E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরে নোট-গাইড বিক্রিতে শিক্ষকেরা!

২০১৫ মার্চ ০৮ ১৩:০৭:৪৪
রায়পুরে নোট-গাইড বিক্রিতে শিক্ষকেরা!

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি  : সরকারিভাবে নোট-গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলেও লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় অবাধে এসব বই বিক্রি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে একশ্রেণির শিক্ষক পুস্তক প্রকাশকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে এসব বই কিনতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, কোনো বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বোর্ডের বাইরের কোনো বই পাঠ্য করতে পারবে না। পাশাপাশি কোনো বিক্রেতা ও প্রকাশক নোট-গাইড বিক্রি ও প্রকাশ করতে পারবে না। তবে নবম শ্রেণীর জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) অনুমোদিত কয়েকটি সহায়ক বই কেনাবেচা করা যাবে। কয়েক বছর আগে এ-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশ জারির পর বইয়ের দোকান ও প্রকাশনা সংস্থায় তল্লাশি চালানো হলেও দুই থেকে তিন বছর ধরে সেসব আর হচ্ছে না। ফলে আগে কিছুটা গোপনে নোট-গাইড বিক্রি হলেও এখন চলছে তা একেবারেই প্রকাশ্যে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকাশনা সংস্থাগুলো তাদের বই বিক্রির কৌশল পাল্টিয়েছে। এখন তারা বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকসহ সংশিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাঁদের মাধ্যমে এসব বই বিক্রি করছে। এসব শিক্ষক পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের তাঁদের পছন্দের প্রকাশনা সংস্থার নোট বা গাইড কিনতে উৎসাহী করছেন।
রায়পুর পৌর এলাকার তিন থেকে চারজন পুস্তক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর কমিশন-বাণিজ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলায় আলফা পাবলিকেশন্স, আল-আরাফাহ পাবলিকেশনস, আদিল ব্রাদার্স, স্কয়াার পাবলিকেশনস, আল-বারাকা পাবলিকেশন্স, পাঞ্জেরী, লেকচারসহ ১০ থেকে ১২টি প্রকাশনা সংস্থা নোট-গাইড সরবরাহ করে থাকে। এসব সংস্থার বেশির ভাগই আলাদাভাবে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। পুস্তক ব্যবসায়ীরা জানান, আগে নোট-গাইড বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের ভালো লাভ হতো। অভিভাবক-শিক্ষার্থীরাও বেশ কম দামে বই কেনার সুযোগ পেতেন। অথচ এখন শিক্ষকদের সঙ্গে প্রকাশনা সংস্থার চুক্তি হওয়ায় মোটা অঙ্কের কমিশন যাচ্ছে শিক্ষকদের কাছে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা।
বই বিক্রেতারা বিভিন্ন শ্রেণীর নোট-গাইড দেখিয়ে সেগুলোর গায়ে লেখা দাম ও প্রকৃত বিক্রয় মূল্য সম্পর্কে জানান। সপ্তম শ্রেণীর ‘একের ভিতরে সব’ নামের একটি গাইড দেখিয়ে এক বই ব্যবসায়ী বলেন, এর গায়ের দাম লেখা আছে ৮৫০ টাকা। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছে এটি বিক্রি করা হয় ৫২০ টাকা। অথচ পৃষ্ঠাসংখ্যা ও কাগজের মান অনুযায়ী বইটির দাম ৩০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
বিক্রেতারা জানান, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি ঠকানো হচ্ছে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর আলফা পাবলিকেশনসের ইংরেজি গ্রামার ও বাংলা ব্যাকরণ বই দিয়ে। এই বই দুটির সঙ্গে ৭০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার গ্রামার সলিউশন (সমাধান) কেনা বাধ্যতামূলক। উপজেলার এলএম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মাচ্চেন্টস একাডেমী, আজিজিয়া উচ্চবিদ্যালয়, মোল্লার হাট হাইস্কুল, বামনী ইচ্চ বিদ্যালয়, রাখালিয়া হাই স্কুলসহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বইগুলো কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সপ্তম শ্রেণিতে এই বইগুলোর দাম রাখা হচ্ছে ৬৮০ টাকা। অথচ এগুলোর দাম কোনোভাবেই ৩০০ টাকার বেশি হওয়াা উচিত নয় বলে পুস্তক ব্যবসায়ীরা জানান। উপজেলা
রায়পুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুর কাদের বলেন, নোট-গাইড নিষিদ্ধ। তাই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড কিনতে বলার কথা নয়। এ ছাড়া কোনো প্রকাশনী সংস্থার সঙ্গে শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো চুক্তি আছে বলেও আমার জানা নেই।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ভূইয়া জানান, নোট-গাইড বিক্রির সঙ্গে কোনো শিক্ষক জড়িত কি না, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


(পিকেআর/পিবি/মার্চ ০৮,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test