E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরণখোলায় বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট

২০১৫ এপ্রিল ০৬ ১৬:৪৮:৪৫
শরণখোলায় বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলার রায়েন্দা বাজারের ব্যবসায়ী ও তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক আরিফ হোসেন দুলাল (৩৮) এর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ওই শিক্ষক, স্ত্রী শাহানা বেগম (৩২) ও পুত্র লিপুকে (১৪) বর্বর নির্যাতন করেছে পুলিশ।

এসময় এসআই মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে ৭-৮ জন পুলিশ সদস্য তার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরে তাদেরকে থানায় এনে আবারও নির্যাতন করা হয় এবং তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে থানা হাজতে আটকে রাখা হয়। এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে এলাকার শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী ও শত শত সাধারণ মানুষ থানা ঘেরাও করে আহত আরিফ ও তার স্ত্রী-পুত্রকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং ওসি’সহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার ও বিচারের দাবি জানায়। ঘটনা জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ অতুল মন্ডল থানায় গিয়ে ওই শিক্ষক ও তার স্ত্রী-পুত্রকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করলে পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়।
এদিকে, ব্যবসায়ী ও শিক্ষক দুলাল এবং তার পরিবারের ওপর এই বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে উপজেলার সদর রায়েন্দা বাজারের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। উত্তেজিত জনতা নির্যাতনকারী থানার এসআই মাহবুব হোসেনের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করে। এছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি মিলনায়তনে গতকাল এক জরুরী সভায় ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষনা দিয়েছেন। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
থানার ওসি মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পাঁচরাস্তা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম ফরেস্টারের অভিযোগের ভিত্তিতে এসআই মাহবুবসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ওই শিক্ষক পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে এসআই মাহবুব হোসেন আহত হন। তিনি এখন শরণখোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পেশাগত কাজে বাধা দেয়ায় তাদেরকে আটক করা হয়।
আহত শিক্ষকের পরিবারের অভিযোগ, গত ৩ বছর আগে আরিফ হোসেন দুলাল স্থানীয় বাসিন্দা কালাম ফরেষ্টারের কাছ থেকে ৫শতক জমি কিনে সেখানে ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু কালাম ফরেস্টার ওই জমি তার বলে দাবি করেন। এনিয়ে আদালতে মামলা হলে তার রায়ও ওই শিক্ষকের পক্ষে যায়। রোববার আরিফ সেখানে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করলে কালাম ফরেস্টার পুলিশ নিয়ে বাধা দেন। এতে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হলে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফ জানান, পুলিশ তার ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং তাদেরকে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন করে। পরে থানায় নিয়েও তাকে ও তার স্ত্রী-পুত্রকে আবারও মারধর করে পুলিশ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য আকলিমা বেগম, স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার খান, শিরিন বেগম ও সেতারা বেগম জানান, পুলিশের এমন অমানবিক নির্যাতন তারা আর কখনো দেখেনি। আরিফের পিতা মুক্তিযোদ্ধা সাইয়েদুর রহমান হাওলাদার বলেন, কোনো মামলা বা অভিযোগ ছাড়াই পুলিশের এই নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করা না হলে তিনি প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করবেন।
ইউএনও মোহাম্মদ অতুল মন্ডল জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, আরিফের ডান হাত ও বাম পা ভেঙেছে মনে হওয়ায় এক্স-রে করতে বলা হয়েছে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানেও গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ জানান, ঘটনার সুষ্ট বিচার ও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা না হলে শরণখোলার সকল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রায়েন্দা বাজার পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জানান, ব্যবসায়ীরা স্বউদ্যোগেই দোকানপাট বন্ধ করেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বসা হবে।
এব্যাপারে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নিজামুল হক মোল্লা জানান, তিনি ঘটনা শুনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(একে/পিবি/ এপ্রিল ০৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test