E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরা বিএডিসি’র গুদামের প্রায় ৩০০০ বস্তা সার গায়েব !

২০১৫ মার্চ ১৫ ১৭:০০:২৮
মাগুরা বিএডিসি’র গুদামের প্রায় ৩০০০ বস্তা সার গায়েব !

মাগুরা প্রতিনিধি : বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসি মাগুরার ভায়না গুদামে সংরক্ষিত ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ২৯২০ বস্তা সার কালো বাজারে বিক্রি হয়ে যাবার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ মার্চসহ বিএডিসি’র উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের একাধিকবারের বিভাগীয় তদন্তে পাওয়া গেছে এ তথ্য। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে বিএডিসি’র যশোর অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন গুদামের ভারপ্রাপ্ত রক্ষক সিরাজুল ইসলামকে কারণ দর্শানো নোটিস দিয়েছে। খোঁয়া যাওয়া সারের মোট পরিমান প্রায় ১৪৬ টন। যার মধ্যে ৬৯ টন মিউরেট অব ফসফেট (এমওপি), ৫২ টন ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ২৫ টন ডাইএমনিয়া ফসফেট (ড্যাপ) সার রয়েছে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা হিসাবে যার সংখ্যা ২৯২০ বস্তা।

বিএডিসি মাগুরার সহকারি পরিচালকের কার্যালয়ের (সার) দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারি পরিচালক খোন্দকার আশরাফুল আলমসহ একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে বিভিন্ন সময়ে ভায়নার দুটি গুদামে বিভিন্ন ধরনের সার খুলনার একাধিক সরবরাহকারির মাধ্যমে মজুদ হয়েছে। কৃষি মন্ত্রনালয় ও বিএডিসির প্রধান কার্যালয় জেলার চাহিদা অনুযায়ী বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানকার কৃষকদের জন্য এসব সার এখানকার দুটি গুদামে ওইসব সরবরাহকারির মাধ্যমে পাঠায়। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরবরাহকারিদের চালানে স্বাক্ষর করে এইসব সার গুদামে মজুদ করেন। যা গুদামের প্রাপ্তি স্বীকার ও মজুদ রেজিষ্ট্রারে তাৎক্ষনিকভাবে তালিকাভুক্ত করার কথা।

এই মজুদ স্বাপেক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারি পরিচালক এই কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীণ মাগুরা ও ঝিনাইদহের ১৭২ জন ডিলারদের নামে মন্ত্রনালয়ের দেয়া বরাদ্দ অনুযায়ী সরবরাহের নিদের্শ দেন। কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি তিনি স্থানীয় কিছু ডিলারকে এমওপি সারের সরবরাহ আদেশ দিতে গিয়ে এই সার নেই বলে জানেন। তখন সন্দেহ হলে তিনি মজুদ ও প্রাপ্তি স্বীকার রেজিষ্ট্রার পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে সেই সময়ে গুদামে থাকা মজুদ ও প্রাপ্তি স্বীকার রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী ৬৯.৮৯ মেট্রিক টন এমওপি সার থাকার কথা। কিন্তু গুদামে সংরক্ষিত আছে মাত্র ০.৭৫ মেট্রিক টন সার। এই ব্যাপক ঘাটতির বিষয়টি ধরা পড়ার সাথে সাথে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে এটি যশোর অফিসে জানান। পরবর্তীতে যশোরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কয়েকদফা গুদাম পরিদর্শন ও তদন্তে এমওপি’র পাশাপাশি টিএসপি ও ড্যাপ সার মিলিয়ে প্রায় ১৫০ টন সারের ঘাটতি ধরা পড়েছে। যে বিষয়ে তদন্ত চলমান থাকার পাশিপাশি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কারন দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়েছে।

উপ-পরিচালক খোন্দকার আশরাফুল আলম আরো জানান,কাগজগত্র পর্যবেক্ষন করে দেখা গেছে গত ১৫ ফেব্রয়ারী গুদাম রক্ষক গ্রামসিকো কোম্পানীর একটি ইনভয়েসে (স্বারক নম্বও-৫৫৮,তাং ১০.০২.১৫) স্বাক্ষর করেছেন যেখানে এটির পরিমান ছিল ৬৪৭ টন। কিন্তু গুদামে পাওয়া যায় ৬০৭ মেট্রিক টন। খোয়া যাওয়া সব সারের ক্ষেত্রেই এ ধরনের গরমিল রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন,গত ৯ মার্চ বিষয়টি নিয়ে যশোর বিএডিসি কার্যালয়ে সভা হয়েছে। এই সভায় একই অভিযোগ উপস্থাপিত হয় ও সভা শেষে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম তাকে ডেকে নিয়ে স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি দেন ও মারধর করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত গুদাম কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,‘ গুদামে সারের মজুদসহ সমস্ত কাগজপত্র নিয়মিতভাবে মাগুরার উপ-সহকারি পরিচালককে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেই। এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই ’। তিনি যশোরে উপপরিচালকে মারধর ও গালি দেবার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তার এ বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএডিসি’র মাগুরা অফিসের উপ-পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন,‘ গুদামের চাবিসহ সবকিছুই গুদাম রক্ষকের কাছে থাকে। তিনি গুদামের সার মজুদ ও সরবরাহের সার্বক্ষনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাদের ধারনা ওই সার রেজিষ্ট্রারে না তুলে গোপনে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে‘।

এদিকে গতকাল ঊল্লেখিত অফিসে সরেজমিনে গিয়ে বেশকিছু কাগজ পত্র পর্যবেক্ষন করে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব কাগজপত্রে চালান, ইনভয়েস, সরবরাহ ও মজুদ রেজিষ্ট্রারের উলেখিত গরমিলের লিখিত প্রমান রয়েছে।

(ডিসি/এএস/মার্চ ১৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test