E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৮০ ভাগ মিল!

২০১৫ মার্চ ১০ ১৬:৪৬:১৮
নওগাঁয় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৮০ ভাগ মিল!

নওগাঁ প্রতিনিধি : ভরা মৌসুমে বিদেশ থেকে চাল আমদানী, উচ্চ সুদে ব্যাংক ঋনে খেলাপী হওয়া এবং বিএনপি-জামায়াতের লাগাতার অবরোধ- হরতাল দেশের ধান-চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ হিসেবে খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলার চালকল ও বয়লার-চাতালের মালিকরা দেউলিয়া হতে বসেছে।

আয়ের চেয়ে অধিক ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে তাদের অনেকেরই মিল বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদিত চাল পাইকারের অভাবে অবিক্রিত থাকায় ও দিনের পর দিন ব্যাংক ঋনের সুদে জর্জড়িত হয়ে জেলার শতকরা ৮০ ভাগ অটোসহ চালকল ও বয়লার- চাতাল ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে নারী-পুরুষ চাতাল শ্রমিক প্রায় ৫০ হাজার। খেলাপি ঋনের দায়ে জড়িয়ে পড়েছেন প্রায় ৭শ’ মিল মালিক। ব্যাংকের লেন-দেনেও চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক মিল মালিক জানিয়েছেন, চলতি রোপা ও আসন্ন বোরো মৌসুমেও বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত চাল অবাধ আমদানী, ব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋন আর দেশে উৎপাদিত চালের সরকার নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে আমদানীকৃত চালের মূল্যের সমন্বয় না থাকায় আজ কৃষক, শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীদের ভড়াডুবির মূল কারন।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি আলহাজ্ব তৌফিকুল ইসলাম বাবু জানান, নওগাঁ জেলায় হাস্কিং, আটো ও মেজর মিলসহ প্রায় ১২শ’ চালকল রয়েছে। এতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক জড়িত। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ চালকল, বয়লার-চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। তিনি বলেন, প্রতিবছরের জনসংখ্যা ও উৎপাদনের হিসেব করে যদি চাহিদার তুলনায় খাদ্যের ঘাটতি থাকে, তাহলে সেই ঘাটতির চালটুকু সরকার আমদানী করলে কৃষক বা ব্যবসায়ীদের কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর এই আমদানীর ক্ষেত্রে শুল্ক প্রযোজ্য করা প্রয়োজন। এছাড়া দেশে উৎপাদিত সুগন্ধি আতব, মিনিকেটসহ সকল উন্নত জাতের চাল একটা নির্দিষ্ট পরিমান রফতানী করে এবং চাহিদা মত নির্দিষ্ট পরিমান মোটা চাল আমদানী করা হয়, তাহলে সরকারেরও কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে পারে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, বর্তমানে অবাধে চাল আমদানীর ফলে স্থানীয় মিল মালিকদের গুদামে অনেক চাল অবিক্রিত রয়ে গেছে। ধানের বাজারে ১ থেকে দেড় শ’ টাকা প্রতি মনে কমে গেছে। এই অবস্থা উপলব্ধি করে আসন্ন বোরো মৌসুমে সরকার ধান-চালের দাম নির্ধারন করেছে। কৃষকদের স্বার্থে দাম নির্ধারন করলেও অবাধ চাল আমদানী করায় আসন্ন বোরো মৌসুমে ব্যবসায়ীদের হাতে ধান কেনার টাকা থাকবেনা। এতে কৃষকও ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে আগামীতে তারা ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। এতে দেশ হয়ে যেতে পারে সম্পূর্ণ আমদানী নির্ভর। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নওগাঁর ৭শ’ মিল মালিক ব্যাংক ঋনে খেলাপি হয়ে পড়েছেন। এ সময় বিদেশ থেকে চাল আমদানী করার কোন প্রয়োজন দেখছিনা। ব্যাংক ঋনের সুদের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানী বন্ধ করে শুল্ক আদায়ের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তিনি।
নওগাঁ জেলা ধান্য চাউল ও আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা চন্দন জানান, নওগাঁ দেশের বৃহৎ চালের বাজারে আজ পাইকারদের আগমন নেই। মিল মালিকরা লোকসান গুনতে গুনতে বাধ্য হয়ে মিল বন্ধ করে দিচ্ছে। একদিকে আমদানী নির্ভর চালের বাজারমূল্য, তার সঙ্গে ব্যাংক ঋনের উচ্চহারে সুদ, সব মিলিয়ে চাল ব্যবসায় চরম বিপর্যয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। কৃষক, শ্রমিক, মধ্যম ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিশেষ করে যারা চাল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বাঁচাতে হলে ভরা মৌসুমে বিদেশ থেকে চাল আমদানী বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ অটো মেজর এন্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সারোয়ার আলম কাজল জানান, সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অবশ্যই চাল বিদেশ থেকে আমদানী করবে, এটাই স্বাভাবিক। দেশে উৎপাদিত চালের মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করার বিষয়ে জরুরী ভাবে সরকারকেই বিবেচনা করতে হবে। বোরো মৌসুমেও কৃষক উৎপাদন ব্যয় তুলতে পারবেনা। বিনা শুল্কে আমদানী করা চাল সরকার নির্ধারিত দেশী চালের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
(বিএম/পিবি/মার্চ ১০,২০১৫)






পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test