E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড়

২০১৫ মার্চ ২১ ২০:২৮:০২
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড়

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধুসেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমসিসিসি-এসইএল-ইউডিসি ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে সেতুর পূর্বপাড়ে অবৈধভাবে ৮ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় দেশের বৃহত্তর স্থাপনা বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড়ে সেতুর প্রায় ৩ শ’ গজ দক্ষিণে কালিহাতী উপজেলার শামশৈল, বেলটিয়া, চরসিঙ্গুলী ও আলীপুর মৌজায় ৮ টি ড্রেজার বসিয়ে আড়াই মাস যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলন করা বালুভর্তি ট্রাকগুলো সেতু সংলগ্ন গ্যাস ফিল্ডের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করায় দূর্ঘটনার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

সূত্রমতে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারি স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হাই আকন্দ(ছোট), হযরত আলী তালুকদার, মুক্তার আলী আকন্দ, টিক্কা তালুকদার, হারুন মন্ডল, মাসুদ হোসেন, ওবায়দুল তালুকদার ও হিটলু মিয়া ৮টি ড্রেজার দিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। পুরোদমে সিন্ডিকেট করে তারা নিয়মিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন।

বঙ্গবন্ধুসেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমসিসিসি-এসইএল-ইউডিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এ সাইটের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ড্রেজার মালিকরা।

এদিকে, গত বছর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমান আদালত বালু সরবরাহের থানাঘাট নামক স্থানে ‘টিনসেড’ বেড়া দেয়া হয়। ৩-৪ মাস আগে কে বা কারা রাতের আঁধারে ওই বেড়া সরিয়ে ফেলে এবং বালু সরবরাহের রাস্তা খুলে যায়। ওই পায়ে হাটা রাস্তাটি গ্যাস ফিল্ডের উপর দিয়ে গেছে, নিচে রয়েছে গ্যাসলাইনের পাইপ। ওই পাইপের উপর দিয়ে অবাধে ভারি ও সেমি-ভারি যানবাহন চলাচলে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গ্যাসলাইনের পাইপের উপর দিয়ে প্রতিদিন ৪ শতাধিক ভারি ট্রাক দিয়ে বালু সরবরাহ করা হচ্ছে।

বালু সরবরাহ করতে ব্যবসায়ীরা সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ‘বুড়িগঙ্গা পুণঃখনন’ প্রকল্পের মুখ বেলটিয়া মৌজায় ধলেশ্বরী নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। এতে ধলেশ্বরী নদী উত্তর-দক্ষিণে ভাগ হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর মুখে চর পড়ায় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ণাধীন ‘বুড়িগঙ্গা পুণঃখনন’ প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

একাধিক ড্রেজার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের(বিবিএ) অধিগ্রহন করা জায়গায় সাইট অফিসের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে মৌখিকভাবে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হাই আকন্দ ও হযরত আলী তালুকদারকে ২টি ড্রেজার চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। বাকি ৬টি ড্রেজার ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় বসানো হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

ড্রেজার মালিক ওবায়দুল তালুকদার জানান, বিবিএ’র বাইরে নদীতে ব্যক্তি মালিকানাধীন নিমজ্জিত ভূমি থেকে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের ‘এলআর ফান্ডে’ টাকা দিয়ে মৌখিক অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৮টি ড্রেজারই বিবিএ’র জায়গায় বসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনের কোন প্রকার অনুমতি দেয়া হয়নি। সেতু কর্তৃপক্ষ থানাঘাট ইজারা দেয়ায় ‘টিনসেড’ বেড়া সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষের কারণেই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা সুযোগের সদ্বব্যবহার করছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের(বিবিএ) এ সাইটের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে জানান, বালু উত্তোলন বা সরবরাহের কোন অনুমতি তারা দেননি। সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সেতুর যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য তারা সেতুর ১.২ কিলোমিটার দুরে ড্রেজার সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। থানাঘাট নামক এলাকার রাস্তাটি পায়েহাটার রাস্তা, ভারি ট্রাক চলাচল করলে গ্যাসলাইনের ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন। টাকা নিয়ে মৌখিক অনুমতি দেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

(আরকেপি/এসসি/মার্চ২১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test