মাগুরায় পেট্রোলবোমায় দগ্ধে নিহত ৫

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা-যশোর মহাসড়কের মঘির ঢাল এলাকায় ২১ মার্চ শনিবার রাতে ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলায় দগ্ধ ৯ শ্রমিকের মধ্যে রওশন আলী (৪৫), শাকিল আহমেদ (৩০), মতিন বিশ্বাস(২৫), ইয়াদুল(৩৫) ও ইমরান (২৮) নামের ৫ শ্রমিক একের পর এক মৃত্যু বরণ করেন।  একের পর এক লাশ দেখে গ্রামসহ অত্র এলাকাবাসী এখন শোকে নিথর। অন্যদিকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারী  জঙ্গী-সন্ত্রাসীরা পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায়  এলাকার জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

মালিকগ্রামে গিয়ে দেখাযায় স্থানে-স্থানে লোক-জনের জটলা। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও অংশ গ্রহন করেছেন এই জটলায়। তাদের সকলের চোখে-মুখে শোক ও বিষন্নতার ছাপ। নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের গোটা পরিবারে চলছে শোকের মাতম। শোকে বাবা-মা, স্ত্রী,ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। কেউ-কেউ বিলাপ করে বার-বার মুচ্ছা যাচ্ছেন। হতদরিদ্র পরিবার গুলোর একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ গুলোকে হারিয়ে স্ত্রী-সন্তানেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এদিকে পরিবারের বড় সন্তান ও একমাত্র উপার্জনক্ষম পুত্র শাকিলকে হারিয়ে তার বাবা ইসলাম মোল্লা মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি কখনও কাঁদছেন, কখনও মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। মা ও অপর তিন ভাই-বোন শোকে নির্বাক। বাবা ইসলাম মোল্লা বিলাপ করে জানান, শাকিলের বয়স ৩০ হলেও স্বল্প আয়ের সংসারে মা-বাবা, ভাই-বোনের সুখের কথা ভেবে সে এখনও বিয়ে করেনি। কিন্তু সবার সুখের পাখি, আমাদে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেল।
কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না থেকেও নোংড়া রাজনীতির শিকার হয়ে একই গ্রামের দিনমজুর ৫ তাজা প্রানের আকস্মিক মৃত্যু ও ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামবাসীসহ পরিবারের সদস্যরা নৃশংশ এ ঘটনা কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। জব্বার আলী ও জাফর বিশ্বাসসহ অসংখ্য গ্রামবাসী জানান, নিহত রওশন, শাকিল,ইয়াদুল,মতিন ও ইমরানসহ অগ্নিদগ্ধ ৯ জনের কেউ রাজনীতির সাথে জড়িত না। তারা প্রত্যেকেই গ্রামের সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষ। নিরাপরাধ মানুষের উপর কেন এই বর্বতা ? আমরা এ ঘটনার বিচার দেখতে চাই।
এদিকে ইমরানের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মরদেহ সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মাগুরায় পৌছানোর কথা।

জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান জানান, দুর্বৃত্তদের দ্বারা ৯ জনের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ২১মার্চ শনিবার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে চিকিৎসার জন্য প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করেন প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে নিহতের পরিবারকে ১৫ হাজার ও সর্বশেষ ১০ হাজার করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় সকলকে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তার একান্ত সহকারী সচীব সাইফুজ্জামান শিখর সার্বক্ষনিক ঢাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তদারকি করছেন। নিহতের দাফন-কাফন ও পরবর্তী সাহায্য অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে পেট্রোল বোমা হামলায় নিহতের ঘটনায় ২২ মার্চ রবিবার দুপুরে দলীয় কার্যলয়ে জেলা আওয়ামী লীগের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবদিক সম্মেলন করে বোমা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রবিবার বিকেল ৫ টায় শহরে এক প্রতিবাদ মিছিল ও ২৪ মার্চ গণ মিছিল করা হয়। পুলিশ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহম্মদ বিশ্বাসসহ ২৬ জনের নামে মামলা দায়ের করলেও এখন কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এখনও আসল হত্যাকারীরা অধরাই রয়ে গেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন রায় জানান, সন্দেহভাজন কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।

(ডিসি/পিবি/এপ্রিল ০১,২০১৫)