E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুগারমিলের বিষাক্ত বর্জ্যে ধ্বংস হচ্ছে নওগাঁর জীববৈচিত্র্য পরিবেশ

২০১৫ মার্চ ০২ ১৬:১৫:৫৫
সুগারমিলের বিষাক্ত বর্জ্যে ধ্বংস হচ্ছে নওগাঁর জীববৈচিত্র্য পরিবেশ

নওগাঁ প্রতিনিধি :  উজানে জয়পুরহাট সুগারমিলের বিষাক্ত বর্জ্যরে বিষক্রিয়ায় নওগাঁয় ছোট যমুনা নদীর লাখ লাখ টাকার মাছ নিধনসহ ধংস হয়ে গেছে নদীর সকল ধরনের জলজীববৈচিত্র। এতে নদীর ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পানি বিষাক্ত কালো হয়ে গেছে এবং পানি দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। ছোট যমুনা নদীসহ আশপাশের নদীসংযুক্ত বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ের প্রাণিকুল উজাড় হওয়ার আশংকা করছেন প্রাণী সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন চরম পানী সংকটে।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে প্রতি বছরই এই সময় জয়পুরহাট সুগার মিল কর্তৃপক্ষের ছেড়ে দেয়া বর্জ্যে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর প্রতিকারে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন ও জেলা প্রশাসনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করেননি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সন্ধ্যায় জয়পুরহাট সুগারমিল কর্তৃপক্ষ মিলে ব্যবহৃত রাসায়নিক বিষাক্ত বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানি সংরক্ষিত ক্যানেল থেকে নদীতে ছেড়ে দিলে হঠাৎ বৃদ্ধি পায় ছোট যমুনা নদীর পানি। নদীতে ভেসে আসতে থাকে বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য। এতে নদীতে দ্রুত এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়লে কালো হয়ে যায় নদীর পানি। পরদিন শনিবার সকাল থেকেই পানিতে ভেসে ওঠতে থাকে মরা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণি। নদী পাড়ের বসবাসরত হাজার হাজার মানুষের পানির ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। নদীপাড়ের রজনী পরিবারের মানুষরাও তাদের কাপড়-চোপর কাঁচতে পারছেন না রঙ্গিন পানিতে। গোসল করাসহ বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের গৃহস্থালী কাজকর্ম। এমনকি ফসলেও তারা দিতে পারছেন না নদীর পানি।
জেলে সম্প্রদায়ের নেতা বয়েন উদ্দীন জানান, সুগারমিল কর্তৃপক্ষ নদীতে বর্জ্য ফেলার সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে নদীর ছোট-বড় সব ধরনের মাছ। ফলে এবার আর মাছ ধরে জীবিকা চালানো সম্ভব হবে না তাদের । আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে আর এ অবস্থার অবসান ঘটবে না। এদিকে এভাবে বর্জ্য ফেলে নদীর পানি দূষণ করায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে নওগাঁর সচেতন মহলে। ইতোপূর্বে তারা নদী দূষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশসহ লিগ্যাল নোটিশ জারি করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এর পরও নদীর পানি দূষণ প্রতিকারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি এখন পর্যন্ত।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রাণিবিদ শরিফুল ইসলাম খান জানান, সম্প্রতি জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্য শ্রীনদী দিয়ে ছোট যমুনা নদীতে মিশেছে। ট্যাংরা, বাইন, বোয়াল, পুঁটি ইত্যাদি দেশীয় প্রজাতির মাছ মরে গেছে। কারণ পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। ভাটিতে প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হওয়াতে এই অবস্থা আরো কঠিন ও জটিল হয়ে ওঠছে। নদীর বুক থেকে বর্জ্য না সরালে এই দূষণ আরো ভয়াবহ ও তীব্র হয়ে ওঠবে। ধীরে ধীরে ছোট যমুনা নদীতে শৈবাল, শামুক, কুঁচে, মাছ ও জলজীবের টিকে থাকার সামগ্রিক পরিবেশ হারাবে।
নওগাঁ জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মহসিন রেজা বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, মৎস্য আইন ও জাতীয় পানি নীতি অনুসারে নদীসহ প্রবহমান জলাভূমি দূষণ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশ যেখানে জাতিসংঘে গিয়ে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে, তখন দেশেই জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। তিনি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
নওগাঁ একুশে উদযাপন পরিষদের আহবায়ক এ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারি জানান, গত বছর চিনিকল কর্তৃপক্ষ বিষাক্ত বর্জ্য শোধন না করে পানিতে ফেলবে না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্ত সরকার কার্যতঃ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করার সুযোগে বিষাক্ত বর্জ্য শোধন না করে পানিতে ফেলেছে।
জয়পুরহাট সুগারমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, মিলের বর্জগুলো নিজস্ব খালে দীর্ঘদিন রেখে শুধু পানিগুলো নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ফেলে দেয়া পানিগুলো বিষাক্ত নয় বলে দাবি করেন তিনি । নওগাঁ জেলা প্রশাসক এনামুল হক জানান, গত বছর এই ভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর সকল প্রকার জীব ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনায় সত্যতা পাওয়া ও অভিযোগের ভিত্তিতে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন ও উর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সুগারমিলের কর্তৃপক্ষ পরিশোধন না করে বর্জ্য ফেলবে না বলে জানালেও এ বছর আবার তাদের মিলের বর্জ্য নদীতে ফেলে দিয়েছে। ইতো মধ্যে জেলা মৎস্য বিভাগ দিয়ে তিনটি স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়েছে। যদি প্রমাণিত হয় সুগারমিলের বর্জ্য তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
(বিএম/পিবি/মার্চ ০২,২০১৫)


পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test