E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে নগরবাসীর দুর্ভোগ

২০১৫ এপ্রিল ০৭ ১৭:২৭:১৩
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে নগরবাসীর দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। বর্ষা মৌসুম এলেই কেবল বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রাস্তা খুঁড়ে শুরু করে তাদের সেবা দান কর্মসূচি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে একের পর এক বিধ্বস্ত হচ্ছে রাজধানীর বেশিরভাগ রাস্তা। এদিকে চরম দুর্ভোগ মাড়িয়ে নগরবাসীকে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। এছাড়া যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

জানা গেছে, প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার আগে বরাদ্দের টাকায় উন্নয়ন দেখাতে মার্চ-এপ্রিল-মে ৩ মাসে উন্নয়ন কাজ শুরু করে ঢাকা সিটি করপোরেশন। এই ৩ মাস মূলত বর্ষা মৌসুম। নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করে পাল্লা দিয়ে ঢাকা ওয়াসা, বিটিসিএল, তিতাস, ডেসা, ডেসকোসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো উন্নয়নের নামে শুরু করে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ।

নগর উন্নয়নবিদ সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়নকাজে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ ২৮ দিনের মধ্যে শেষ করার নিয়ম। কিন্তু রাস্তায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে তা কার্পেটিং না করে ফেলে রাখা হয় মাসের পর মাস।

তাছাড়া পরিকল্পনার অভাবে একই রাস্তা বারবার কাটা পড়ে যা এখন একরকম ‘নিয়মে’ পরিণত হয়েছে। এসবের জন্য রাজধানী উন্নয়নে সরকারের মহাপরিকল্পনা এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন নগর উন্নয়নবিদরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইডেন মহিলা কলেজের সামনে চলছে বিটিসিএল-এর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। নীলক্ষেত থেকে আজিমপুর পর্যন্ত চলছে এমন রাস্তা কেটে ক্যাবল বসানোর কাজ। ফলে নিউমার্কেট থেকে শুরু করে এতিমখানা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ইডেন মহিলা কলেজের কয়েক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছর এই সময় কলেজের সামনে এমন খোঁড়াখুঁড়ি চলে। ফলে আমাদের চলাচল করতে খুবই সমস্যা হয়। কলেজটির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবনী বলেন, ‘বৃষ্টির মৌসুমে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি হলে প্রচুর কাদা হয়। ফলে চলাচলের সময় অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে।’

এদিকে মিরপুর-১০ থেকে ১৪ নম্বর সড়ক পর্যন্ত রাস্তা কেটে বড় বড় গর্ত করা হয়েছে। কোথাও আবার রাস্তার গর্তগুলো বিপজ্জনকভাবে তাকিয়ে রয়েছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জানা গেছে, ৭ মাস আগে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রাস্তা মেরামত করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

এখন সেই ভালো রাস্তায় গর্ত করে ওয়াসা পানির পাইপ বসাচ্ছে। ফলে রাস্তাটি আবার বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। এতে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে আশপাশের রাস্তায় চরম যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

মালিবাগ চৌধুরীপাড়া মসজিদ গলি থেকে মধুবাগ পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তা কেটে বিধ্বস্ত করে ফেলা হয়েছে। মূলত এ রাস্তা দিয়ে পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ বসানো হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাস্তার দুপাশের বাসিন্দারা। বাসিন্দারা কাজের ধীরগতির অভিযোগ করেছেন।

অন্যদিকে পুরান ঢাকার সেকশন বটতলা থেকে চৌধুরীবাজার পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তা গত ৩ মাস ধরে বন্ধ। এ রাস্তা দিয়ে মানুষ হেটেও চলাচল করতে পারছে না। এখানেও ওয়াসা পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ বসাচ্ছে। রাস্তার দুই ধারের বাড়িওয়ালারা অনেক কষ্টে চলাচল করছেন। বিপাকে পড়েছেন রাস্তার দুপাশের দোকানদাররাও।

সেকশনে কাঠের ব্যবসায়ী লতিফ হোসেন জানান, ‘রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে দোকানে ঠিকমতো বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতাও চলে যাচ্ছে অন্য মার্কেটে।’ বীর শ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, ‘সেকশন থেকে কলেজে যেতে খুবই সমস্যা হয়। কাদা-পানি মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়।’

বর্ষা মৌসুমে সেবাদান প্রতিষ্ঠানের কারণে নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনছার আলী খান বলেন, ‘একাধিকবার বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি। তবে এ সমস্যা উত্তরণে বারবার সমন্বয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোয় সড়কের পাশে ডাস্ট (ইউটিলিটি লাইনের জন্য ছোট টানেল) থাকে। এই ডাস্টের ভেতর দিয়েই পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোনের লাইন যায়। ফলে সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ঢাকায় সেটি করা হয়নি। আবার সড়কের একাংশ খুঁড়লে পুরো রাস্তাটাই নষ্ট হয়ে যায়। নগরবাসীর এ দুর্ভোগ লাঘবে কমন ইউটিলিটি টানেল নির্মাণের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এতে সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের পাইপলাইনগুলো টানেলের মধ্যে স্থাপন করা হবে। তাহলে প্রতি বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।’

(ওএস/এটিআর/এপ্রিল ০৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test