E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মধুপুরে উদ্ভিদের জন্য হাসপাতাল

২০১৫ মে ০৪ ১২:২১:৪১
মধুপুরে উদ্ভিদের জন্য হাসপাতাল

মধুপুর (টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি: মানুষের অসুখ অইলে ডাক্তার পাওয়া যায়, পশুর জন্যেও আছে ডাক্তার, হাসপাতাল। এবার গাছ-গাছালির জন্যে ডাক্তার-হাসপাতাল হইছে। হেইখান থেইক্কা আমাগো গাছ-পালার চিকিৎসা হইবো! সত্যি আমাগো কিষকগর (কৃষক) জন্যে এইডা বড়ই ভালা খবর।

এভাবেই নিজের ভালো লাগার কথা বলছিলেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ভবানীটেকি বাজারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘‘প্লান্ট ডক্টর হসপিটাল” উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কলা চাষি নূরুল ইসলাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সংস্থা কমনওয়েলথের সহযোগিতায় ২৮ এপ্রিল ভবানীটেকি বাজারে পাইলট প্রজেক্টের আওতায় এ প্ল্যান্ট ডক্টর ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। এ উদ্বোধন অনুষ্ঠান বিশাল কৃষক সমাবেশে রূপ নিয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের পাঁচ জেলার ১০ উপজেলায় প্ল্যান্ট ডক্টর ক্লিনিক চালু হয়েছে।

টাঙ্গাইলের মধুপুর ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, শেরপুরের নকলা ও নালিতাবাড়ি, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও ফুলপুর, গাজীপুরের কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈর এবং ঢাকায় এ ক্লিনিক চালু হয়েছে।

২৮ এপ্রিল ভবানীটেকি বাজারে এ ক্লিনিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একগাদা ফল ও সবজি নিয়ে এসেছিলেন কুড়াগাছা গ্রামের সবজি চাষি আলমগীর।

তিনি এবার করলা, শসা, ঝিঙে, ধুন্দল ও মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। এছাড়াও রয়েছে কাঁঠাল ও কলার আবাদ। শসা গাছের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। গোড়া ফেঁটে কষ বেরিয়ে গাছ মারা যাচ্ছে। ঝিঙে ও কুমড়ায় ফল ছিদ্রকারী পোকার উপদ্রব। রোগাক্রান্ত শসা ও কুমড়াও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

সবজি চাষি আব্দুর রাজ্জাকের বেগুন গাছ ছত্রাকের কারণে মারা যাচ্ছে। তিনিও এসেছিলেন সমাধান নিতে।

একই ভাবে পিরোজপুর গ্রামের হাসেন আলী, কুড়াগাছার মোতালেব হোসেন, আঙ্গারিয়ার কদ্দুস মণ্ডল, মমিনপুরের আব্দুল হাইসহ শতাধিক কৃ ষক এসেছিলেন ফল-ফসলে পোঁকা ও রোগাক্রান্ত হওয়ার সমস্যা নিয়ে।

এসময় হাসপাতালে দায়িত্বরত উদ্ভিদ চিকিৎসক বর্ণনা শুনে বা আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরাগায়নের অসুবিধার কারণে ফলন বিপযর্য় হয়েছে বলে জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে বসা ক্লিনিকে কাজ করছেন উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও উদ্ভিদ চিকিৎসক শাহাদৎ হোসেন এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার। আলমগীর নামে এক সহকারীও ছিলেন তাদের সঙ্গে।

তারা প্রয়োজন মতো প্রেসক্রিপশন দিয়ে ওষুধের পাশাপাশি মাছি-পোকা দমনে সেক্স ফেরোমেন পদ্ধতি গ্রহণেরও পরামর্শ দেন। কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াও প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন পদ্ধতি বর্ণনা করেন।

তারা জানান, অধিকাংশ কৃষক কীটনাশক ডিলারের কাছে শুনে পোকা বা রোগ দমনে ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ করেন। এতে ডিলার বিষের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সার ও হরমোন গছিয়ে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করে। স্বল্প খরচে প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রোগ দমনে পরামর্শ পাওয়া যায় না। বাড়তি বিষ প্রয়োগে পরিবেশের ক্ষতি হয়। আবার বিষ প্রয়োগে উপকারি পোকাও নিধন হয়। উপকারি পতঙ্গ নির্বিচারে নিধনের কারণে ফল-ফসলের পরাগায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কীটনাশক ও সার ডিলার জয়নাল আবেদীন জানান, কুড়াগাছা ইউনিয়নের ভবানীটেকি, চাঁপাইদ, পিরোজপুর, পীরগাছা, মমিনপুর, ধরাটি ও আঙ্গারিয়া এবং মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের বিশনাইপাল, ব্রাহ্মণবাড়ি, কেতনপুর, আমবাড়িয়া, হাজিপুর, পালবাড়ি ও মির্জাবাড়ি এখন সবজির গ্রাম। মধুপুর গড়ের লালমাটির এ অংশের যে দিকে তাকানো যায় শুধু সবজি আর সবজি। কলার আবাদ হ্রাস পেয়ে সবজির আবাদ বাড়ছে হুহু করে। কুড়াগাছা ও ভবানীটেকি বাজারেই গড়ে উঠেছে সবজির পাইকারি আড়ত। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে সবজি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন। সবজির দামও বেশ চড়া থাকে এখানে। আবাদ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তবে লাভজনক সবজি চাষকে কেন্দ্র করে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কীটনাশক ও হরমোন কোম্পানি। কলা আর আনারসকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যে পরিণত করার পর তাদের টার্গেট এখন সবজি।

এ অবস্থা থেকে কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে কৃষি সম্পসারণ বিভাগের চালু করা সাম্প্রতিক প্ল্যান্ট ডক্টর ক্লিনিক নিয়ে আশাবাদী এলাকার চাষিরা।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. হযরত আলী জানান, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুটে বিশ্বখ্যাত উদ্ভিদ হাসপাতাল রয়েছে। উন্নত দেশে এ নিয়ে উন্নত মানের চিকিৎসা ও গবেষণা হয়। আমাদের দেশে এটি নতুন ভাবনা। এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা মাঠপর্যায়ে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন।

তিনি জানান, প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ মঙ্গলবার নির্দিষ্ট স্থানে প্ল্যান্ট ডক্টর ক্লিনিক বসানো হবে। কৃষকরা ক্লিনিকে স্যাম্পল নিয়ে আসবেন। সেসব পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হবে। এতে ক্ষতিকারক, চোরাই বা ভেজাল বিষ ব্যবহারের সুযোগ কমবে। বিষের ক্ষতিকারক প্রয়োগ বন্ধ হবে। পরিবেশ বিনষ্টের প্রবণতা হ্রাস পাবে।

এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকের সঙ্গে কৃষিবিদদের সেতুবন্ধন তৈরি হবে বলেও মনে করেন তিনি।

(ওএস/এসসি/মে০৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test