E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লামায় পার্বত্য মন্ত্রাণালয়ের খাদ্যশস্য লোপাট

২০১৫ মার্চ ১১ ১১:৩৮:১৫
লামায় পার্বত্য মন্ত্রাণালয়ের খাদ্যশস্য লোপাট

বান্দরবান প্রতিনিধি : লামা উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আপদকালীন খাদ্যশস্যের বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জানাযায়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় লামা উপজেলার সরই ও গজালিয়া ইউনিয়নে ২১টি প্রকল্পের অনুকূলে ২০০ মে. টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তার মধ্যে সরই ইউনিয়নে ১১টি প্রকল্পের অনুকূলে ১০০ মে. টন এবং গজালিয়া ইউনিয়নে ১০টি প্রকল্পের অনুকূলে ১০০ মে. টন।

সরই ইউনিয়নের প্রকল্প গুলো হচ্ছে চিংহ্লামং পাড়া কেয়াং ঘরের উন্নয়ন ৫ মে. টন, ক্যাজু হেডম্যান পাড়া গীর্জার উন্নয়ন ৫ মে. টন, সরই নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র সরবরাহ ১০ মে. টন, ফরিদ মেম্বার ফোরকানীয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন ১০ মে. টন, ফাতেমা দরগার পানজ খানার উন্নয়ন ১০ মে. টন, কমোপনিয়া বাছড়ি কালভাটের সাইট ভরাট ও রাস্তা সংস্কার ১০ মে. টন, গয়ালমারা মুখ হতে রউফেরমার বাড়ির দিকে রাস্তা সংস্কার ১০ মে. টন, আমতলী হতে ডুমবুরুর দিকের রাস্তা সংস্কার ১০ মে. টন, ডিসি রোড করিমের বাড়ি হতে দেরাজপাড়া বিদ্যালয় রাস্তা সংস্কার ১০ মে. টন, কেন্দার দোকান হতে পাইসাপ্রু পাড়ার রাস্তা সংস্কার ১০ মে. টন, মেরেত্তার উঠনী কমিউনিটি ক্লিনিকের মাঠ উন্নয়ন ১০ মে. টন।

গজাালিয়া ইউনিয়নের প্রকল্প গুলো হল- ব্রিকফিল্ড জামে মসজিদের উন্নয়ন ১০ মে. টন, বদুছড়াপাড়া হতে প্রংগপাড়া যাওয়ার রাস্তা উন্নয়ন ১০ মে. টন, গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র সরবরাহ ১০ মে. টন, তারার ঝিরি জামে মসজিদের উন্নয়ন ১০ মে. টন, নাজিরাম পাড়া আসাথাই সমিতির আসবাবপত্র সরবরাহ ১০ মে. টন, হ্লাচিং পাড়া বৌদ্ধ বিহারের উন্নয়ন ১০ মে. টন, বাইশপাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্রের কমিউনিটি সেন্টারের আসবারপত্র সরবরাহ ১০ মে. টন, তুলাতলী বৌদ্ধ বিহারের উন্নয়ন ১০ মে. টন ও লুলাইংমুখ বাজারে মুরুং সমিতির আসবারপত্র সরবরাহ ১০ মে. টন।

এলাকার খাদ্য সমস্যা দূরীকরণ ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য এসকল খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মর্মে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগে জানা গেছে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের গায়ে অপবাদ লেপনের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্যের প্রকল্পে পরিকল্পিত ভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হচ্ছে।

স্থানীয় জনসাধারণ ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা জানান, গৃহীত কোনো প্রকল্পের কত মে. টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে যে কারণে একদিকে এলাকায় দেখা দিয়েছে কর্মসংস্থানের সংকট অন্যদিকে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে সরকারের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া।

সরই ইউনিয়নের ফাতেমা দরগার পানজ খানার উন্নয়ন ১০ মে. টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়। উক্ত প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শনে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন চেয়ারম্যান মো. ছবুর মেম্বার জানান, খাদ্য বিক্রি ৫০ হাজার টাকা তার হাতে আছে।

সরই ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম একই প্রকল্পের বিষয়ে জানান, খাদ্যশস্য বিক্রি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে একাউন্টে আছে।

গয়াল মারা মুখ হতে রউফেরমার বাড়ির দিকে রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের চেয়ারম্যান ১০ মে. টন খাদ্য শস্যের পুরোটাই লুপাট করেছে।

স্থানীয় আধিবাসী মো. জাকির হোসেন জানান, এই প্রকল্পের বিষয়ে স্থানীয় জনগণ অবগত নয়। এভাবে প্রত্যেকটি প্রকল্পের একই চিত্র। স্থানীয়রা অভিযোগ করে আরো জানান, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং খামখেয়ালী পনার কারণে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের এই বেহাল দশা। সরকারি কর্মকর্তাদের ও প্রকল্প চেয়ারম্যানদের এই জাতিয় দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার তো দুরের কথা অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।

গজালিয়া ইউনিয়নের তারার ঝিরি জামে মসজিদের উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে মসজিদের মুসল্লি আশিকুর ইসলাম, আকরাম হোসেন, মো. ফারুক জানান, ১০ মে. টন খাদ্যশস্য বাবদ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মার্মা তাদের ১৫ হাজার টাকা দিয়েছে।

বাইশপাড়া আশ্রয় কেন্দ্রের কমিউনিটি সেন্টারের আসবাবপত্র সরবরাহ ১০ মে. টনের বরাদ্দকৃত এ প্রকল্প পরিদর্শনে পাড়া কারবারী মংচিহ্লা মার্মা ও ক্যয়ছা মার্মা জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মার্মা ২০টি প্লাস্টিক চেয়ার ও ১টি প্লাস্টিক টেবিল দিয়েছেন। সরেজমিনে পরিদর্শনে অধিকাংশ প্রকল্পের বাস্তবায়নের ঘটে নি।

লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মো. ফিজানুর রহমান জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামসুন নাহার সুমির মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে সাংবাদিকদের কেনো তথ্য দিতে হবে? জনগণ আপনাদের কাছে কেনো আসে? আমার কাছেতো কেহ কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমি এই বিষয়ে আপনাদের সাথে কথা বলবো না।

(ওএস/এটিআর/মার্চ ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test