E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পতিসরে বিশ্বকবির জন্মদিন পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি

২০১৫ মে ০৭ ১৬:৫৫:৩২
পতিসরে বিশ্বকবির জন্মদিন পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি

নওগাঁ প্রতিনিধি :  আমাদের ছোট ছোট নদী/ চলে বাঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে” বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতা যা কবি নওগাঁর আত্রাইয়ের পতিসর তার এই কাচারী বাড়িতে বসে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকা-বাঁকা নাগরনদকে নিয়ে লিখেছিলেন। এছাড়াও বিশ্বকবি তার বিখ্যাত কবিতা ‘দুই বিঘা জমি’ ‘সন্ধ্যা’ সহ অসংখ্য সাহিত্য কর্ম রচনা করেছেন এই পতিসরের কাচারী বাড়িতে এসে।

শুক্রবার ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবির ১৫৪ তম জন্মোৎসব সরকারি ভাবে উদযাপন করা হচ্ছে এই পতিসর কাচরী বাড়িও। তাই পুরনো বছরের সকল জরা-জীর্ণকে পিছনে ফেলে নতুন বছরের আগমনের সঙ্গে বিশ্বকবির জন্মকে নতুন চিত্তে ভাবার জন্য ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে কবির পতিসরের এই কাচারী বাড়িকে। সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও এখানে আসবেন মন্ত্রি, এমপি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশ বরেন্য বিখ্যাত শিল্পী ও রবীন্দ্র ভক্তরা। নাচ, গান আর বিশ্বকবির রচিত কবিতা আবৃত্তি করে উদযাপন করা হবে কবিগুরুর জন্মোৎসব। এখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র। এবছরের ১এপ্রিল থেকে এখানে টিকেটের ব্যবস্থা করা হয় । মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ টাকা, মাধ্যমিকের পর থেকে সকল পর্যায়ে ১৫টাকা, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০টাকা এবং ইউরোপের নাগরিকদের জন্য ১শ’ টাকা হিসেবে টিকেটের দাম নির্ধারণ করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
সূত্রে জানা, ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবির পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এই কালিগ্রাম পরগনাকে ক্রয় করে ঠাকুর পরিবারের জমিদারীর অংশে অর্ন্তভুক্ত করেন। এরপর বিশ্বকবি ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি প্রথম আসেন তার এই পতিসরের কাচারী বাড়িতে জমিদারী দেখাশোনা ও খাজনা আদায় করতে। সেই সময় এই পরগনা থেকে খাজনা আদায় হত প্রায় ৫০ হাজার ৪২০টাকা। বিশ্বকবি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার পুরস্কারের অর্থ থেকে তিনি এই পরগনার প্রজাদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার জন্য ৭৫ হাজার টাকা তৎকালিন সময়ে এখানে অবস্থিত কৃষি ব্যাংকের মারফত পাঠিয়েছিলেন। এই প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার প্রজাদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌছে দেয়ার লক্ষে কবি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পতিসরে এসে তার ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনষ্টিটিউশন স্থাপন করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের নামে ২শ’ বিঘা জমি দান করেন। আর এই ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই কবি শেষ বারের মত এসেছিলেন তার পতিসরের কাচারী বাড়িতে।
কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই এলাকার প্রজাদের জন্য সর্বপ্রথম আধুনিক সময়ের কলের লাঙ্গল এনেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তৎকালিন সরকার ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এক অডিন্যান্স বলে কালিগ্রাম পরগনার জমিদারি কেড়ে নেয়। ঠাকুর পরিবারের এই জমিদারি হাতছাড়া হয়ে গেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর সস্ত্রীক পতিসর যাতায়াত বন্ধ করে দেন। তৎকালীন রবীন্দ্র বিরোধী পাকিস্তান সরকার ১৯৪৭ হতে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে কোন অনুষ্ঠান করতে দেয়নি । এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সেই সময়ের তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর সর্বপ্রথম অতিথি হিসেবে এখানে এসেছিলেন। ১৯৯৪ সালে সরকারি ভাবে পতিসরের এই রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নিয়ে আসা হয় এবং সরকারি ভাবে প্রতি বছর এখানে বিশ্বকবির জন্মোৎসব উদযাপন করা হয়। নওগাঁ শহর থেকে পতিসরের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার এবং আত্রাই থেকে ৪৬ কিলোমিটার। নওগাঁ এবং আত্রাই হতে মাইক্রোবাস, বাস, সিএনজি যোগে পতিসরে যাওয়া যায়।

(বিএম/পিবি/ মে ০৭,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test