বাগেরহাটে নৌকায় বিধবাকে গণধর্ষণ, ছয়দিন পর উদ্ধার

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের রামপালে এবার সংখ্যালঘু এক বিধবা নারীকে (৩২) অপহরণের পর নৌকায় তুলে নিয়ে চার যুবক গণধর্ষণ করেছে। ৬দিন পর মঙ্গলবার রাতে রামপাল উপজেলার কুমারখালী গ্রাম থেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় স্থানীয় গ্রামবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

গত বৃহষ্পতিবার গভীর রাতে রামপাল উপজেলা পেড়িখালী ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামের কালিগঞ্জ নদীতে এই ঘটনা ঘটে। বুধবার বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ওই নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার রাত দুইটায় ধর্ষণের শিকার ওই নারীর দেবর বাদী হয়ে রামপাল থানায় অজ্ঞাতনামা চার যুবকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে। তবে পুলিশ এই গণধর্ষণের সাথে জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গণধর্ষণের শিকার ওই নারী জানান, গত বৃহষ্পতিবার বিকেলে রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড় ইউনিয়নের বড় সন্নাসী ফুলতলা পাড়া নিজ গ্রাম থেকে দেবরের সাথে পাশ্ববর্তি ডাকরা গ্রামের ধর্মীয় মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠান শুনতে যায় । সেখানে গান শোনার এক পর্যায়ে রাত দশটার দিকে বাইরে বাথরুম সারতে বেরুলে অন্ধকারে ওৎ পেতে থাকা কয়েক যুবক তাকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে।

ঘটনার সময়ে তার সাথে থাকা দেবর ওই যুবকদের বাধা দিতে গেলে তারা তাঁকে বেদম প্রহার করে ফেলে রেখে তাকে তুলে নদীতে থাকা একটি নৌকায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা তাকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে সে অচেতন হয়ে পড়ে। অসুস্থ অবস্থায় পরে ওই যুবকরা মহিলাকে পাশ্ববর্তি কুমারখালী গ্রামে তার এক বোনের বাড়িতে নিয়ে রেখে দেয়। ঘটনার পর এই বিষয়টি কেউ যেন জানাতে না পারে সেজন্য গত বৃহষ্পতিবার রাত থেকেই ওই যুবকরা সেখানে পাহারা বসায়। তার ১২ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। এঘটনাটি মঙ্গলবার সন্ধায় মল্লিকেরবেড় ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার নাজমুল কবীর ঝিলাম লোকমুখে জানতে পারেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় তার লোকজন ও পুলিশ অসুস্থ অবস্থায় নির্যাতিতা ওই মাহিলাকে উদ্ধার করে। ধর্ষক ওই যুবকদের মারপিটে আহত ধর্ষিতার দেবর সুদেব হালদার বর্তমানে মংলা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তালুকদার নাজমুল কবীর ঝিলাম বলেন, ডাকরা গ্রামের কতিপয় যুবক তার ইউনিয়নের স্বামীহারা এক নারীকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করে অবরুদ্ধ করে রেখেছে এই সংবাদ লোকমুখে জানতে পারি। ঘটনা জানার পর ধর্ষিতাকে উদ্ধারে সেখানে তার লোকজন পাঠালে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ আসলে মহিলাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এরআগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শিয়ালীডাঙ্গা গ্রামের এক তরুণীকে ৪ যুবক গণধর্ষন করে। ওই ঘটনায় জড়িত ৩ ধর্ষককে পুলিশ ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। এঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রামপালে আবারো গণধর্ষনের ঘটনা ঘটলো।

রামপাল থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, গণধর্ষণের শিকার ওই বিধবা নারীকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চার যুবকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তার ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

মামলা তদন্ত কর্মকর্তা রামপাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল বাশার বলেন, ওই নারীর ডাক্তারী পরীক্ষার সম্পন্ন হয়েছে। এখন তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে। ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করতে তদন্ত চলছে। ধর্ষক ওই চার যুবকের পরিচয় পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

(একে/এএস/মার্চ ১৮, ২০১৫)