E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ক্লিনিকেই বেশি সময় দেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা !

২০১৫ মার্চ ০১ ১৪:০৩:২০
ক্লিনিকেই বেশি সময় দেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা !

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে বেশি সময় দেয় বলে রোগীসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে। সেই সাথে হাসপাতালে দালালের কারণেও রোগীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অপরদিকে চিকিৎসকরা কর্তব্যকালীন সময়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে দীর্ঘ সময় দেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের ১০০ শয্যার (প্রস্তাবিত ২৫০ শয্যা) সদর হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এখানে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আছে। লোকবল সংকট থাকলেও আগের তুলনায় এখন চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়েছে।
তবে রোগীরা অভিযোগ করেন, অধিকাংশ চিকিৎসক হাসপাতালে সেবাদানের চেয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন বেশি। বিশেষ করে তারা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে বেশি সময় দেন।
সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দেরি করে আসা এবং নির্ধারিত সময়ের আগে চলে যাওয়া, রোগীদের সঙ্গে অসদাচরণ না করা, কর্তব্যকালীন সময়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সময় দেয়া কতিপয় চিকিৎসকের নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে।
এছাড়াও হাসপাতালটিতে রয়েছে দালালদের উপদ্রব। হাসপাতালে চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকলেও দালালরা রোগীদের ফুসলিয়ে পার্শ্ববর্তী প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালে কর্মরত প্রায় চিকিৎসকের রয়েছে শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ও ক্লিনিকে নিজস্ব চেম্বার। ঐ সব চেম্বারে রোগী নেয়ার জন্য দালালরা আলাদা আলাদা কমিশন পাচ্ছে।
সংগৃহীত তথ্যে দেখা গেছে, মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ও মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন পন্থায় শহরের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সিংহভাগ প্রসূতি (সিজারের) রোগী চলে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে খোজ নিয়ে আরো দেখা গেছে, জানুয়ারি মাসে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ও তিনটি প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রায় ৪২১ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ২৭৫টি সিজার ও ১৪৬টি নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়।
এরমধ্যে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ২৫টি নরমাল ও ১৯টি সিজার, সদর হাসপাতালে ৫৭টি নরমাল ও ১৮টি সিজার, চৌধুরী ক্লিনিকে ৩০টি নরমাল ও ১৫০টি সিজার, নিরাময় প্রাইভেট হাসপাতালে নরমাল ২৮টি ও সিজার ৭৬টি, সেতারা হাসপাতাল (প্রা.) নরমাল ২টি ও সিজার ১২টি হয়েছে।
এই অপারেশন জণিত ডেলিভারিতে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সর্বনিম্ন ১২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা বিল দিতে হয়। ওষুধ-পথ্য নিয়ে যার খরচ দাঁড়ায় ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এসব টাকার সিংহভাগই যায় সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের পকেটে। রোগীদের ফুসলিয়ে এনে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে অপারেশনের ব্যবস্থা করার জন্য দালালরাও পায় কমিশন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হোসেন, রোগীর প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন, রোগী সুমনা বেগমসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, বিনা খরচে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ও হাসপাতাল সংলগ্ন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে রোগীরা না গিয়ে বিভিন্ন কারণে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো ভীড় করতে দেখা যায়। আর মুলত এইসব অপারেশন করেন এই দুই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই। যে কারণে রোগীরা দালালসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের পরার্মশ মতেই প্রাইভেট ক্লিনিক থেকেই সেবা নেয়।

নাম না প্রকাশের শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, সরকারি হাসপাতালের দালাল ও চিকিৎসকদের কারণে গর্ভবতী রোগীসহ নানা রোগে সেবা নিতে আসা রোগীরা চলে যাচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিকে। গর্ভবতী মা এবং তাদের অভিভাবকসহ রোগীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়। এমনকি সামান্য জ্বর-সর্দীতে আক্রান্ত রোগীরাও সরকারী হাসপাতালে না এসে ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা ফি দিয়ে ক্লিনিকগুলো থেকে সেবা নেয়।
ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কালকিনির কাপড় ব্যবসায়ী কামাল হোসেন হাওলাদার বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর থাকার কারণে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। কিন্তু হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢুকতে এক লোকের (দালাল) পরামর্শ মতে এই প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে এসেছি।
এ ব্যাপারে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. গোপাল চন্দ্র সূত্রধর জানান, গর্ভধারণের পর সব সময় আমাদের পরামর্শ নিলেও সন্তান প্রসবের সময় ঐ রোগী আর আমাদের কাছে আসে না। বিভিন্ন মাধ্যমে অন্যত্র চলে যায়। অথচ এখানে এলে বিনা খরচে ভালো চিকিৎসা হয়। রোগী না এলে আমাদের কী করার আছে।
অপরদিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবা সুলতানা জানান, সদর হাসপাতালে গর্ভবতী ডেলিভারি রোগী ভর্তি হলে তাদের যত্ন সহকারেই সেবা দেয়া হয়। তাছাড়া এ হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগীদের চাহিদা মতেই তাদের সেবা দিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে সিভিল সার্জন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
(এএ/পিবি/মার্চ ০১,২০১৫)











পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test