E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বগুড়ায় হাজার বছরের পুরানো অবকাঠামোর সন্ধান!

২০১৫ মার্চ ০৪ ১৫:৫৪:৪৩
বগুড়ায় হাজার বছরের পুরানো অবকাঠামোর সন্ধান!

বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রত্মতাত্ত্বিক এলাকা ভাসুবিহারে খননে বের হয়ে এলো হাজার বছরের আগের তৈরী ইটের দেয়াল, পোড়ামাটির তৈরী বিভিন্ন প্রকার তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন নিদর্শন। প্রত্মতাত্ত্বিকরা মনে করছেন বের হওয়া নিদর্শনগুলো পাল আমলের শেষের দিকে।

জানা যায়, বগুড়া শহরের প্রাচীন দূর্গনগরী মহাস্থানগড় থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে ভাসুবিহার। মহাস্থানগড়ের আদিনাম পুন্ড্রনগর বা পুন্ড্রবর্ধন নগর। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ তার ভ্রমণবিবরণীতে এই নগরীকেই ‘পো-শি-পো’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহাস্থানগড়ের দূর্গটি ছিল এক বর্গমাইল বিস্তৃত। ১৫ থেকে ৪৫ ফুট উঁচু পোড়ামাটির মজবুত ইটের তৈরি দেয়ালের চিহ্ন এখনও বর্তমান। চীনের গ্রেটওয়াল সদৃশ্য এই দেয়াল দেখলেই অনুমান করা যায়, এর ভেতরে একটা সমৃদ্ধ, সম্পদশালী জনপদের বিকাশ ঘটেছিল। এখানে পাওয়া সবচেয়ে পুরনো প্রত্মতাত্ত্বিক নমুনা থেকে প্রমাণিত হয়, এই প্রাচীন জনপদ যিশু খ্রিষ্টের জন্মের আগেই গড়ে উঠেছিল। মহাস্থানগড়ের আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু নিদর্শন। মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নে অবস্থিত ভাসু বিহার। স্থানিয়রা বিহারকে নরপতির ধাপ বলে। ভাসুবিহারে প্রথম খনন করা হয় ১৯৭৩-৭৪ সালে। ওই সময়ে খননে পাওয়া যায় মাঝারি সংঘরাম আকৃতির নিদর্শন, মন্দিরে যাওয়ার রাস্তার সন্ধান পাওয়া যায়। ধারনা করা হয় পাওয়া নিদর্শনগুলো সম্রাট অশোক এর সময়কালের। সংঘরাম বলা হয় যেখানে শান্তিপূর্ন অবস্থানে ধর্মচর্চা, শিক্ষা গ্রহন করা হয়ে থাকে। ভাসুবিহারে ওই সময় বৌদ্ধভিক্ষুরা বসবাস করতো। তারা ধর্মচর্চা করতো। ভাসুবিহারে ২৬ টি কক্ষ দেখতে পাওয়া যায়। কক্ষের সাথে বেশ বড় আকৃতির বারান্দার আকৃতিও দেখা যায়। যেখানে বৌদ্ধভিক্ষুরা ধর্মশিক্ষা অর্জন করতে বসবাস করতো। কথিত আছে ভাসু বিহারে গৌতম বুদ্ধের পদচারনা ছির। এ পদচারনাকে স্মৃতি করে রাখতে ভাসু বিহারে একটি ইটের স্তুপ তৈরী করেছিলেন সম্রাট অশোক। প্রত্মতাত্ত্বিকদের মতে গৌতম বুদ্ধের সম্মানে সম্রাট অশোক স্তুপটি নির্মাণ করেছিলেন। স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম সেই স্তুপটিকে হিউয়েন সাং বর্ণিত অশোকস্তুপ হিসেবে শনাক্ত করেন। সেই ভাসুবিহারে আবারো খননে পাওয়া গেল হাজার বছর আগের ইটের তৈরী দেয়াল, মন্দিরের প্রবেশপথ, পাল আমলের শেষ দিকে নির্মিত ইটের অবকাঠামো। এছাড়াও পাওয়া গেছে মৃৎপাত্রের অনেক টুকরো। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি থেক শুরু হওয়া খনন কমিটির সদস্য রয়েছেন মহাস্থান যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মজিবর রহমান, সহকারী কাস্টোডিয়ান এসএম হাসানাত বিন ইসলাম, সিনিয়র ড্রাফটম্যান আফজাল হোসেন, ফটোগ্রাফার আবুল কালাম আজাদ ও সার্ভেয়ার লোকমান হোসেন।
খনন কমিটির সদস্য ও মহাস্থান যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মজিবর রহমান জানান, খননে পাওয়া ইটের অবকাঠামো প্রায় এক হাজার বছরের পুরোনো। খনন এলাকায় আরও পাওয়া গেছে একটি গর্ত যেখানে একত্রে ছিল মৃৎপাত্রের টুকরা এবং মাটির পাতিলের ভগ্নাংশ মন্দিরের সামনের অংশে খননে পাওয়া অবকাঠামোর কিছু অংশ সম্ভবত মন্দিরে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হতো। তবে এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে আরও খননের পর। খনন কাজ চলবে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত।
খনন দলের প্রধান আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে পাল আমলের শেষ দিকে নির্মিত ইটের অবকাঠামো। এছাড়াও পাওয়া গেছে মৃৎপাত্রের অনেক টুকরা। ১৯৭৩ সালে প্রথম এ সাইটে খনন করে। তখন পাওয়া যায় ব্রঞ্জের তৈরি বেশ কয়েকটি মূর্তিসহ নানা ধরনের প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন। গত কয়েক বছর খননে এখনো আরও পাওয়া গেছে হরফ সম্বলিত নামা ধরনের সিল, মাটির মূর্তি ও পোড়ামাটির ফলকসহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন।
(এএসবি/পিবি/মার্চ ০৪,২০১৫)


পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test