E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরের আয়েশা চট্রগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা

২০১৫ এপ্রিল ০৪ ১৫:২০:৫৪
রায়পুরের আয়েশা চট্রগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী গ্রামের দরিদ্র দিন মজুর মৃত আব্দুল হালিমের পরিবারের জন্ম নেওয়া আয়েশা বেগম ৭ বোনের মধ্যে প্রথম। বাবার দরিদ্রতার কারনে ৮ম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় বাল্যবিয়ে হলেই বন্ধ হয়ে যায় তার শিক্ষাজীবন।

কৃষক স্বামী মোস্তফার উপার্জন দিয়েও তার সংসার চলছেনা। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় তাদের ঘরে প্রথম একটি ছেলে সন্তন আসে। এতে আয়েশা চিন্তিত হয়ে পড়লেও দমে যায়নি। সাহস ও ইচ্ছা শক্তি প্রবল থাকলেই যে কোনো কাজ যে কারো পক্ষেই করা সম্ভব। এই চিন্তা নিয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বীন হওয়ার আশায় নিজ এলাকার একটি বুটিকের দোকানে মাসে ১৫’শ টাকা বেতনে চাকুরী নেন। এর মাঝে কিছু কাজ শেখা হলে প্রতিবেশিদের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে আয়েশা নিজের ঘরেই একটি ছোট বুটিকের কারখানা গড়ে তুলেন। এ আয় দিয়ে ছেলের লেখাপড়া ও সংসার চলতে শুরু হয়। এতেই সংসারের কিছুটা অভাব দূর হতে থাকে। এর মাঝে আয়েশা তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পুরনের জন্য উম্মুক্ত বিশবিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শাখার ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। এভাবেই ৭ বছর পার হলে আয়েশা উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যাল থেকে বিএ পাশও করেন। পরে সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও এলাকার দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নিজের ঘরে গড়ে তোলা ছোট বুটিকের আয় দিয়ে গ্রামে বড় করে একটি কারখানা গড়ে তুলেন। ঘুরে যায় তার অর্থনৈতিক জীবনের গতি। এতে ওই এলাকার প্রায় ৩’শ মহিলার কর্মস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। ওই এলাকার এখন অনেক নারীরা আয়েশার বুটিকে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। একপর্যায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে ৫ ক্যাটাগরিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০ জন করে জয়িতা বাছাই করেন। এতে আয়েশা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অর্থনীতি সাফল্যে প্রথম স্থান লাভ করেন। পরে চট্রগ্রম বিভাগে ৫০ উপজেলার ২৫০ নারীকে পিছনে ফেলে ওই ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা লাভ করে নির্বাচিত হয় আয়েশা। এর আগেও তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা ও রায়পুর উপজেলা পর্যায়ে এ সম্মাননা লাভ করেন। এখন জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও আয়েশা এখন নার্সিং ট্রেনিং নিচ্ছেন লক্ষ্মীপুরে একটি বেসরকারী মেডিকেল টেকনোলজিতে।
আয়েশা জানান, আমার এই সম্মাননা সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য উৎসর্গ করেছি। তবে আমার গড়ে তোলা বুটিক কারখানায় বিদ্যুৎতের ব্যবস্থা থাকলে আরও নারীর কর্মসংস্থান করাসহ উৎপাদন বৃদ্ধি পেত। সরকার আমার এই সাফল্যে কথা চিন্তা করে তার বাড়ীতে বিদ্যুৎতের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানান।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিউলি আক্তার জানান, আয়েশার সাফল্যে আমাসহ রায়পুরবাসি গর্বিত। তবে তার বাড়ীতে গড়ে তোলা কারখানাটিতে বিদ্যুৎ দেওয়া হলে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়ত। আমাদের পক্ষ থেকে আয়েশা অন্যনা সকল বিষয় পরামর্শ আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম জানান, আয়েশার মত উদ্দিপনা দিয়ে নারীরা এগিয়ে আসলে সমাজ পরিবর্তন হবে। তার এ সাফল্যে উপজেলা থেকে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আয়েশার গড়ে তোলা কারখানাটি তিনি নিজেই পরির্দশ করে আয়েশাকে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার করখানায় বিদ্যুৎতের বিষয়টি নিয়ে পল্লি বিদ্যুৎতের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হবে।

(এমআরএস/এসসি/এপ্রিল০৪,২০১৫)


পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test