E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও অবহেলিত ধামইরহাটের গণকবর

২০১৫ মার্চ ২৫ ১৬:৪৬:৪১
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও অবহেলিত ধামইরহাটের গণকবর

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর ধামইরহাটে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও পাকি-হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত স্বাধীনতাকামাী মানুষের গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো আজও অবহেলিত। গণকবরগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নিলে কালের বিবর্তনে এক দিন এসব বধ্যভুমি দেশের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে। এলাকাবাসী এসব গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৫৬ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের কোল ঘেঁষে ধামইরহাট উপজেলার অবস্থান। স্বাধীনতা যুদ্ধে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাক-বাহিনী তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য রাজাকার, আল সামস ও আলবদর বাহিনী গঠন করে এলাকার মুক্তিকামী জনসাধারণকে নির্মম নির্যাতন চালায়। এসব বাহিনীর সহযোগীতায় পাকি বাহিনী এলাকার নিরীহ মানুষকে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকলে গ্রামবাসী দলে দলে প্রাণভয়ে উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এছাড়া এ পথ দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আশ্রয় নিয়েছিল। তাই পাকি-হানাদার বাহিনী মুক্তি বাহিনীকে দেশে ঢুকতে না দিতে এবং দেশ থেকে ভারতে আশ্রয় ঠেকাতে এ উপজেলার ফার্শিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও জমিদার বাড়ির পরিত্যাক্ত অংশে সেনা ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তোলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের শেষ দিকে। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এ দেশীয় রাজাকার, আল সামস ও আলবদর বাহিনী যোগ দিয়ে ব্যাপক নির্যাতন অগ্নি সংযোগ, নারীর সম্ভ্রমহানীসহ গণহত্যা চালিয়ে যায়। যদিও এ উপজেলা হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। কিন্ত তাদের নির্মম অত্যাচার এবং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে এনে গুলি করে হত্যা করা হয় নির্বিচারে। অনেক লাশের পরিচয় না পাওয়ায় প্রধান সড়কের ধারে এবং ক্যান্টনমেন্টের আশপাশে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেক লাশ শিয়াল-কুকুরের পেটে যায়। গন্ধে ওই এলাকার আশপাশের বাতাস বিষাক্ত হয়ে ওঠেছিল। এসব হত্যার নজির ফার্শিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ ধারে দু’টি এবং উক্তরে বেশ কয়টি গণকবর রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী কুলফৎপুর গ্রামের ১৪ জনকে একই দিনে কুলফৎপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। এই নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যার পর তাদের লাশ যত্রতত্র পড়ে থাকলেও গ্রামবাসী পাকি সেনাদের সকল ভয়ভীতিতে উপেক্ষা করে লাশগুলোর উদ্বার করে কোন রকমে মাটিচাপা দেয়। এই স্থানটিতে উমার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাক-বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত ১৪ জনের একটি নাম ফলক স্থাপন করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। অন্যদিকে এ উপজেলার পাগল দেওয়ান মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভুমির স্মৃতি চিহৃ আজও মুছে যায়নি। গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো আজ গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ৪৪ বছরে এগুলোর স্মৃতি ধরে রাখার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি সরকারীভাবে। খোঁজ নেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নিহত মানুষগুলোর অসহায় পরিবারগুলোর হাল হকিকত। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব হত্যাকান্ডের কে কার খোঁজ রাখে? তাই নীরবে নিভৃতে গণকবর ও বধ্যভুমিগুলোর স্মৃতি চিহৃ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি এসব বধ্যভুমি ও গণকবরগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। নচেৎ এক সময় নতুন প্রজন্ম তাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মানুষগুলো সম্পর্কে কোন ধারণা থাকবে না। জানবেনা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
(বিএম/পিবি/মার্চ ২৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test