E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরায় অগ্নিদগ্ধদের সংসারের চাকা থেমে আছে

২০১৫ মার্চ ২৪ ১৮:৫৩:২৫
মাগুরায় অগ্নিদগ্ধদের সংসারের চাকা থেমে আছে

মাগুরা প্রতিনিধি : জ্বলছে না চুলা, চলছে না সংসার।  চলছে শোকের আহাজারি পেট্রোল বোমায় দগ্ধ মাগুরার মালিকগ্রামের স্বজন হারা পরিবার গুলোর মধ্যে। একই গ্রামে ৮ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। এদের মধ্যে  ৪ জনই একই পরিবারের। এই ৪ জনের মধ্যে আপন চাচা-ভাতিজা রওশন ও মতিন মারা গেছে। অন্য দুই চাচা-ভাতিজা ইলিয়াস ও আরব আলী বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

মালিকগ্রাম গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রামটাতে এখনও চলছে শোকের মাতম। সকলের চোখে-মুখে আতংক ও শোকের ছায়া বিরাজ করছে। পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হতদরিদ্র পরিবার গুলোর ওপর ভর করেছে সংসার চালানোর র্দুভাবনা। সংসারের উর্পাজনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে ও মৃত্যু শয্যায় শায়িত থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারগুলি। শনিবারের ঘটনার পর-পরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকা ও এক বস্তা চাউল দিলেও তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই যৎসামান্য।

নিহত রওশনের পরিবারে গিয়ে দেখাগেছে ,ছোট্র শিশু ইব্রাহীম ক্ষুধায় যন্ত্রনায় চিৎকার করছে, আর মা (রওশনের স্ত্রী) সুকুরণ নেচ্ছা (৩০) সন্তানকে সান্তনা দিচ্ছে। জানতে চাইলে সুকুরননেচ্ছা বলেন যে টাকা পাইছি তা ঢাকায়- যাতায়াত ও স্বামীর দাফন কাফনে সে টাকা ফুরাই গেছে। হাতে টাকা নেই দুধ কিনতে পারি নাই ছোয়ালডারে কি খাওয়াবো। একদিকে স্বামী হারানো শোক, অন্যদিকে ৩ সন্তানের সংসার। সব মিলে সুকুরননেচ্ছা এখন দিশেহারা। এ প্রতিবেদককে দেখে তিনি কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্না বিজোড়িত কন্ঠে বলতে থাকেন “আল্লা- কেন এমন গজব দিলো ? এখন ছোয়াল তিনডারে কি করে বাঁচাবানে” বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশী শহিদুল জানান-রওশনের মাত্র দেড় শতক জমি আছে । তারই ওপর বসত বাড়ি। হতদরিদ্র রওশন দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলো। এখন সব শেষ। মতিনের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশু কন্যা, এক ভাই ও বাবা-মা। স্বামীর মৃত্যুতে জাহেদা খাতুনের কান্না কিছুতেই থামছে না। আহত ইলিয়াসের স্ত্রী দোলেনা খাতুন জানান তিনি প্রতিবন্ধী কোন কাজ করতে পারেননা। কি ভাবে সন্তানদের ভরণ-পোষণ চালাবেন। বর্তমানে কিছু চাল ছাড়া আর কিছুই নেই।

ষাটোর্ধ টোকন বিশ্বাস নিজ সন্তান ও আপন ভাই হারিয়ে উন্মাদ। তার আর এক ভাই ও ভাতিজা বার্ন ইউনিটে মৃত্যু শয্যায় শায়িত। একই গ্রামের ইয়াদুল, নাজমুল,নওশেরসহ সকল পরিবার গুলোর সদস্যদের মাঝে এখন রাতের আধাঁর নেমে এসেছে।

নিহত সাকিলের পরিবারের একই দৃশ্য। একদিকে শোক, অন্য দিকে সংসারে অনটন। সাকিলের পিতা ইসলাম মোল্যা বলেন- আমার বাজান কোন দিন নাজনীতি করেনি। সংসারে অভাবের জ্বালায় ৫ ক্লাস পড়ে জনে গেছে। সেই থেকে তার ওপর সঙসার। জন বেঁচে ছোট ভাইডারে মানুষ করছে। এখন আমরা কি করবানে ?

প্রতিবেশী আবু বক্কার বিশ্বাস (৬৫) বলেন-এদের কোন সম্পদ নেই। এরা কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না। কেন এদেও ওপর হামলা হলো? কেন এমন নির্মম পরিহাস ? সরকারের নিকট আবেদন এদের যেনো কোন ব্যবস্থা করে।

(ডিসি/এএস/মার্চ ২৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test