E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্থলসীমান্ত চুক্তি পাস, শঙ্কিত আদিবাসীরা !

২০১৫ মে ০৮ ১৮:৩৭:৪৩
স্থলসীমান্ত চুক্তি পাস, শঙ্কিত আদিবাসীরা !

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ার খবরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাল্লাতল সীমান্তের আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। নিজেদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস পান জুমসহ ভূমি ভারতের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন তারা। ৩৬০ একর জায়গা বাংলাদেশের অপদখলে রয়েছে।  

শুক্রবার সরেজমিনে পাল্লাতল সীমান্ত এলাকায় গেলে স্থানীয় আদিবাসীদের চোঁখে মুখে ভূমি হারানোর আতংক ও আশঙ্কার চাপ লক্ষ্য করা গেছে। নিজেদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস পান জুমসহ ভূমি ভারতের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কায় তারা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। পান জুমে কর্মরত ওয়ারলেস খাসিয়া, কিরণ খাসিয়া, স্বপন খাসিয়া সহ অনেকে জানায়, এখানকার আদিবাসী প্রায় ৩শ’ খাসিয়া পরিবারের মধ্যে ভারতীয় উচ্ছেদ আতংক বিরাজ করছে। এ চুক্তিতে বাংলাদেশের দখলে থাকা একটি খাসিয়াপুঞ্জি, কয়েকটি খ্রিস্টান কবরস্থান, একটি মাজারসহ অনেক জমি হাতছাড়া হবে।

পাহাড়ি ভূমি শত শত বছর ধরে (বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমল থেকে) বংশ পরম্পরায় বাঙালি খাসিয়ারা এদেশের ভূমি হিসেবে ভোগদখল করে আসছে। কোনদিন জরিপ হয়নি। বিএসএফ ভারতের ভূমি বলে কোনদিন দাবিও করেনি। এসব ভূমিতে পানসহ জুম চাষ করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। তাতে রয়েছে আমাদের পূর্বপুরুষের শত শত কবর, আছে কালা শাহ নামে একজন পীরের মাজার ও কয়েকটি গির্জা। এ চুক্তিতে এসব আমাদের হাতছাড়া হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে পাশাপাশি অজানা ভবিষ্যতের আশংকায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

পাল্লাতল পুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) লুকাস বাহাদুর বলেন, পত্রিকা ও টেলিভিশনের খবরে জেনেছি, সীমান্ত বিল লোকসভায় পাশ হয়েছে। এ নিয়ে পাল্লাতলের আদিবাসীরা চিন্তায় পড়েছেন। এত মানুষ কোথায় যাবে, কী করে খাবে? জানি না ভাগ্যে কী আছে।’ তবে প্রাণ গেলেও আমাদের দখলীয় ভূমি আমরা ছাড়বো না। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস পান জুমসহ ভূমি চলে গেলে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে, প্রয়োজনে আমরা আন্দোলনে নামবো।

সূত্র জানায়, এলাকাবাসী এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাল্লাতল সীমান্তের ১৩৭০ নম্বর প্রধান খুঁটির ১ নম্বর উপখুঁটি থেকে ১৩৭৪ নম্বর প্রধান খুঁটির ১ নম্বর উপখুঁটি পর্যন্ত প্রায় ৩৬০ একর জায়গা বাংলাদেশের অপদখলে রয়েছে। ৩৬০ একরের ভেতর শতবর্ষী পাল্লাতল চা-বাগান ও পাল্লাতল পুঞ্জি (পুঞ্জিতে আদিবাসী খাসিয়া ও গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস) পড়েছ। দুটি স্থানে প্রায় তিন হাজার লোকের বাস। এর বিপরীতে ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলা।

১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী, ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে সীমান্তে যৌথ জরিপ দল কাজ শুরু করে। এ সময় অপদখলীয় বেশির ভাগ জায়গা ভারতকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এ খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর বাধায় ২০১১ সালের ২৮ আগস্ট জরিপ দলটি ফিরে যায়। জায়গাটি রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেন। এরই একপর্যায়ে জরিপকাজ শেষ হলে ২০১১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পাল্লাতলের নির্দেশক মানচিত্রে (ইনডেক্স ম্যাপ) যৌথ জরিপ দল স্বাক্ষর করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়।

স্থানীয় পুঞ্জির বসবাসরত আধিবাসীসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়, নির্দেশক মানচিত্রে পাল্লাতল সীমান্তের ১৩৭০ নম্বর প্রধান খুঁটির ৩ নম্বর উপখুঁটি থেকে ১৩৭১ নম্বর প্রধান খুঁটির ৬ নম্বর উপখুঁটি পর্যন্ত ৫৭ একর এবং ১৩৭২ নম্বর প্রধান খুঁটি থেকে এর ২ নম্বর উপখুঁটি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৫ একর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দেখানো হয়। বাকি জায়গা দেখানো হয় ভারতের সীমানায়।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আমিনুর রহমান জানান, চুক্তির বিষয়ে সরকারিভাবে আমরা এখনো কিছু পাইনি। তবে স্থানীয় আদিবাসীরা তাদের দাবি ও অনুভূতির বিষয়ে লিখিত আবেদন করলে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

(এলএস/এএস/মে ০৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test