাকে।
মেলার পরিচালক আব্দুল মজিদ মন্ডল জানান, মেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একদিনের মেলা হলেও মূলতঃ আগের দিন থেকে বিক্রেতারা আসতে শুরু করেন এবং পরের দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ফলে একদিনের মেলা গড়ায় তিন দিনে। এবার হরতাল-অবরোধের কারণে দূর থেকে কম মাছ ব্যবসায়ী এলেও আশপাশের মাছ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা গতবারের চেয়ে দিগুণ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। আশপাশের ২০ গ্রামের মানুষের কাছে ঈদের পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব।
(এসবি/পিবি/ফেব্রুয়ারি ১১,২০১৫)





পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test