E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক

২০১৫ এপ্রিল ২৯ ১৮:৩৯:১৭
মাদারীপুরে মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের ৪ উপজেলায় মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক লেগেছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে চুরি হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক মোটরসাইকেল। এর মধ্যে সদরে ৫৫, শিবচরে ৪৫, রাজৈরে ৪৮ ও কালকিনিতে ৫৪টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে।

গত ১ সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন ও রাতে দু’একটি করে মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। একটি সঙ্গবদ্ধ ও শক্তিশালী চোরের দল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের চোখ এড়িয়ে প্রতিরাতে ও দিনে এভাবে একের পর এক একাধিক মোটরসাইকেল চুরি হওয়ায় জেলাবাসী আতংকিত হয়ে পড়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মাসে মাদারীপুর শহর, শহরতলী ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৫টি মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে। দিন-দুপুরে ডিসি অফিসের সামনে থেকে ওয়াহিদুল নামে শিক্ষা অফিসের এক কর্মচারির, একই স্থান থেকে নান্নু মুন্সী নামে এক ব্যক্তির, একই স্থান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মফিজউদ্দিনের, এসআই ওলি নামে এক দারোগার, বোরহনউদ্দিন নামে গ্রামীণফোনের এক কর্মচারির, পৌরসভার সামনে থেকে সানু মুন্সী নামে এক ব্যক্তির, ক্রীড়া সংগঠক মনির হোসেনের, উপ-সহকারী ভূমি অফিসার মো. সেলিম মিয়ার মোটরসাইকেলটি সদর হাসপাতালের ভেতর থেকে, সদর থানার এক দারোগার মোটর সাইকেল চুরি হয়। পুলিশের মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার পরপরই উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু অন্যগুলো উদ্ধারে পুলিশের কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

শিবচর গোমস্তা হাউজিং এর নীচ তলার বাসার গ্যারেজের তালা ও শার্টার ভেঙ্গে মোফাজ্জেল হোসেন এর হিরোহোন্ডা চুরি করে নিয়ে যায়। পৌর এলাকার ডিসি রোড়ের গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেনের বাসা থেকে অলি খানের পালচার মোটরসাইকেল, সাংবাদিক একেএম নাসিরুল হকের এবং একই রাতে এলাকার আবদুর রাজ্জাক মিয়ার বাসার কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙ্গে ভাড়াটিয়া মনির হোসেনের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি চুরি হয়। যেভাবে প্রায় প্রতি রাতেই শিবচর পৌর এলাকার সুরক্ষিত ভবনের ও কলাপসিবল গেটের তালা ও গ্যারেজের শার্টার ভেঙ্গে অহরহ মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে তা বিস্ময়কর। গত ৪ মাসে শুধু শিবচর পৌর এলাকা থেকে প্রায় ৩০টিসহ প্রায় ৪৫টি মোটরসাইকেল উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি হয়েছে।

কালকিনির গোপালপুরের ধ্বজি এলাকার আবদুল জলিল, পৌর এলাকার রণি, পৌর এলাকার পলাশ, বনগ্রাম এলাকার জাহিদ, বনগ্রাম এলাকার ফজলু, উত্তর রাজদির ব্যবসায়ি গোলাম মোস্তফা বেপরীরসহ ৫৪টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। মাত্র ২ মাসের ব্যাবধানে গোলাম মোস্তফার ২টি মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে।

রাজৈর-টেকেরহাট থেকে প্রতিনিয়ত কারো না কারো পালচার, হিরো ফ্যাশন, প্লাটিনামসহ দামী মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্রটি রাতে লোহার কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে কখনো বা দিনের আলোয় অর্ধাশতাধিক মোটরসাইকেলের পার্কিং থেকে শতশত লোকের ভিড়ের মধ্য থেকে সুকৌশলে মটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এ চক্রটি টার্গেট দামী মটর সাইকেলগুলি। চুরি যাওয়া কিছু মটর সাইকেলের প্রভাবশালী মালিকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদেরটা উদ্ধার করতে পারলেও বেশিরভাগই থেকে যায় অন্ধকারে। এলাকার চিহ্নিত মোটরসাইকেল চোরেরা এ এলাকা থেকে চুরি করে খুলনা ও যশোরে নিয়ে বিক্রি করে অথবা ওই এলাকার চুরি করা মোটরসাইকেলের সাথে বিনিময় করে এ এলাকায় এনে বিক্রি করছে বলে অনেকের ধারণা।

সম্প্রতি রাজৈর হাসপাতাল এর সামনে থেকে ঘোষালকান্দি গ্রামের ওবায়দুল হকের মটর সাইকেল চুরি হয়। দিনে-দুপুর যুগান্তরের টেকেরহাট প্রতিনিধি খোন্দকার রুহুল আমিন তার হিরো ফ্যাশন হোন্ডা টেকেরহাট পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের বারান্দা থেকে চুরি হয়। খালিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে দু’টি, টেকেরহাট ইসলামী ব্যাংকের গেট থেকে একটি, টেকেরহাটে বাস কাউন্টার থেকে দিনের বেলা চুন্নু মিয়া পালচার মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। স্বপন কুন্ডুর মোটর সাইকেল, আলহাজ নাজমুল হোসেন বাসুর পালচার মোটর সাইকেলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪৮টি।

চুরির ঘটনার কোন সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি চিহ্নিত কোন চোরকে আটক করে জিজ্ঞাসা বাদও করেনি পুলিশ। পুলিশের চোখ এড়িয়ে প্রতিরাতে এভাবে একের পর এক মুল্যবান একাধিক মোটরসাইকেল চুরি হওয়ায় জেলাবাসী আতংকিত হয়ে পড়েছে। চোরের কবল থেকে বাদ পড়ছে না সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি, পুলিশ, ব্যবসায়ি, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, এনজিও কর্মী, ঠিকাদারসহ সাধারণ মানুষ।

মোটর সাইকেল চুরি হওয়ার কথা পুলিশ স্বীকারও করছে। কিন্তু উদ্ধারে কোন সাফল্য নেই।

শিবচর থানার ইনচার্জ আবদুস সাত্তার মিয়া জানান, গত কয়েকদিন আগে বেশ কয়েকটি স্থানে মোটর সাইকেল চুরি হয়। পরে আমরা পাহাড়া জোরদার করি। কিন্তু আবারও মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা বেড়েছে। এ ব্যাপারে জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সদর, রাজৈর ও কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একই বক্তব্য।

(এএসএ/এএস/এপ্রিল ২৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test