E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

গৌরীপুরে ১ বছরেও চালু হয়নি নতুন হাসপাতাল

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৩:১৮:২৩
গৌরীপুরে ১ বছরেও চালু হয়নি নতুন হাসপাতাল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে বর্ধিত ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয় প্রায় এক বছর আগে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নতুন ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও আসবাবপত্রের অভাবে তা এক বছরেও কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে এখানকার চার লাখ মানুষ আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ, অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। তার ওপর সংশ্লিষ্ট লোকজনের দায়িত্বে অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা ক্রমেই নাজুক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ফলে রোগীদের ক্ষোভ ও অভিযোগেরও শেষ নেই।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গৌরীপুর উপজেলার জনসংখ্যার আধিক্য এবং বিভিন্ন সমস্যা বিবেচনা করে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিএমএমইউ বিভাগ ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বিগত ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস এসএম এন্টারপ্রাইজ ২০১২ সালের ২৬ অক্টোবর ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে কাজ শুরু করে। গত বছরের (২০১৪ সালে) ২ এপ্রিল অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়। যা প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সহ জনবল ও আসবাবপত্র না দেয়ায় তা এক বছর পরও ৫০ শয্যা চালু হয়নি। ফলে এখানকার মানুষ আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তঃ এবং বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতশত রোগী চিকিতৎসা নিতে আসেন।
সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির গত ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫০ শয্যা হাসপাতালের বর্ধিত ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। তখন তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এসময় তিনি হাসপাতালটির ভবন নির্মাণ শেষে দ্রুত স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম শুরুর ঘোষনা দেন। কিন্তু নিমার্ণ কাজ শেষ হয়ে এক বছর অতিবাহীত হলেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে ৩১ শয্যার এ হাসপাতালে বিভিন্ন পদের লোকবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্বল্পতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৫টি ইউনিয়ন স্যাটেলাইট কেন্দ্রে মোট ১৯জন চিকিৎসক থাকার কথা রয়েছে। তন্মেধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ৯ জনের স্থলে রয়েছেন মাত্র ৬ জন। এ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টাল সার্জন পদটি দীর্ঘদিন ধরে শুণ্য রয়েছে। এ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে ডা. গোলাম রহমান ভুইয়া, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাউসার নিগার মায়া ও উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডা.একেএম মাহফুজুল হক সহ অন্যরা প্রতিদিন শতশত রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে হাসপাতালে আবাসন সংকটের কারণে বর্হিবিভাগে একটি কক্ষে ৩ থেকে ৪ জন ডাক্তার বসে রোগী দেখেন। ওই কক্ষের দরজায় প্রতিদিন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন শতশত রোগী। রোগীদের অভিযোগ ডাক্তারগণ রোগের কথা জিজ্ঞেস করে রোগের বর্ণনা না শুনেই ঔষধ লিখে বিদায় করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার জানান, ডাক্তারদের বসার কোন জায়গাই নাই। তবে চিকিৎসা হবে কি ভাবে ? শুধু চাকুরীর প্রয়োজনে এ হাসপাতালে আসা। রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে হাসপাতালে ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কোন জেনারেটরের ব্যবস্থা নাই। হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে আছে। এক্সরে টেকনিশিয়ান বসে বসে বেতন নিচ্ছেন দিনের পর দিন। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে আর অপরটির ড্রাইভার নাই। ফলে মুমুর্ষ রোগীদের ভোগান্তি এখন চরমে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে পুরুষ আর মহিলা রোগীরা পাশাপাশি বেডে রাত্রিযাপন করছেন। আর অনেক পুরুষ রোগী বেড না পেয়ে নীচে ফ্লোরে শুয়ে আছেন। ভুক্তভোগী কয়েকজন রোগী জানান, এ হাসপাতালের খাবারের মান খূবই খারাপ। প্রতিদিন পাঙ্গাস মাছের পাতলা ঝুল খাওয়ানো হয়। সকালে দেয়া হয় সিদ্ধ ছাড়াই কাচাঁ ডিম। তারা বলেন, ‘মোরা খুব গরীব ও অসহায় বইল্যা এ হাসপাতালে আইছি, নাইলে এমন নোংরা হাসপাতালে মানুষ না ঠেকলে আয় না।’
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: হাবিবুর রহমান ফকির বলেন, ‘৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবনটি উদ্বোধন হলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যেত। ভবনটির চালু করার জন্য আসবাবপত্র ও জনবল নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ করা হচ্ছে।
(এআইএ/পিবি/ফেব্রুয়ারি ১৯,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test