E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁর অনেকের বাড়িতে চুলা জ্বলছেনা!

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৭:২০:৩৬
নওগাঁর অনেকের বাড়িতে চুলা জ্বলছেনা!

নওগাঁ প্রতিনিধি : নষ্ট রাজনীতির হিংসাত্মক কর্মকান্ডে নিদারুন কষ্টে আছে নওগাঁ অঞ্চলের শ্রমজীবি মানুষ। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলোতে চলছে রীতিমত হাহাকার। কারো হাতে কাজ নেই। যারা কাজ করে নেবেন, সেসব মহাজনদেরই কামাই-পাতি থমকে গেছে। তাই তারা কাজের লোকদের কাজে লাগাতেও পারছেন না।

নওগাঁ শহরের শ্রম বিক্রির হাট বসে পার-নওগাঁ যমুনা আবাসিক বোর্ডিং এর সামনে লিটন সেতুর পূর্ব মুখে। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে অন্তত ২ শতাধিক শ্রমজীবি মানুষ কোদাল, টুকরি আর ভার-ডালি নিয়ে কাজের প্রত্যাশায় দিনভর অপেক্ষা করে। কাজ না পেয়ে বিকেলে তারা খালি হাতেই বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশ জুড়ে টানা অবরোধ-হরতালে করুন অবস্থায় পড়েছেন এসব দিনমজুররা। এদের সঙ্গে রয়েছেন নির্মাণ শ্রমিকরাও। এসব নির্মাণ শ্রমিকের কাজ চলমান থাকাবস্থায় হরতাল-অবরোধ তাদের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে। নাশকতার আশঙ্কা আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে বাসা বা প্রতিষ্ঠান মালিকরা তাদের ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে বেকার হয়ে পড়া নির্মান শ্রমিকদের ঘরে ঘরে চলছে হাহাকার। একই সঙ্গে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের যেন কষ্টের শেষ নেই। অনেকের বাড়িতেই তিন বেলা চুলা জ্বলছেনা। স্ত্রী-সন্তান, বৃদ্ধ মা-বাবা নিয়ে অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। এসব শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেরই রয়েছে বিভিন্ন এনজিওর চড়া সুদের ঋণ। প্রতি সপ্তাহে ঋণের দিতে হয় কিস্তী। একে তিনবেলা পেট ভরে খেতে পাচ্ছেনা, তার ওপর সপ্তাহের প্রথম দিনই কিস্তী টাকা পরিশোধ, এ যেন “মরার ওপর খাঁড়ার ঘা” হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিকদের কাছে।
সোমবার সকালে শহরের লিটন সেতুর মুখে শ্রম বিক্রির হাটে কথা হলো, শহরের কালিতলা নিবাসী বাবলু সরকার (৭২), সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের গোয়ালী গ্রামের জালাল উদ্দিন (৪০), মান্দার জোঁকাহাটের মোজাম্মের হক (৩৮) ও মোয়াজ্জেম হোসেন (৩৭), চুনিয়াগাড়ি গ্রামের খোরশেদ আলম (৩৬), চকচাঁপাই গ্রামের হাজের আলী (৪১) ও আমজাদ হোসেন (৩৯), শিংবাচা গ্রামের আব্দুল হামিদ (৪০) আনন্দনগরের শহিদুল (৩৭) ও মান্দার ফতেপুর হাটের বাবলুর (৫০) সঙ্গে। এরা সকলেই ভার-ডালি, দা-কোদাল নিয়ে শ্রম বিক্রির হাটে এসেছে শ্রম বিক্রি করতে। এদের কাছে এগিয়ে যেতেই সকলে ঘিরে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো, “কি কাজ স্যার? কোথায় য়েতে হবে? কয়জন লাগবে? আপনারা কাজে না নিলে আমরা পরিবার নিয়ে কি খেয়ে বাঁচবো স্যার? সর্বনাশা হরতাল-অবরোধে আমাদের মুখে দু’বেলা খাবার জুটছে না স্যার”? এমন নানা প্রশ্নবানে যেন জর্জরিত করতে লাগলো। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কিছুটা ক্ষুন্ন মনে বললো, ঠিক আছে, আপনারা আমাদের দুঃখের কথাগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরুন। আমরা খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবনভর খেটেই খাই। আমাদের হরতার-অবরোধ প্রয়োজন নাই। যাদের ঘরে অঢেল খাবার আছে, তারা মানুষ মেরে হরতাল-অবরোধ করুক। দিনমজুর বাবলু সরকার বলেন, আগে সপ্তাহে ৫ দিন কাজ হতো। আর এখন এই মানুষ মারার হরতাল-অবরোধে সপ্তাহে ১দিন ঠিকমত কাজ মিলছেনা।
(বিএম/পিবি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫)


পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test